Coronavirus

অনিয়ম স্যানিটাইজ়ারে, টেস্ট কিটেও!

গুজরাতের কোসারা সংস্থা জানিয়েছে, তাদের কারখানায় দিনে ১০ হাজার টেস্টিং কিট তৈরি করা সম্ভব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ০৩:৪১
Share:

ছবি এপি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদী সরকার এ দেশে মাস্ক, ডাক্তারদের শরীর ঢাকার হ্যাজম্যাট স্যুট বা কভারঅল এবং ভেন্টিলেটর মজুত করেনি। এই অভিযোগ আগেই উঠেছে। এ বার করোনাভাইরাস টেস্টিং কিটের জোগান নিয়েও মোদী সরকারের দিকে গুরুতর অভিযোগের আঙুল উঠল। বিরোধী তথা শিল্প মহলের অভিযোগ, স্বাস্থ্য মন্ত্রক এমন ভাবে নির্দেশিকা জারি করেছে, যাতে মোদী-অমিত শাহের গুজরাতের একটি মাত্র সংস্থা তাদের তৈরি করোনার টেস্টিং কিট বাজারে বিক্রি করতে পারবে।

Advertisement

মাস্ক, ডাক্তারদের কভারঅলের, নার্সদের পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট-এর ক্ষেত্রে অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার এই সব জিনিস দেশে যত বেশি সম্ভব মজুত করতে বলা সত্ত্বেও পাঁচ দিন আগে পর্যন্ত মাস্ক, ভেন্টিলেটর, কভারঅল তৈরির কাঁচামাল বিদেশে রফতানি করার ব্যাপারে খোলা ছুট দিয়ে রেখেছিল মোদী সরকার। ডাক্তারদের শরীর ঢাকার কভারঅল তৈরির মাপকাঠি ঠিক করতেই বস্ত্র মন্ত্রক এক মাসের বেশি সময় নিয়ে নেয়। কংগ্রেস দাবি তুলেছে, এই অপদার্থতার জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল ও বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে বরখাস্ত করা হোক।

করোনাভাইরাসের টেস্টিং কিটের ক্ষেত্রে কী অভিযোগ?

Advertisement

শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রক নির্দেশিকা জারি করে, শুধু মাত্র আমেরিকা ও ইউরোপের সংস্থার দ্বারা অনুমোদিত টেস্টিং কিটই এ দেশে ব্যবহার করা যাবে। সে ক্ষেত্রে গুজরাতের কোসারা ডায়গনস্টিকস সংস্থাই একমাত্র এ দেশে টেস্টিং কিট বেচতে পারবে। মেহুল সারাভাইয়ের এই সংস্থা আমেরিকার একটি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমদাবাদ সফরের সময় মেহুলের বাবা কার্তিকেয় সারাভাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনেই মেলানিয়া ট্রাম্পকে উত্তরীয় পরিয়েছিলেন। সে ছবিও আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, “২০ মার্চ সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন ও পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি ১৪টি সংস্থাকে করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট বানানোর টেস্ট লাইসেন্স দিয়েছিল। কিন্তু পরের দিন, ২১ মার্চ স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে শর্ত জারি করে, তাতে শুধু মাত্র গুজরাতের একটি সংস্থাকেই অনুমোদন দেওয়া হল কেন? প্রধানমন্ত্রী কি এর উত্তর দেবেন?” মোদীকে চিঠি লিখে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর দাবি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি যে সব কিটের অনুমোদন দিয়েছে, তাদেরও জোগানের অনুমতি দেওয়া হোক। দেশের ডায়গনস্টিক ম্যানুফ্যাকচারার্স-দের অ্যাসোসিয়েশনও জানিয়েছে, তারা এ নিয়ে সরব হবে।

গুজরাতের কোসারা সংস্থা জানিয়েছে, তাদের কারখানায় দিনে ১০ হাজার টেস্টিং কিট তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন বেসরকারি ল্যাবেও করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের একটি সংস্থা জোগান দিয়ে উঠতে পারবে না। ডাক্তারদের সুরক্ষার সামগ্রী বা পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইপমেন্ট (পিপিই) কিট সরবরাহের ক্ষেত্রেও একটি মাত্র সংস্থাকে ছাড়পত্র দেওয়ার ফলে সারা দেশে এর অভাব দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এইচএলএল হেলথকেয়ার লিমিটেড অন্যান্য সংস্থা থেকে এই কিট কিনে সরবরাহ করে। ডাক্তারদের অভিযোগ, এইচএলএল এখন বেশি দামে কিট বেচছে। অন্যান্য সংস্থার থেকে কিনে আবার বাকি দেশে সরবরাহ করতেও দেরি হচ্ছে।

আজ নতুন নির্দেশিকা জারি করে ভেন্টিলেটর ও স্যানিটাইজ়ার রফতানি বন্ধ করেছে কেন্দ্র। করোনাভাইরাসের দাপট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এমনিতেই বাজারে মিলছে না। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, এগুলি রফতানিতে এত দেরি কার স্বার্থে?

দিল্লির এমসের আবাসিক ডাক্তাররা গত সপ্তাহেই হাসপাতালের ডিরেক্টরকে চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাঁদের প্রয়োজন মতো সুরক্ষা কিট মিলছে না। দেশের অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল থেকেও একই অভিযোগ উঠছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী আজ রোহতকের এক সরকারি ডাক্তার কামনা কক্করের টুইট তুলে ধরেছেন। কক্কর বলেছেন, এন-৯৫ মাস্ক পেলে যেন তাঁর কবরে পৌঁছে দেওয়া হয়! সেখানে থালি ও তালিও বাজানো যেতে পারে। রাহুল বলেন, “আমি ব্যথিত। এটা এড়ানো যেত। আমরা এই বিপদকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে, আরও ভাল প্রস্তুতি নিতে পারতাম।” তার মধ্যে এ দিুনই ডাক্তার এবং নার্সদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও বস্ত্র মন্ত্রক যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, জানুয়ারির শেষ থেকে ডাক্তারদের সুরক্ষা সামগ্রী তৈরির বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ মতো মাপপাঠি মেনে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তা চূড়ান্ত করতে ৩ মার্চ পর্যন্ত সময় লাগে। কংগ্রেসের সুরজেওয়ালার প্রশ্ন, “শুধু মাপদণ্ড ঠিক করতেই বস্ত্র মন্ত্রক ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ, ৩১ দিন সময় নষ্ট করেছে! প্রধানমন্ত্রী কি আদৌ জানেন, দেশে এখন ৭ লক্ষ ২৫ হাজার হ্যাজম্যাজ স্যুট বা কভারঅল প্রয়োজন? ৬০ লক্ষ এন-৯৫ মাস্ক প্রয়োজন ডাক্তারদের জন্য? সার্জিকাল মাস্ক ১ কোটি প্রয়োজন? অথচ এর কোনওটাই পাওয়া যাচ্ছে না! কেন ১৯ মার্চ পর্যন্ত মাস্ক, কভারঅলের কাঁচামাল ১০ গুণ বেশি দামে রফতানির অনুমতি দেওয়া হল? প্রধানমন্ত্রীর কথায় সবাই ডাক্তার-নার্সদের ধন্যবাদ জানিয়ে হাততালি দিয়েছেন। কিন্তু মোদী সরকার তাঁদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী, শুশ্রুষার যন্ত্রপাতি পর্যন্ত দিতে পারেনি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement