ফাইল চিত্র।
গোটা দেশে টিকার অভাবের জন্য কেন্দ্রের ‘ভ্রান্ত’ প্রতিষেধক নীতিকে দায়ী করছে বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলি। কার্যত বন্ধ করে দিতে হয়েছে ১৮ থেকে ৪৪ বছরের টিকাকরণ। বিরোধীদের বিভিন্ন অভিযোগের জবাবে আজ নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল দাবি করেন, নিয়ম মেনেই রাজ্যগুলির জন্য পর্যাপ্ত টিকা বরাদ্দ করা হয়েছে। আগামী কয়েক মাসে উৎপাদন বাড়লে তাদের আরও বেশি টিকা দেওয়া যাবে।
গত ১ মে টিকা নীতি পাল্টে ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিদের টিকাকরণের দায় রাজ্যের কাঁধে তুলে দেয় কেন্দ্র। এই নীতির প্রবল বিরোধিতা হয়। বিনোদ পলের যুক্তি, জানুয়ারি থেকে দেশে টিকাকরণ শুরু হয়েছিল। যে রাজ্যগুলি এপ্রিলের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী ও ফ্রন্টলাইন কর্মীদের টিকাকরণের লক্ষ্য ছুঁতে ব্যর্থ হয়েছিল, তারাই টিকাকরণ প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণের দাবি তুলেছিল। স্বাস্থ্য যে-হেতু রাজ্যের বিষয় এবং যাতে রাজ্যগুলির হাতে আরও ক্ষমতা থাকে— তা ভেবেই নয়া নীতিতে তাদের আরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, সরকারের বোঝা উচিত ছিল, কেবল মাত্র সিরাম ইনস্টিটিউটের কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের মাধ্যমে দেশের ১৩০ কোটি মানুষের টিকাকরণ অসম্ভব। যদি তা-ই করতে হত, সে ক্ষেত্রে ওই দুই সংস্থার প্রতিষেধক উৎপাদন বাড়ানোর উপরে গোড়াতেই জোর দিতে হত। পলের দাবি, টিকার উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত তিন সংস্থার প্লান্টে কোভ্যাক্সিনের উৎপাদন শুরু হয়েছে। তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাও প্রতিষেধক তৈরিতে নেমেছে। কোভিশিল্ডের উৎপাদনও বেড়েছে। পলের দাবি, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে প্রায় দু’শো কোটি প্রতিষেধক তৈরি হতে চলেছে। বিরোধীদের যুক্তি, অনেক আগেই বিদেশ থেকে প্রতিষেধক আনানো গেলে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার সময়ে বহু প্রাণ বাঁচানো যেত। জবাবে নীতি আয়োগ জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী টিকার সরবরাহ সীমিত। প্রতিষেধক সংস্থাগুলি নিজস্ব পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশকে টিকা জোগাচ্ছে। পলের কথায়, ‘‘ভারতীয় সংস্থাগুলি যেমন টিকা বণ্টনে দেশকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, তেমনই বিদেশি সংস্থাগুলি নিজেদের দেশকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।’’ আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানান, দ্রুত যাতে ফাইজ়ারের টিকা এ দেশে আনা যায়, তার জন্য আলোচনা চালু রয়েছে। বিদেশি সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গোড়ায় সরকারের নীতির কারণে ফাইজ়ার এ দেশে আসার আগ্রহ দেখিয়েও পিছিয়ে যায়। সেই সময়ে ফাইজ়ারকে ভারতে তাদের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালাতে বলা হয়েছিল। তার পরে আর আসেনি কোনও বিদেশি সংস্থাই। এপ্রিলে নীতি পরিবর্তন করে মোদী সরকার জানায়, ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপান বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃত প্রতিষেধকগুলিকে সরাসরি এ দেশে মানবদেহে প্রয়োগের ছাড়পত্র দেবে কেন্দ্র। বিনোদ পলের যুক্তি, টিকাগুলি যে-হেতু অন্য দেশে ছাড়পত্র পেয়েছে, তাই ভারতে সেগুলির নতুন করে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ অপ্রয়োজনীয়।
বিরোধীদের অভিযোগ, এই সিদ্ধান্তই তো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার আগে নেওয়া উচিত ছিল। এই প্রসঙ্গে ঘরোয়া মহলে স্বাস্থ্যকর্তাদের যুক্তি, বিদেশি টিকা মানবশরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে কি না, গোড়ায় তা অজানা ছিল। বিদেশি প্রতিষেধকে কেউ অসুস্থ হলে বিরোধীদের নিশানায় পড়তে হত কেন্দ্রকে। তবে দু’টি মাত্র ভারতীয় সংস্থার টিকার মাধ্যমে সকলের টিকাকরণ অসম্ভব— মার্চ-এপ্রিলে এ কথা বোঝার পরেই সরকার নীতিতে পরিবর্তন এনেছে।
করোনার তৃতীয় ধাক্কায় মূলত শিশুরা আক্রান্ত হতে চলেছে বলে আশঙ্কা করেছেন বহু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। বিভিন্ন পর্যায়ে শিশুদের টিকাকরণ শুরুর দাবি উঠেছে। এ নিয়ে পল বলেন, ‘‘কোনও দেশেই শিশুদের টিকা দেওয়া শুরু হয়নি। এ নিয়ে হু-র কোনও সুপারিশ নেই। দেশে গবেষণা চলছে। পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহের
পরেই দেশীয় বিজ্ঞানীরা যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবেন।’’