স্বস্তি জোগাচ্ছে দৈনিক সুস্থতার হার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দেশ জুড়ে দৈনিক সুস্থতার হার এই প্রথম ৯০ শতাংশে পৌঁছল। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার সামান্য বাড়লেও আক্রান্তের সংখ্যা ফের ৫০ হাজারের ঘরে। সেই সঙ্গে এক দিনে কোভিডে মৃতের সংখ্যা কমলেও সব মিলিয়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল সাড়ে ৭৮ লক্ষ। তবে উৎসবের মরসুমে দেশ জুড়ে করোনার পরিসংখ্যানে অস্বস্তির কাঁটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ এবং দিল্লি।
রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, দেশে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৭৮ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮১১। তবে এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭০ লক্ষ ৭৮ হাজার ১২৩ জন। ফলে এই মুহূর্তে সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লক্ষ ৬৮ হাজার ১৫৪-এ। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ হাজার ১২৩ জন। ওই সময়ের মধ্যে ৫৭৮ জন কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে সাড়ে ৭৮ লক্ষ ছাড়ালেও আশা জোগাচ্ছে দৈনিক সুস্থতার হার। এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী, তা ছুঁয়েছে ৯০ শতাংশ। গত ৩০ জানুয়ারি দেশে করোনায় আক্রান্তে সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। তার পর থেকে এই এই প্রথম সুস্থতার হারে এই উন্নতি দেখা গেল।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
২০ অক্টোবর থেকেই দেশ জুড়ে দৈনিক সংক্রমণের হার দ্রুত কমছিল। তবে শনিবার তা ফের ঊর্ধ্বমুখী হয়। গত কাল তা ছিল ৪.২০। এ দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তা দাঁড়িয়েছে ৪.৩৯ শতাংশে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশ জুড়ে কোভিড টেস্ট হয়েছে ১১ লক্ষ ৪০ হাজার ৯০৫ জনের। প্রতি দিন যত সংখ্যকের কোভিড টেস্ট করা হয়, তার মধ্যে যত শতাংশের টেস্ট রিপোর্ট পজিটিভ, তাকেই পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার বলে। এই হার যত নিম্নমুখী হবে, ততটাই স্বস্তিদায়ক।
আরও পড়ুন: ‘নো এন্ট্রি জোনে’ অঞ্জলি, আইনি নোটিসের কোপে পড়তে পারেন নুসরত, সৃজিত, মহুয়ারা
আরও পড়ুন: কুমারী মায়ের মুখে মাস্ক নেই, উদ্বেগের জবাবে ‘আধ্যাত্মিক’ যুক্তি বেলুড় মঠের
বিশ্ব জুড়ে করোনায় আক্রান্তের তালিকায় গোড়া থেকে শীর্ষে ছিল আমেরিকা। গত ২৪ ঘণ্টায় সে দেশে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৮৫ হাজার ৩১৭। সব মিলিয়ে আমেরিকায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫ লক্ষ ৭৬ হাজার ৬৯-এ। অন্য দিকে, ভারতের পরেই ওই তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলের মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৩ লক্ষ ৮০ হাজার ৬৩৫। দৈনিক সংক্রমণ হয়েছে ২৬ হাজার ৯৭৯ জনের মধ্যে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আক্রান্তের তুলনায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ইউরোপীয় দেশ বা আমেরিকার তুলনায় ভারতে বরাবরই কম। এ দিন স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত এ দেশে সংক্রমণের জেরে মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৫৩৮ জনের।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
দেশের মধ্যে সবচেয়ে আশঙ্কার জাগাচ্ছে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক এবং তামিলনাড়ুর পরিসংখ্যান। তবে উৎসবের মরসুমে পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। এ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, শনিবার বঙ্গে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪ হাজারের ঘর। সেই সঙ্গে মৃত্যু হয়েছে ৫৯ জন কোভিড রোগীর। পাশাপাশি, গত কয়েক দিনে দিল্লিতেও সংক্রমণ এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে আক্রান্ত হয়েছে ৪ হাজার ১১৬ জন। যার ফলে রাজধানীতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ ৫২ হাজার ৫২০। এখনও পর্যন্ত সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ২২৫ জনের।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
এ দিনও মহারাষ্ট্র দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে। ওই রাজ্যে ৬ হাজার ১১৭ জনের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছে। পাশাপাশি, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে মহারাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লক্ষ ৩৮ হাজার ৯৬১। এর মধ্যে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৭০২। মহারাষ্ট্র ছাড়াও মোট আক্রান্তের নিরিখে অস্বস্তির জাগাচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশ (৮ লক্ষ ৪ হাজার ২৬ জন), কর্নাটক (৭ লক্ষ ৯৮ হাজার ৩৭৮ জন) এবং তামিলনা়ড়ু (৭ লক্ষ ৬ হাজার ১৩৬ জন)-এর পরিসংখ্যান।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)