মুম্বইয়ের বিভিন্ন এলাকায় চলেছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। ছবি: এপি।
এক দিনে সারা দেশে ২৪,৮৫০ জন নতুন কোভিড-১৯ রোগী। যা ২৪ ঘণ্টার নিরিখে সর্বাধিক। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মৃত্যু হয়েছে ৬১৩ জনের। যা এক দিনে সবচেয়ে বেশি।
পশ্চিমবঙ্গেও পরপর তিন দিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর জোড়া রেকর্ড। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে নতুন রোগী ৮৯৫ জন, মৃত ২১ জন।
এর থেকেও বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছিল রাতে। যখন আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় জানানো হল, মোট কোভিড রোগীর সংখ্যায় বিশ্বে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভারত। জানানো হল, দেশে মোট রোগীর সংখ্যা এখন ৬.৯৭ লক্ষেরও বেশি। রাশিয়া নেমে গিয়েছে চার নম্বরে। ভ্লাদিমির পুতিনের দেশে রোগীর সংখ্যা ৬.৮১ লক্ষ। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে এখন রোজ এক বারই, সকাল ৮টায় সারা দেশের কোভিড-পরিসংখ্যান ‘আপডেট’ করা হয়। কাজেই গভীর রাত পর্যন্ত ওয়েবসাইট দেখিয়েছে, ভারতে নোভেল করোনাভাইরাসে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৬.৭৩ লক্ষ। দিনভর বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসতে থাকা নতুন সংক্রমণের খবর হিসেব করে বিশেষজ্ঞেরা আশঙ্কা করছিলেন, আগামিকালের মধ্যেই হয়তো রাশিয়াকে পেরিয়ে যাবে ভারত। রাত পোহানোর আগেই মিলে যায় সেই আশঙ্কা।
পশ্চিমবঙ্গে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে নতুন করোনা রোগী পাওয়া গিয়েছিল ৬৬৯ জন, মারা গিয়েছিলেন ১৮ জন। দু’টোই নজির। গত কাল এই সংখ্যাটা বেড়ে হয় যথাক্রমে ৭৪৩ জন এবং ১৯ জন। আজ ফের দু’টোতেই নতুন রেকর্ড। উপরন্তু পশ্চিমবঙ্গের আজকের করোনা বুলেটিন বলছে, রাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে সময় লেগেছে মাত্র ১১ দিন। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, নিউ টাউনের একটি বেসরকারি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার কাজ বন্ধ না-থাকলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ত।
রোগীর সংখ্যা লাগামছাড়া হওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুক্তিও কার্যত একই রকম। এক কর্তা বলেছেন, দেশ জুড়ে পরীক্ষা তথা ল্যাবরেটরির সংখ্যা বেড়েছে বলেই সংক্রমিতের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সারা দেশে ৭৮০টি সরকারি এবং ৩০৭টি বেসরকারি ল্যাবে রোজ প্রচুর সংখ্যক পরীক্ষা হচ্ছে। তবে দেশে কোভিড থেকে সেরে-ওঠা রোগীর সংখ্যা চার লক্ষ পেরিয়েছে আজই। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ২,৪৪,৮১৪। আরোগ্যের হার বাড়তে বাড়তে হয়েছে ৬০.৭৭ শতাংশ।
দেশে আক্রান্ত ৬,৭৩,১৬৫
মৃত ১৯,২৬৮
সুস্থ ৪,০৯,০৮২
(রবিবারের করোনা বুলেটিন।
সূত্র: কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক)
কিন্তু এই যুক্তিতে চিঁড়ে ভিজছে না। আজ কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, লকডাউনকে কাজে লাগিয়ে দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত করতে ব্যর্থ হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। ‘পিএম কেয়ার্স’ তহবিলের টাকায় ভেন্টিলেটর কেনার ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। পরপর চার দিন দেশে করোনার নতুন সংক্রমণের সংখ্যা ২০ হাজারের উপরে রয়েছে। সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, আজ সারা দিনে যত রোগী বেড়েছে, তার ৭৮ শতাংশই সাতটি রাজ্যের— মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, দিল্লি, তেলঙ্গানা, কর্নাটক, অসম ও বিহার। মহারাষ্ট্রে মোট আক্রান্তের সংখ্যা আজ দু’লক্ষ পেরিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে এক দিনে রেকর্ড সংক্রমণ হয়েছে ১১৫৩ জনের।
আরও পড়ুন: টিকা কবে? গবেষকের লেখা ওড়াল সরকার
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের দাবি, হাসপাতালে পাঠাতে হবে, এমন রোগীর সংখ্যা রাজধানীতে ক্রমশ কমছে। অনেক বেশি মানুষ সেরে উঠছেন গৃহ-নিভৃতবাসেই। কেজরীবাল বলেন, ‘‘হাসপাতালে প্রায় ৯৯০০টি কোভিড-শয্যা এখন খালি। গত সপ্তাহে দিল্লিতে রোজ গড়ে ২৩০০-র কাছাকাছি রোগী পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা এখন ৬২০০ থেকে কমে ৫৩০০ হয়েছে।’’ যদিও মনে রাখতে হবে, আজ দিল্লিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯৭ হাজারের বেশি। গত ৪ মার্চ যেটা ছিল মাত্র ৪৪৫।
আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেশে মোট রোগীর সংখ্যা ৬ লক্ষ পেরিয়েছিল গত বুধবার। সেই হিসেবে ৯৭ হাজার রোগী বাড়ল চার দিনে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে মোট রোগীর সংখ্যা ১৫ লক্ষ, শীর্ষে থাকা আমেরিকায় ২৯ লক্ষ। আবার শুরু হয়েছে হিসেব কষা। এ এমন দৌড়, যা জিততে চায় না কোনও দেশই!