জামলো মকদম
তিন দিন ধরে একটানা হেঁটেছিল ১২ বছরের ছোট্ট মেয়েটি। কখনও সরু রাস্তা ধরে। আবার কখনও জঙ্গল কেটে পথ করে নিয়ে। লকডাউনের মধ্যে খাবার মেলেনি। কড়া রোদে চলতে চলতে মেলেনি জলও। সব বাধা উপেক্ষা করেও ছোট্ট ছোট্ট পায়ে অনেকটা রাস্তা পেরিয়ে এসেছিল সে। তবে শেষরক্ষা হল না। তেলঙ্গানা থেকে ছত্তীসগঢ়ের বিজাপুরে নিজের গ্রামে ফিরতে গিয়ে পথেই প্রাণ হারাল সেই বালিকা। বাড়ির কাছাকাছি এসেও তার পথ শেষ হল মৃত্যুতেই।
জামলো মকদম। পরিযায়ী শিশুশ্রমিক। দু’মাস আগে অভাবের সংসার ছেড়ে, তেলঙ্গানার কান্নাইগুডা গ্রামে লঙ্কার বাগানে কাজ করতে গিয়েছিল সে। ভেবেছিল, রোজগারের টাকায় বাবা-মাকে সাহায্য করবে। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটির জীবনে সব কিছু আচমকাই পাল্টে দিয়েছিল লকডাউনের ঘোষণা। কর্মস্থল থেকে ফিরতে চাইছিল সকলেই। আতঙ্ক আর উদ্বেগ সঙ্গী করে প্রথম দফার লকডাউনের মধ্যে তেলঙ্গানার গ্রামেই অপেক্ষা করছিল জামলো। কিন্তু লকডাউনের মেয়াদ বাড়তেই বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় ওই বালিকা।
সঙ্গী হয় ১১ জন পরিযায়ী শ্রমিকের একটি দল। তেলঙ্গানা থেকে বিজাপুর, ১৫০ কিলোমিটার পথ। রাস্তাঘাটে চলছে না কিছুই। এতটা পথ তাঁরা যাবেন কী ভাবে? দল বেঁধে হাইওয়ে দিয়ে হেঁটে গেলেও পুলিশ আটকাবে। অগত্যা জঙ্গলের নির্জন রাস্তাই বেছে নিয়েছিলেন সকলে। ১৫ এপ্রিল শুরু হয়েছিল যাত্রা। চলতে চলতে কোথাও কোথাও রাস্তাও মেলেনি। এগোতে হয়েছে জঙ্গল কেটে।
আরও পড়ুন: ‘তুলনায় ভারতে দুর্বল করোনা’
এমনিতেই লকডাউন, তার মধ্যে জঙ্গলের পথে কোথায় মিলবে খাবার, জল— বেঁচে থাকার রসদ? তবুও টানা তিন দিন ধরে হাঁটছিলেন সকলে। শ্রমিকদের দলটি বিজাপুরের কাছাকাছি চলেই এসেছিল। শনিবার, ১৮ এপ্রিল আশার আলো দেখলেন সবাই। জামলোর বাড়ি তখন মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে। ঘণ্টাখানেকের পথ। তখনই পেটে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয় তার। কিন্তু সেই জঙ্গলে কোথায় চিকিৎসার বন্দোবস্ত? মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় কোনও ক্রমে একটা অ্যাম্বুল্যান্স মিলেছিল। কিন্তু তত ক্ষণে দীর্ঘপথের ধকল সহ্য করতে না-পেরে মৃত্যু হয় বালিকার। অ্যাম্বুল্যান্সে করেই জামলোর ছোট্ট দেহ বিজাপুরের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।
আরও পড়ুন: শ্রমিকেরা ঘরে ফিরুন, চায় না মালিক পক্ষও
পরিযায়ী শ্রমিক জামলোর মৃত্যুর পরে তার করোনা-পরীক্ষা হয়েছে। রিপোর্ট নেগেটিভ। সে কথা জানিয়ে বিজাপুরের স্বাস্থ্যকর্তা বিআর পূজারী বলেছেন, ‘‘ওই বালিকার শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।’’ আর জামলোর বাবা আন্দোরাম মকদম জানিয়েছেন, তিন দিন ধরে হেঁটে বমি আর পেটের যন্ত্রণা শুরু হয়েছিল মেয়ের। ওই দলে থাকা একজনের কথায়, ‘‘পথে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছিল জামলো। তার পরেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।’’
পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুতে জামলোর তার পরিবারকে এক লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা শুনিয়েছে ছত্তীসগঢ় সরকার।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)