নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
গত কাল বিকেলে লোকসভা অধিবেশন তখন চলছে, সংসদ বন্ধের দাবিতে সরব হয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। কর্ণপাত করেননি স্পিকার। সূত্রের খবর, অধিবেশন মুলতুবির পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডাকেন তাঁকে। সৌগতবাবু মোদীর কাছে গিয়ে জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে অধিবেশন বন্ধ রাখা হোক। সকলে সেটাই চাইছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘কাজ তো চালু রাখতে হবে।’ পরে সৌগতবাবু জানান, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, স্কুলের বাচ্চারা তো এই রকম ছুটি চেয়ে থাকে। এমন করলে চলবে না।
ঘটনা হল, সংক্রমণ রুখতে সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে মোদী সরকারই। গোটা দেশে জমায়েত বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করাতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে। কিন্তু পুরোদমে চলছে সংসদ। যেখানে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার মানুষের যাতায়াত।
আজ বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠকেও মোদী জানিয়ে দিয়েছেন, সংসদ চলবে নির্ধারিত ৩ এপ্রিল পর্যন্তই। সূত্রের খবর, বৈঠকে তিনি জানান, যে ভাবে সংসদ বন্ধ করার জন্য কিছু সাংসদ চিঠি দিয়েছেন তাতে তিনি হতাশ। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর কথায়, ‘‘বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আজ ডাক্তার, নার্স, যাঁরা বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরে কাজ করছেন, তাঁদের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন। কোভিড-১৯ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সংবাদমাধ্যমের ভূমিকারও প্রশংসা করেছেন তিনি।’’ এর পরই ৩ তারিখ পর্যন্ত সংসদ চালানো নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দেন মন্ত্রী।
বিপদ ছড়িয়ে পড়ছে দেখেও সংসদের মতো বিশাল সমাবেশ কেন জোর করে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূল। গত কালের মতো আজও সংসদ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের লোকসভার নেতাকে জানিয়েছেন, তাঁর সাংসদদের যাবতীয় সাবধানতা অবলম্বন করতে। স্থির হয়েছে, নেত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী আগামিকাল তৃণমূলের সমস্ত সাংসদ অধিবেশন কক্ষে মাস্ক পরে উপস্থিত থাকবেন।
সংসদে সংক্রমণ মোকাবিলার ব্যবস্থাও মোটে উপযুক্ত নয় বলে অভিযোগ অনেক সাংসদের। বাইরের ছ’টি গেটে শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র দেওয়া হয়েছিল। দিল্লি পুলিশ ও সংসদীয় কর্মীদেরও সেই কাজে লাগানো হয়ছিল। কিন্তু ব্যাটারির জোগান দিতে না-পারায় বিকেলের পর পাঁচটি গেটই বন্ধ রাখতে হয়। একটি মাত্র গেট দিয়েই ঢোকানো হয় সকলকে। দোতলার ক্যান্টিনগুলিতে স্যানিটাইজ়ারের বোতল শুক্রবারের পর থেকে খালি পড়ে রয়েছে।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, মোদী করোনা রুখতে সামাজিক দূরত্ব বাড়ানোর যে নির্দেশ দিচ্ছেন, সংসদ চললে সেটা কী ভাবে সম্ভব হবে। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের মন্তব্য, ‘আমার একপাশে বসেন ৮০ বছরের শরদ পওয়ার। অন্য দিকে ৭২ বছর বয়সি রামগোপাল যাদব। গা ঘেঁষাঘেঁষি করেই বসতে হয় আমাদের। তাঁদের স্বার্থেই এ বার আমাকে মাস্ক পরতে হবে।’’
সংসদের গেটে যাঁরা পরীক্ষা করার জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছেন, সেই দিল্লি পুলিশ কর্মীদের অভিযোগ, জীবাণু সংক্রমণ থেকে বাঁচার কোনও ‘গিয়ার’ই দেওয়া হয়নি তাঁদের। রোগ-প্রতিরোধী সুরক্ষা পোশাক, দস্তানা ছাড়াই শয়ে শয়ে মানুষের পরীক্ষা করে যাচ্ছেন তাঁরা। ‘‘বিষয়টি আমাদের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক,’’ বলছেন তাঁদের পুলিশ কর্মীদের একাংশ। অস্বীকার করছেন না বাকিরাও।
বিরোধীদের বক্তব্য, মধ্যপ্রদেশে কমল নাথের সরকার ফেলে ক্ষমতায় আসার জন্য ঝাঁপিয়েছে বিজেপি। সে রাজ্যে ২৬ তারিখ পর্যন্ত বিধানসভা বন্ধ রেখেছে কংগ্রেসের সরকার। বিজেপি এর তুমুল বিরোধিতা করেছে বলেই সংসদ চালু রাখতে চাইছে। কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা তো সংসদ বন্ধ করে দিতে বলছি না। বন্ধ করে দেওয়া ভুল শব্দ। ভারত সরকারের মেডিক্যাল অফিসারেরা জানেন পরিস্থিত কোন পর্যায়ে রয়েছে। সেই অনুযায়ী সংসদ আপাতত মুলতবি করে দেওয়া যেতে পারে। পরে সংক্রমণের প্রকোপ কমে গেলে যে কোনও সময় অধিবেশন ডাকা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে বাদল অধিবেশনের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।’’
তবে এই আশঙ্কার আবহেও সংসদকেই সবচেয়ে নিরাপদ মনে করছেন বাংলার এক বিজেপি সাংসদ। তাঁর কথায়, ‘‘সংসদে তো তা-ও কম মানুষের মধ্যে রয়েছি। নির্বাচনী ক্ষেত্রে ফিরে হাজার মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা করতে হবে, তখন বাঁচাবে কে!’’