প্রতীকী ছবি।
বিশ্ব জুড়ে করোনা-সঙ্কটের আবহেও ভারতের বিরুদ্ধে রণং দেহি মূর্তিতে যেন অবিচল চিন। কখনও ডোকলামের স্মৃতি উস্কে উত্তর সিকিমের নাকু লা সেক্টরে ভারতীয় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। কখনও আবার লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর এলাকায় দেখা যাচ্ছে চিনা চপারের আনাগোনা। ভারতের কোনও রকমের প্ররোচনা ছাড়াই গত কয়েক দিনে আন্তর্জাতিক সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি সরগরম রাখার প্রচেষ্টা শুরু করেছে চিনের সেনাবাহিনী। করোনা-সঙ্কটের মোকাবিলায় যখন গোটা বিশ্বই লড়ছে, তখন ভারতের বিরুদ্ধে চিনের এই আগ্রাসী মনোভাবের কারণ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, করোনা-সঙ্কটের মাঝেই ভারতকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ধরাটাই যেন উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে শি চিনফিং সরকারের। সাম্প্রতিক কালের মধ্যে সীমান্ত বরাবর ভারত-চিন উত্তেজনা স্তিমিত থাকলেও গত ৫ মে কোনও রকমের প্ররোচনা ছাড়াই চিনের ২টি কপ্টার উড়তে দেখা যায় লাদাখে। ভারত জানিয়েছে, লাদাখে এলএসি-র অত্যন্ত কাছে এসে পড়েছিল ওই কপ্টারদু’টি। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে ভারতীয় বায়ুসেনা সুখোই যুদ্ধবিমান এলএসি-তে ছুটে যায়। সংবাদ সংস্থার কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “চিনের হেলিকপ্টারগুলি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার অত্যন্ত কাছাকাছি উড়ছিল। তাদের উড়ান চালু থাকায় ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার জেটগুলি নজরদারি শুরু করে।” সে সময়ের মতো পরিস্থিতি না বিগড়ালেও, ওই দিন সন্ধ্যায় ভারতীয় সেনার সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষ বাধে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির। একটি সূত্রের খবর, ওই সংঘর্ষে দু’পক্ষেরই বেশ কিছু সেনা আহত হন।
লাদাখের ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় উত্তর সিকিমের নাকু লা-তেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির। ১০ মে, গত শনিবার ওই সংঘর্ষ দু’পক্ষের মধ্যে গোলাবর্ষণ না হলেও ধাক্কাধাক্কি করে দু’দেশের সেনা জওয়ানেরা। তাতে ভারতের তিন এবং চিনের সাত জওয়ান আহত হন। ডোকলামের স্মৃতি উস্কে নাকু লা সেক্টরে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পড়ে দু’দেশের সেনা। পরে অবশ্য স্থানীয় স্তরে আলোচনার মাধ্যমে সে অশান্তি থেমে যায়।
আরও পড়ুন: পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে সরব, তাতেই কি সরানো হল কর্নাটকের আমলাকে?
আরও পড়ুন: ভারতে ফ্যাভিপিরাভির ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করোনা রোগীদের উপর
নাকু লা-য় সংঘর্ষের ঘটনা নতুন করে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের পক্ষে। সামরিক ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষকদের মতে চিনের এই নয়া আগ্রাসী মনোভাবের পিছনে কারণটা হয়তো অন্য। সেটা কী? তাঁদের মতে, চিনের উহান থেকে করোনা-সংক্রমণের শুরু হওয়ায় এমনিতে আন্তর্জাতিক স্তরে চাপের মধ্যে রয়েছেন শি চিনফিং। তার উপর আমেরিকার এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ক্ষেত্রে শুল্ক-যুদ্ধের ফলে সে দেশের অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়েছে। এই আবহে বিশ্বের বেশির ভাগ বহুজাতিক সংস্থাই ভারতে উৎপাদন তথা এ দেশের বাজারে আরও আগ্রহী হতে শুরু করেছে। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্থিরতা তৈরি করে সেই আবহ বিগড়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই হয়তো ভারতের বিরুদ্ধে এই নয়া আগ্রাসী মনোভাব শি চিনফিংয়ের সরকারের।