জনস্রোত: শিয়ালদহ স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে গন্তব্যের পথে নিত্যযাত্রীরা। দূরত্ব-বিধি মেনে চলার কোনও বালাই নেই। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ
শীতে সুনামির আশঙ্কা! করোনা সুনামির। করোনা সংক্রমণ যে-হারে বাড়ছে, তাতে এখনই সংক্রমণে রাশ না-টানলে বেশ কিছু রাজ্যে ডিসেম্বর মাসে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর খারাপ হতে চলেছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা। সমান উদ্বিগ্ন সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালত আজ তাই বাড়তে থাকা করোনা সংক্রমণ রুখতে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, দু’দিনের মধ্যে তার বিস্তারিত রিপোর্ট চাইল চার রাজ্যের কাছে। বিচারপতি অশোক ভূষণের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ আজ পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, দিল্লি, গুজরাত, মহারাষ্ট্র ও অসম— এই চার রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার পথে। তাই সরকারের উচিত এখনই পদক্ষেপ করা। দেশের অন্যান্য রাজ্যেও সংক্রমণ বাড়ছে। তাদের থেকেও ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ চেয়েছে শীর্ষ আদালত।
সংক্রমণের প্রশ্নে গোড়া থেকেই শীর্ষে ছিল মহারাষ্ট্র ও গুজরাত। কিন্তু সম্প্রতি, বিশেষ করে গত এক মাসে, দিল্লিতে সংক্রমণ যে রকম দ্রুত বেড়েছে, তাতে বিচারপতিরা উদ্বিগ্ন। দিল্লির বিষয়টিতে আদালত আলাদা ভাবে নজর রাখছে। সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, দিল্লির করোনা পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক। প্রায় প্রতি বাড়িতেই কেউ না কেউ কোনও সময়ে সংক্রমিত হয়েছেন। রাজধানীর পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ করেছে এবং কেন্দ্রের কাছে কী সাহায্য প্রয়োজন, কেজরীবাল সরকারকে তা অবিলম্বে জানাতে বলেছে কোর্ট।
আরও পড়ুন: অক্সফোর্ডের ফলে আশায় ভারত
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, দিল্লিতে রোগীর সংখ্যা ৫.২৯ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। সংক্রমণের নিরিখে দেশের ষষ্ঠ রাজ্য হল দিল্লি। গত ২৪ ঘণ্টায় এখানে মারা গিয়েছেন ১২১ জন, নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৬,৭৪৬ জন। ফি দিন নতুন আক্রান্ত ছ’হাজারের বেশি হওয়ায় চাপ বাড়ছে হাসপাতালগুলিতে। শয্যা মিলছে না। বাধ্য হয়ে নয়ডা, গুরুগ্রামের হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন দিল্লিবাসী।
দিল্লির মতোই সংক্রমণ বাড়ছে দেশের অন্যান্য প্রান্তেও। সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি, এমন আটটি রাজ্যের সঙ্গে আগামিকাল বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রাজ্যগুলি হল— ছত্তীসগঢ়, দিল্লি, হরিয়ানা, কেরল, রাজস্থান, গুজরাত, মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ। সংক্রমণ পরিস্থিতির পাশাপাশি প্রতিষেধক নিয়েও কাল মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: ফাইজারের টিকাকে এ সপ্তাহেই ছাড়পত্র দিতে পারে ব্রিটেন
সংক্রমণ উদ্বেগজনক আকার নেওয়ায় আজ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নৈশ কার্ফু জারি করেছে হিমাচলপ্রদেশ। বহিরাগতদের মাধ্যমে যাতে সংক্রমণ না-ছড়ায়, তার জন্য কড়া পদক্ষেপ করেছে মহারাষ্ট্র সরকার। দিল্লি ও রাজধানী সংলগ্ন অঞ্চল (নয়ডা ও গুরুগ্রাম), রাজস্থান, গুজরাত ও গোয়া থেকে যাঁরা বিমানে বা ট্রেনে মহারাষ্ট্রে প্রবেশ করবেন, তাঁদের প্রত্যেকের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হবে বলে নির্দেশিকা জারি করেছে উদ্ধব সরকার। দিল্লিতে আজ আইসিএমআরের একটি ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এখানে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাতে লাগবে ৪৯৯ টাকা। তবে দিল্লিবাসীর কোনও টাকা লাগবে না।