ছবি পিটিআই।
আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় ভারতে মোট করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ২০ লক্ষ পেরোল। নরেন্দ্র মোদী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯০৪ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে, সংক্রমিত হয়েছেন আরও ৫৬,২৮২ জন। দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধির সংখ্যা ৫০ হাজারের উপরে রয়েছে টানা ৮ দিন ধরে। এবং সরকারি পরিসংখ্যানই বলছে, দেশে কোভিডে মৃতের মোট সংখ্যা আজ ৪০ হাজার পেরিয়েছে।
উদ্বেগজনক এই সব পরিসংখ্যানের চেয়েও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক আপাত ভাবে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে মোট সুস্থের সংখ্যা ১৩ লক্ষ পেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকেই। আজ রুটিন বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, দেশে করোনায় মৃত্যুর হার কমছে, সুস্থতার হার বাড়ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় জরুরি সাহায্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ২২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে আজ মোট ৮৯০.৩২ কোটি টাকা দিয়েছে কেন্দ্র। পূর্বঘোষিত ১৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের এটি দ্বিতীয় কিস্তি।
আজ সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ১৯,৬৪,৫৩৬। অ্যাক্টিভ করোনা রোগী ৫,৯৫,৫০১ জন। সেরে উঠেছেন ১৩,২৮,৩৩৬ জন। অর্থাৎ অ্যাক্টিভের চেয়ে সুস্থের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৩২ হাজারেরও বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬,১২১ জন সুস্থ হয়েছেন। দেশে সুস্থতার হার বেড়ে হয়েছে ৬৭.৬২ শতাংশ। মৃত্যুহার নেমে এসেছে ২.০৭ শতাংশে। কেন্দ্রের বক্তব্য, মোট সংক্রমিতের নিরিখে অ্যাক্টিভ রোগীর হার গত ২৪ জুলাই ছিল ৩৪.১৭ শতাংশ। আজ তা ৩০.৩১ শতাংশ। ‘পরীক্ষা, নজরদারি, চিকিৎসা’— কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরে এই তিন ধাপের কৌশল কাজে দিয়েছে। উন্নত হয়েছে চিকিৎসা তথা হাসপাতালের পরিকাঠামো। গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৬,৬৪,৯৪৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হাসপাতাল যেতে দেরি, তাই করোনায় বিপত্তি: মুখ্যসচিব
করোনা মোকাবিলায় গত এপ্রিলে রাজ্যগুলির জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল কেন্দ্র। যদিও তা পর্যাপ্ত নয় বলেই বিরোধীরা অভিযোগ করেছিলেন। প্রথম কিস্তির ৩০০০ কোটি টাকা আগেই মঞ্জুর হয়েছে। আজ দেওয়া দ্বিতীয় কিস্তির টাকায় পরীক্ষা সংক্রান্ত পরিকাঠামো তৈরির উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। আরও বেশি আরটি-পিসিআর কিট, আরএনএ কিট, ট্রু-ন্যাট ও সিবি-ন্যাট যন্ত্র, অক্সিজেন মেশিন কেনা এবং আইসিইউ-শয্যার উন্নতিতে ওই টাকা ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। ‘আশা’ কর্মীদের পাশাপশি আরও বেশি চিকিৎসাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের করোনা-যুদ্ধে শামিলের বিষয়টিরও উল্লেখ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্য, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি এ বারের টাকা পাচ্ছে।
কোভিডের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেকটাই আশার আলো দেখিয়েছিল প্লাজ়মা থেরাপি। কোভিড থেকে সেরে-ওঠা ব্যক্তির প্লাজ়মা দেওয়ার পরে দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের মতো অনেকেরই সঙ্কটজনক অবস্থা থেকে আরোগ্য লাভের খবর পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু আজ দিল্লির এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, কোভিডে মৃত্যুর ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে কোনও স্পষ্ট লক্ষণ দেখাতে পারেনি প্লাজ়মা থেরাপি। এমসের ৩০ জন রোগীর উপরে পরীক্ষা চালিয়ে তাঁরা এমনটাই দেখতে পেরেছেন। গুলেরিয়া জানান, এক দল রোগীকে তাঁরা অন্যান্য চিকিৎসার সঙ্গেই প্লাজ়মা দিয়েছিলেন। আর এক দলকে প্লাজ়মা দেওয়া হয়নি। দেখা গিয়েছে, দু’টি দলেই মৃত্যুর সংখ্যা সমান এবং রোগীদের অবস্থারও তেমন উন্নতি হয়নি। গুলেরিয়া অবশ্য বলেছেন, এটি একেবারেই অন্তর্বর্তী সমীক্ষা এবং বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তবে প্লাজ়মা দেওয়ার আগে তা পরীক্ষা করে নেওয়ার উপরে বিশেষ জোর দিয়েছেন তিনি।