ফাইল চিত্র।
দেশের সবাইকে কত দিনের মধ্যে কোভিডের প্রতিষেধক দেওয়া হবে, তার লক্ষ্য এখনও ঠিক হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নতুন প্রাসাদোপম বাসভবন তৈরির লক্ষ্যমাত্রা কিন্তু ঠিক হয়ে গেল।
সরকারি লক্ষ্য অনুযায়ী, আগামী বছর, ২০২২-এর ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নতুন বাসভবন নির্মাণ ও বাসযোগ্য করে ফেলা হবে। তার আগে নভেম্বরের মধ্যেই নতুন সংসদ ভবনও তৈরি হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসপিজি-র জন্যও নতুন ভবন তৈরি হবে। সে কাজও ২০২২-এর ডিসেম্বরের মধ্যে সেরে ফেলার লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর।
কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও নরেন্দ্র মোদী সরকার রাজধানী দিল্লিকে ঢেলে সাজানোর ‘সেন্ট্রাল ভিস্টা’ প্রকল্পের কাজ থেকে সরেনি। বিরোধীদের দাবি ছিল, ২০ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প স্থগিত রেখে সেই টাকা স্বাস্থ্য খাতে বা দেশের মানুষকে প্রতিষেধক দিতে খরচ হোক। মোদী সরকার তাতে কান দেয়নি। উল্টে এই প্রকল্পের কাজকে ‘অত্যাবশ্যক প্রকল্পে’র তকমা দিয়েছে। আবার কেন্দ্রীয় পূর্ত দফতর পরিবেশ মন্ত্রকের একটি কমিটিকে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, উপরাষ্ট্রপতির নতুন বাসভবন, এসপিজি ভবন, নতুন সংসদ ভবন ও কেন্দ্রীয় সচিবালয় তৈরির জন্য প্রকল্প ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা ঠিক হয়েছে। এত দিন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন লোককল্যাণ মার্গে ছিল। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাইসিনা হিলসে সাউথ ব্লকের পিছনেই প্রধানমন্ত্রীর জন্য নতুন বাসভবন তৈরি করা হবে।
সরকারি হিসেবে, এই সব প্রকল্পে খরচ হবে ১৩,৪৫০ কোটি টাকা। কিন্তু বিরোধীদের দাবি সত্ত্বেও ৪৫-অনূর্ধ্বদের টিকাকরণের কোনও দায় এখনও কেন্দ্র নিতে নারাজ। সুপ্রিম কোর্ট রবিবার রাতে ঠিক এই বিষয়েই প্রশ্ন তুলেছে। শীর্ষ আদালতের বক্তব্য, ৪৫ বছরের বেশি বয়সিদের কেন্দ্র টিকা দেবে, কিন্তু ১৮-৪৪ বছর বয়সিদের টিকা দেওয়ার দায় কেন্দ্র নেবে না— মোদী সরকারের এই নীতি আপাত ভাবে সংবিধান প্রদত্ত স্বাস্থ্যের অধিকারের বিরুদ্ধে। সরকারের উচিত এই নীতি পুনর্বিবেচনা করা।
এর মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, মোদী সরকার নতুন করে প্রতিষেধক কেনার বরাতই দেয়নি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী মোদী সরকারকে নিশানা করে বলেছেন, নীতিপঙ্গু সরকার ভাইরাসকে হারাতে পারবে না। প্রশ্নের মুখে আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রক দাবি করেছে, ২৮ এপ্রিলই সিরাম ইনস্টিটিউটকে মে-জুন-জুলাইয়ের জন্য ১১ কোটি ডোজ কোভিশিল্ডের বরাত দিয়ে পুরো ১,৭৩২ কোটি টাকা অগ্রিম মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই দিনে ভারত
বায়োটেককেও ৫ কোটি কোভ্যাক্সিনের বরাত দেওয়া হয়েছে। সিরামকে তার আগে ১০ কোটি ডোজের বরাত দেওয়া হয়েছিল। সোমবার পর্যন্ত ৮.৭৪ কোটি ডোজ মিলেছে। কোভ্যাক্সিনকে দেওয়া আগের ২ কোটি ডোজ বরাতের মধ্যে ৮৮ লক্ষ ডোজ মিলেছে।
বিরোধীদের প্রশ্ন, কত দিনের মধ্যে দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের সবাইকে প্রতিষেধক দেওয়া যাবে? সুপ্রিম কোর্টও কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির কাছে জানতে চেয়েছে, ১৮-৪৪ বছর বয়সিদেরও প্রতিষেধক দিতে আগামী ছয় মাসে কত টিকা প্রয়োজন হবে? তার কতখানি মিলবে? আজ সিরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদার পুণাওয়ালা বলেছেন, তাঁরা এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের থেকে ২৬ কোটি ডোজের বরাত পেয়েছেন। ১৫ কোটি ডোজের বেশি জোগান দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছেন— চাইলেই প্রতিষেধকের উৎপাদন বাড়ানো যায় না। স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্র বলছে, জুলাইয়ের মাঝামাঝি সরকারের হাতে ৪৫-৫০ কোটি ডোজ় ভ্যাকসিন আসবে, যা দিয়ে দেশের পূর্ণবয়স্কদের অর্ধেককে প্রথম ডোজ়ের টিকা দেওয়া যাবে। কিন্তু সেটা কবে হবে, তা অজানা।
তা হলে কত দিনের মধ্যে দেশের ১৮ বছরের বেশি বয়সি সকলে প্রতিষেধক পাবেন? স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে এখনও এর উত্তর নেই।