বাড়ল লকডাউনের মেয়াদ। ছবি: পিটিআই।
আরও বাড়ল লকডাউনের মেয়াদ। তৃতীয় দফায় আরও ১৪ দিনের জন্য লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতি এখন যে রকম, তার প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে। এই চোদ্দ দিনে কোন কোন ক্ষেত্রে কী ধরনের কার্যকলাপ চলবে অথবা চলবে না, তা নিয়েও কেন্দ্র এ দিন নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। গ্রিন জোন এবং অরেঞ্জ জোনে অনেক বিধিনিষেধই শিথিল করার পথে হাঁটছে কেন্দ্র।
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৈঠক করেন অমিত শাহ-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের সঙ্গে। সেই বৈঠকেই করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পর্যালোচনা হয়। তার পরে সন্ধ্যা নাগাদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করা হয়।
এক নজরে দেখে নিন কেন্দ্রের নতুন সিদ্ধান্তগুলি:
• যে সব জেলায় কেউ সংক্রামিত হননি অথবা গত ২১ দিনে কারও টেস্টিং রিপোর্ট পজিটিভ হয়নি, সেই সব জেলাকে গ্রিন জোন ধরা হবে।
• কোন কোন জেলাকে রেড জোন হিসেবে ধরা হবে, তা নির্ধারণ করা হবে ওই জেলায় চিকিৎসাধীন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সময়সীমা, টেস্টিংয়ের পরিমাণ এবং নজরদারি থেকে আসা রিপোর্টের ভিত্তিতে।
আরও পড়ুন: সামাজিক দূরত্ব মেনেই পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ট্রেন, সায় দিল কেন্দ্র
• যে জেলাগুলি গ্রিন বা রেড জোনের মধ্যে পড়ছে না, সেগুলিকে অরেঞ্জ জোন ধরা হবে।
• গ্রিন, রেড এবং অরেঞ্জ জোনে কোন কোন জেলাকে রাখা হচ্ছে, তা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক প্রতি সপ্তাহে রাজ্য এবং কেন্দ্রীশাসিত অঞ্চলগুলিকে জানিয়ে দেবে।
• রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি চাইলে রেড বা অরেঞ্জ জোনের তালিকায় জেলার সংখ্যা বাড়াতে পারবে। কিন্তু কেন্দ্রের দেওয়া রেড বা অরেঞ্জ জোনের তালিকা তারা ছাঁটতে পারবে না।
• দেশের যে জেলাগুলিতে এক বা একাধিক নগর নিগম এলাকা রয়েছে, সেই জেলাগুলির জন্য আলাদা কৌশল নিয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। নগর নিগম এলাকায় জনঘনত্ব বেশি থাকার কারণে সংক্রমণের আশঙ্কা ওই সব এলাকায় বেশি থাকে। কিন্তু নগর নিগমের বাইরে ওই জেলার যে সব এলাকা রয়েছে, জনঘনত্ব কম হওয়ায় সেইসব এলাকায় সংক্রমণ কমও হতে পারে। তাই ওই সব জেলাকে দু’টি জোনে ভাগ করে দেওয়ার সংস্থান কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় রাখা হয়েছে। নগর নিগম এলাকা একটি জোন, তার বাইরের এলাকা আর একটি জোন— এ ভাবে ভাগ করা যেতে পারে। যদি দেখা যায় যে, নগর নিগমের বাইরে থাকা এলাকায় ২১ দিন ধরে কোনও নতুন সংক্রমণের খবর নেই, তা হলে ওই অঞ্চলকে বিভাজনের শ্রেণিতে এক ধাপ নামিয়ে দেওয়া যাবে। অর্থাৎ নগর নিগম এলাকা যদি রেড জোন হয়, তা হলে তার বাইরের এলাকাকে অরেঞ্জ জোন ঘোষণা করা যাবে। নগর নিগম অরেঞ্জ জোন হলে, বাইরের এলাকাকে গ্রিন জোন ঘোষণা করা যাবে।
• যে সব এলাকা রেড জোন বা অরেঞ্জ জোনের মধ্যে পড়ছে, স্থানীয় জেলা প্রশাসন পরিস্থিতি অনুযায়ী সেই সব এলাকাকে ‘কনটেনমেন্ট জোন’ হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। চিকিৎসাধীন আক্রান্তের মোট সংখ্যা, এই আক্রান্তরা ভৌগলিক ভাবে কতটা এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছেন ইত্যাদির ভিত্তিতে স্থির হবে যে, কোন এলাকাকে কনটেনমেন্ট এলাকা ঘোষণা করা যেতে পারে। কনটেনমেন্ট এলাকায় আরোগ্য সেতু অ্যাপের ১০০ শতাংশ কভারেজ স্থানীয় প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।
• গোটা দেশ জুড়ে জোন নির্বিশেষে কিছু বিষয়ের উপর সম্পূর্ণ বিধিনিষেধ জারি থাকছে। যেমন, বিমানে, ট্রেনে, মেট্রোয় যাতায়াত, সড়ক পথে এক রাজ্য থেকে আর এক রাজ্যে যাতায়াত। স্কুল, কলেজ, অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, হোটেল, রেস্তরাঁ, ধাবা বন্ধ থাকবে। সিনেমা হল, মল, জিম, স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মতো যে সব জায়গায় বড়সড় জমায়েত হয়, সে গুলো বন্ধ থাকবে। সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় জমায়েত করা যাবে না। ধর্মস্থান বা উপাসনা স্থলে জমায়েত করা যাবে না। যদিও নির্দিষ্ট কিছু কাজের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অনুমতিক্রমে বিমান, রেল বা সড়ক পথে যাতায়াত করা যেতে পারে।
• নতুন নির্দেশিকায় নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য আরও কয়েকটি ব্যবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। অত্যাবশ্যক কাজের মধ্যে পড়ে না, এমন কোনও বিষয়ের জন্য বাইরে বেরনো বা যাতায়াত করা সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কার্ফু বা অন্যান্য আইনানুগ বিধিনিষেধ জারি করতে পারবে।
• বিভিন্ন রকমের অসুস্থতা (কো-মর্বিডিটি) রয়েছে, এমন ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা, ১০ বছরের কম বয়সী শিশুরা অত্যাবশ্যক কাজ বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রয়োজনীয়তা ছাড়া একেবারেই বাইরে বেরোতে পারবেন না।
• সারা দেশে যে সব বিষয়ের উপর বিধিনিষেধ রয়েছে, রেড জোনগুলোয় (কনটেনমেন্ট জোনের বাইরে) তার সঙ্গে আরও কিছু অতিরিক্ত বিধিনিষেধ জারি থাকবে। সাইকেল রিকশা, অটো রিকশা, ট্যাক্সি বা ক্যাব জেলার ভিতরে চলাচল করা বাস, সেলুন, স্পা চালানো যাবে না।
• রেড জোনগুলোয় কিছু কার্যকলাপের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধ-সহ। যে সব কাজের জন্য বাইরে বেরনোর অনুমতি রয়েছে, সে সব কাজের জন্য ব্যক্তি বা যানবাহনের যাতায়াতে ছাড় দেওয়া হবে। তবে চার চাকার গাড়িতে চালক ছাড়া আর দু’জনকে ওঠার অনুমতি দেওয়া হবে। বাইকে এক জনই আরোহী থাকবেন, পিছনে কাউকে বসানো যাবে না।
• শহরাঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠান, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড), রফতানির সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান, শিল্প তালুক এবং গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম শিল্পনগরী চালু থাকবে।
• আর যে সব শিল্প চালু থাকবে: ওষুধ, চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম, সে সব তৈরির কাঁচামাল-সহ বিভিন্ন অত্যাবশ্যক পণ্য উৎপাদন শিল্প, যে সব কারখানা নিরন্তর চালু রাখতে হয়, সেগুলির সরবরাহ ব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের হার্ডওয়্যার উৎপাদন কারখানা, পাটশিল্প (সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে) এবং প্যাকেজিং সরঞ্জামের কারখানা।
• শহরাঞ্চলে নির্মাণকাজ চালানো যাবে, কিন্তু বাইরে থেকে শ্রমিক এনে নয়। চালানো যাবে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির প্রকল্পগুলিও।
• অত্যাবশ্যক পণ্য নয়, এমন জিনিসপত্রের দোকান, মলে, বাজারে এবং মার্কেট কমপ্লেক্সে খোলা যাবে না। পাড়ার দোকান, বিচ্ছিন্ন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা দোকান, কোনও আবাসনের মধ্যে থাকা দোকান খুলে রাখা যাবে।
• সংবাদমাধ্যম, তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবা, কলসেন্টার, হিমঘর ও গুদামজাতকরণ পরিষেবা, বেসরকারি নিরাপত্তা পরিষেবা, স্বনিযুক্ত ব্যক্তিদের দেওয়া পরিষেবা (সেলুন বাদে) ইত্যাদি রেড জোনেও চলবে।
আরও পড়ুন: অর্থনীতি চাঙ্গা করতে পরিকল্পনা করুন, মন্ত্রীদের বললেন মোদী
• রেড জোনে যে সব কার্যকলাপে বিধিনিষেধ নেই, অরেঞ্জ জোনে সেগুলির পাশাপাশি চলবে ট্যাক্সি ও ক্যাব (এক জন চালক, এক জন যাত্রী)। যে সব কাজে বিধিনিষেধ নেই, সেই সব কাজের জন্য অরেঞ্জ জোনের মধ্যে থাকা এক জেলা থেকে আর এক জেলায় যাতায়াত করা যাবে। এক জেলা থেকে আর এক জেলায় যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত চার চাকার গাড়িতে চালক ছাড়া দু’জন আরোহী থাকতে পারবেন। বাইকেও দু’জন থাকতে পারবেন।
• গোটা দেশে জোন নির্বিশেষে যে সব বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেগুলির বাইরে থাকা সব কাজই গ্রিন জোনে চলবে। তবে বাসে যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। একটি বাসে যতগুলি আসন, তার অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। কোনও বাস ডিপো থেকে যত বাস যাতায়াত করে, তার অর্ধেক যাতায়াত করতে পারবে।
• সব ধরনের পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করতে পারবে। প্রতিবেশি দেশগুলির সঙ্গে চুক্তির অঙ্গ হিসেবে যে সব পণ্য সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশে যাতায়াত করবে, সে সব পণ্যের যাতায়াতকে কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আটকাতে পারবে না।
• লকডাউন চলাকালীন গোটা দেশে পণ্য এবং পরিষেবার সরবরাহ অক্ষু্ণ্ণ রাখার জন্য যে সব পরিবহণ প্রয়োজন, তার জন্য কোনও আলাদা পাস বা অনুমতিপত্রের দরকার হবে না।
• ৩ মে ২০২০ পর্যন্ত যে সব কার্যকলাপের অনুমতি ছিল, ৪ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত সেই সব কার্যকলাপের জন্য নতুন করে কোনও অনুমতি বা অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
• ভারতে আটকে থাকা বিদেশি নাগরিকদের জন্য ব্যবস্থা, কোয়রান্টিনে থাকা ব্যক্তিদের ছাড়ার ব্যবস্থা, রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের যাতায়াতের ব্যবস্থা, পরিযায়ী শ্রমিক, তীর্থযাত্রী, পর্যটক, পড়ুয়া এবং অন্যদের সড়কপথে ও রেলপথে যাতায়াতের ব্যবস্থা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক আগে যে নির্দেশিকা জারি করেছিল, তা-ই বহাল থাকছে।
• রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির সরকারকে কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা কঠোর ভাবে অনুসরণ ও রূপায়ণ করতে হবে।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথা।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)