লকডাউন শিথিলের পর রাস্তায় নামল মানুষের ঢল। গাজিপুরে ট্রাফিক জ্যাম।—ছবি পিটিআই।
ছুট পেতেই যে ভাবে দিল্লি-সহ গোটা দেশে মানুষ লকডাউন-বিধি ও পারস্পরিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে পথে নামলেন, তাতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। এমনিতেই গত চব্বিশ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ২৫৫৩ জন। লকডাউন চলাকালীন যা সর্ব্বোচ্চ। দেশে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা এখন ৪২,৫৩৩। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, বিধিনিষেধকে এ ভাবে বুড়ো আঙুল দেখানো হলে সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে করোনা রোগীর সংখ্যা প্রবল বৃদ্ধি পেতে পারে। অবস্থা সামাল দিতে কাল থেকে দিল্লিতে মদে অতিরিক্ত ৭০ শতাংশ কর বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি সরকার।
তৃতীয় দফার লকডাউনের আজ ছিল প্রথম দিন। এ দফায় সরকারের পক্ষ থেকে গ্রিন ও অরেঞ্জ জ়োন তো বটেই, রেড জ়োনেও কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। সরকারের লক্ষ্য, লকডাউনের মধ্যে থেকেই ধীরে ধীরে আর্থিক কর্মকাণ্ডে গতি আনা। কিন্তু তা করতে গিয়ে আজ যে ভাবে রেড জ়োনেও যানজট তৈরি হল এবং মদ-পান-সিগারেটের দোকানে ভিড় জমল, তাতে প্রমাদ গুনছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এমন চললে এক ধাক্কায় বেড়ে যাবে করোনা সংক্রমণের হার। দ্রুত গতিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে নতুন-নতুন এলাকায়।
এমন সম্ভাবনা যে রয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল। তিনি আজ বলেন, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা সরকারের লক্ষ্য। তার জন্যই কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে রাজ্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গণ্ডিবদ্ধ সংক্রমিত জ়োনে সংক্রমণ আটকানোও কেন্দ্রের লক্ষ্য। সেটা সফল করতে হলে জনগণকে সামাজিক দায়িত্ব মানতে হবে। নিয়মের তোয়াক্কা না করলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক ধাক্কায় বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুন: বিদেশ থেকে ফেরানো হবে কেবল উপসর্গহীন ভারতীয়দের
দিল্লির প্রত্যেকটি জেলাই রেড জ়োনে। আজ সকালে ছাড়ের প্রথম দিনেই আইটিও, করোল বাগ, চাঁদনি চক, ওখলার মতো এলাকায় যানজট দেখা যায়। বেসরকারি দফতরের একাংশ খুলেছে আজ। বাস-মেট্রো না চললেও কিছু অটো চলতে দেখা যায়। অধিকাংশ ব্যক্তি নিজের গাড়ি বা বাইকে করে অফিসে যান। সেই সঙ্গে সকাল থেকে দিল্লির বিভিন্ন স্থানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্যের দোকান খুলতে দেখা গিয়েছে। সরকারের উপর ক্রমশই চাপ বাড়ছিল বণিক শ্রেণির, যারা বিজেপির চিরাচরিত ভোট ব্যাঙ্ক। অন্য দিকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও বুঝিয়ে দিয়েছেন, অদূর ভবিষ্যতে করোনা নিয়েই মানুষকে ঘর করতে হবে। অনির্দিষ্ট কাল লকডাউন চালানো অর্থহীন। সে কারণে কেন্দ্র রেড জ়োনে দোকান খোলার অনুমতি দিলে তাতে ছাড়পত্র দেয় দিল্লি সরকার।
আরও পড়ুন: লকডাউনের জেরে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা স্থগিত রাখল ইউপিএসসি
আজ দেশের অন্যান্য প্রান্তের মতো দিল্লিতেও মদের দোকানগুলির সামনে ছিল এক কিলোমিটার লম্বা লাইন। লক্ষ্মীনগর, ময়ূর বিহার, সিআর পার্ক, দরিয়াগঞ্জ, সরোজিনী নগর এলাকায় সকাল দশটা থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন দিল্লিবাসী। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পরিস্থিতি এমন হয় যে, লক্ষ্মীনগরের মদের দোকানগুলিতে শাটার ফেলে দেয় পুলিশ। লাঠি চার্জ হয় পাহাড়গঞ্জে। কাল থেকে দিল্লিতে মদের দোকানের সামনে আরও বেশি পুলিশের পাহারা থাকবে, বসবে ৭০ শতাংশ বেশি করও। কেরলে মদের দোকান খোলা হয়নি। নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্তের মতে, রাজ্য চাইলে বন্ধ রাখতেই পারে। রাজ্যের সেই অধিকার রয়েছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)