নরেন্দ্র মোদীকে আশীর্বাদ করছেন মাস্কহীন নৃত্যগোপাল দাস। ফাইল চিত্র
শেষ বার প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেখা গিয়েছিল গত ৫ অগস্ট। অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজোর দিন। সেই দিন যাঁর হাত ধরে মোদী প্রণাম করেছিলেন, রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের প্রধান সেই নৃত্যগোপাল দাস গত কাল সংক্রমিত হয়েছেন করোনায়। এ দিকে আগামী শনিবার লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসের পতাকা উত্তোলন। ফের প্রকাশ্যে আসবেন প্রধানমন্ত্রী। সেই অনুষ্ঠান থেকে যাতে কোনও ভাবে সংক্রমণ না-ছড়ায়, তার জন্য লালকেল্লা চত্বরকে স্যানিটাইজ় করতে উঠেপড়ে লেগেছে কেন্দ্র।
অতিমারির আবহে অযোধ্যায় ধুমধাম করে ভূমিপুজো করার প্রয়োজন রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন আগেই উঠেছিল। অনুষ্ঠানের সাত দিনের মাথায় করোনা-আক্রান্ত হলেন নৃত্যগোপাল দাস। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে। অযোধ্যার সেই দিনের মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশকে মাস্ক পরে থাকার পরামর্শ দিলেও ৮২ বছরের নৃত্যগোপালকে বিনা মাস্কেই বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল। ভূমিপুজো শেষে প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে উঠে প্রথমেই মাস্কবিহীন নৃত্যগোপালের সঙ্গে
কথা বলেন। নৃত্যগোপালের হাত ধরে মাথা ঝুঁকিয়ে আশীর্বাদ চাইতেও দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে।
এ দিকে শনিবার স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বাতিল করার প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু সংক্রমণ এড়াতে অনুষ্ঠান কাটছাঁট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। ওই দিন সকাল ৭টা ২১ মিনিটে লালকেল্লায় পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় পতাকা উত্তোলন হওয়ার কথা সাড়ে ৭টায়। তার পরে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা। প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানে ৩০০ থেকে ৫০০ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ বছর সংখ্যাটি কমিয়ে আনা হয়েছে ১২০-তে। দূরত্ব-বিধি মেনে এঁদের দু’প্রান্তে ভাগ করে বসানো হবে। অভ্যাগতদের মধ্যে যদি কারও এক সপ্তাহের মধ্যে সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ দেখা দেয়, সেই ব্যক্তিকে না-আসার অনুরোধ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পুরনো গতিতেই ফের রেকর্ড সংক্রমণ দেশে
এ বছরের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন না আম-নাগরিকেরা। পরিবর্তে দিল্লি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় দেড় হাজার কোভিড-যোদ্ধাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াইকে কুর্নিশ করতেই ওই পদক্ষেপ। স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাঙ্গণে দিল্লির বিভিন্ন স্কুলের প্রায় দু’হাজার ছাত্র-ছাত্রী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে থাকে। এ বছর বাতিল তা-ও। পরিবর্তে এনসিসি ক্যাডেটের প্রায় পাঁচশো জনের দল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবে। বৃষ্টির মধ্যেই তার মহড়া হয় আজ।
প্রতিবারের মতোই কুচকাওয়াজে তিন বাহিনীর জওয়ানেরা অংশ নেবেন। থাকবেন দিল্লি পুলিশের সাড়ে তিনশো কর্মী। সংক্রমণ রুখতে এঁদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে। তিন বাহিনীর যে অফিসারদের সে দিন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তাঁদেরও নিভৃতবাসে থাকতে বলা হয়েছে। একই নির্দেশ অফিসারদের গাড়িচালক, বাড়ির পরিচারকদের জন্যও। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন শুধু সরকারি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা।
দেশে করোনা সংক্রমণের পরে ১৫ অগস্ট প্রথম বার প্রধানমন্ত্রী ও দেশের অন্য গণ্যমান্যদের নিয়ে এত বড় মাপের অনুষ্ঠান হতে চলেছে। সেখান থেকে যাতে কোনও ভাবে সংক্রমণ না ছড়ায়, তার জন্য তৎপর কেন্দ্র। এর মধ্যে নৃত্যগোপালের সংক্রমণের খবর কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করেছে। বিশেষ করে সে দিন তিনিই ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি বিনা মাস্কে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একাসনে ছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাস্কবিহীন কারও সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা বলাটা ভুল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে জনমানসে।
উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন সূত্রে অবশ্য জানানো হয়েছে, নৃত্যগোপাল ভাল আছেন। তিনি করোনা সংক্রমিত হলেও উপসর্গহীন। তবে সামান্য শ্বাসের কষ্ট থাকায় তাঁকে হরিয়ানার মেদান্ত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই হাসপাতালেই করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও।