নরেন্দ্র মোদী।ছবি এএফপি।
করোনাভাইরাস এবং তার মোকাবিলা ব্যতীত দেশে গত এক সপ্তাহ ধরে কোনও আলোচনা নেই। দেশের বেহাল অর্থনীতি, সিএএ নিয়ে সার্বিক অসন্তোষ— সব চাপা পড়েছে এই ত্রাসের নীচে। রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এই পরিস্থিতি নরেন্দ্র মোদী সরকারের জন্য শাপে বর হয়েছে। মোদী নিজেও এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি উদ্ধারে নেমে পড়েছেন।
গত ক’দিনে সিএএ-এনসিআর-এনপিআর বিরোধী আন্দোলন থেকে প্রচারের আলো সরে গিয়েছে। দিল্লির সংঘর্ষে মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা থেমেছে। তলানিতে ঠেকা বৃদ্ধি, চড়া বেকারত্ব, এমনকি সাম্প্রতিক ইয়েস ব্যাঙ্ক সঙ্কট নিয়েও বিশেষ উচ্চবাচ্য শোনা যাচ্ছে না। যা বিপুল স্বস্তি দিয়েছে মোদী, অমিত শাহদের। এমনকি দেশীয় অর্থনীতির যাবতীয় সমস্যার দায়ও এখন করোনাভাইরাসের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
এই পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস মোকাবিলার বিষয়টিকে সামনে রেখে বিশ্বের একাধিক দেশ এবং সার্ক অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলির সামনে নেতৃত্বের আসনে বসতে সক্রিয় হয়েছেন মোদী। সেই সঙ্গে করোনা মোকাবিলা নিয়ে মোদী তথা তাঁর টিম কীভাবে ঝাঁপিয়েছে, সেটি নিয়েও প্রচার শুরু করেছে। বিজেপি মিডিয়া সেল বিষয়টিকে লুফে নিয়েছে। দেশের বেশির ভাগ রাজ্যই এখন অবিজেপি শাসিত। সিএএ-এনআরসি নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে মোদীর টানাপড়েন চলছিলই। কিন্তু করোনা-আতঙ্কে পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। আগামিকাল সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করবেন মোদী। মাসখানেক আগেও যা ছিল এক অসম্ভব ঘটনা।
তবে মোদী এবং তাঁর দল যাতে সব আলো কেড়ে নিতে না পারেন, তার জন্য বিরোধী দলগুলিও পাল্টা সক্রিয়। করোনা প্রতিরোধে সরকার যথেষ্ট সক্রিয় হচ্ছে না বলে অভিযোগ তোলার চেষ্টা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। কিন্তু যে সঙ্কটে সারা পৃথিবী বিপর্যস্ত, দেশ টালমাটাল, তাকে ঘিরে লাগাতার সরকারকে আক্রমণ করলে রাজনৈতিক লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। সেটাও মাথায় রাখছেন বিরোধীরা।
তবে সংসদ চলাকালীন প্রধানমন্ত্রীর টিভিতে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ার সমালোচনা করেছে কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বামেরা। তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন বলেছেন, ‘‘এই সিদ্ধান্ত সংসদকে অপমান করা। ওরা এমনটা প্রায়ই করে থাকে। যখন অধিবেশন চলছে তখন তাকে এড়িয়ে টেলিভিশনে দেশের প্রধানমন্ত্রী কী ভাবে বিবৃতি দিতে পারেন?’’ একই ভাবে সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরিও মনে করেন, সংসদ চলাকালীন বাইরে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ার ঘটনা অত্যন্ত আপত্তিজনক। এটি সংসদের অবমাননা ছাড়া কিছুই নয়।