লঞ্চে টিকিট কাটছে স্যান্ড্রা। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
লকডাউনের মধ্যে নদী পেরিয়ে পরীক্ষা দিতে যাবে এক কিশোরী। তার একার জন্যই নদীতে আস্ত লঞ্চ নামাল কেরল সরকার। এক দিন নয়, পর পর দু’দিন একা সেই লঞ্চে করে গিয়ে পরীক্ষা দিয়ে এল ওই পড়ুয়া। দক্ষ হাতে করোনা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আগেই নজির গড়েছিল কেরল। এ বার তাদের এই পদক্ষেপ সাড়া ফেলল সর্বত্র।
১৭ বছরের স্যান্ড্রা বাবু একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বাবা-মা পেশায় দিনমজুর। লকডাউনের জেরে মাঝপথে পরীক্ষা আটকে গিয়েছিল স্যান্ড্রার। গত শুক্র এবং শনিবার সেই পরীক্ষা ছিল। কিন্তু আলাপ্পুঝার নির্জন দ্বীপ কুট্টানাডে বাড়ি স্যান্ড্রার। কোট্টায়াম জেলার কাঞ্জিয়ামের স্কুলে যাওয়ার জন্য জলপথই একমাত্র ভরসা তার।
কিন্ত লকডাউনে নৌকো এবং লঞ্চ চলাচল বন্ধ। তাই পরীক্ষা দেওয়ার আশা ছাড়তে বসেছিল স্যান্ড্রা। তবু শেষ চেষ্টা করতে রাজ্য জল পরিবহণ দফতরকে গোটা ব্যাপারটা জানিয়েছিল সে। আর্জি জানিয়েছিল, কোনও ভাবে যদি তাকে স্কুলে পরীক্ষা দিতে পৌঁছে দেওয়া যায়। তাতেই ফল মেলে। শুধুমাত্র তার জন্য ৭০ আসনের একটি লঞ্চকে নদীতে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় জল পরিবহণ দফতর।
আরও পড়ুন: দিলীপ, সুব্রত, মুকুল, রাহুল: সব শিবিরকে ঠাঁই দিয়ে নতুন কমিটি বিজেপির
আরও পড়ুন: কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বরের পথে হেঁটেই বন্ধ শহরের অধিকাংশ মন্দির
স্যান্ড্রাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে নিজে উদ্যোগী হন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী একে শশীধরণ। স্যান্ড্রার বাড়ি থেকে কোট্টায়াম যেতে দু’বার নৌকো বদল করতে হয়। কিন্তু স্যান্ড্রা যাতে একবারেই স্কুলে পৌঁছতে পারে, তার জন্য বিশেষ রুট ধরে লঞ্চ এগোবে বলে ঠিক হয়। সেই মতো বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার হেঁটে এসে লঞ্চে ওঠে স্যান্ড্রা। দু’দিনই তাকে স্কুলে পৌঁছে দেয় লঞ্চটি।
তবে স্যান্ড্রাকে শুধু স্কুলে পৌঁছে দিয়েই ফিরে আসেনি ওই লঞ্চটি। বরং পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত স্যান্ড্রার জন্য অপেক্ষা করেছেন লঞ্চের পাঁচ কর্মী। সেখান থেকে তাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে তবেই ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। এ প্রসঙ্গে কেরল জল পরিবহণ দফতরের ডিরেক্টর ভি নায়ার সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘আমিও এক জন বাবা। আমার মেয়েরও পরীক্ষা চলছে। তাই ওদের সমস্যাটা বুঝতে পারছি।’’
তবে এর জন্য স্যান্ড্রার কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হয়নি, বরং পড়ুয়াদের জন্য যে ভাড়া নির্ধারিত, তা-ই নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভি নায়ার।