প্রতীকী ছবি।
লকডাউনের জেরে কার্যত স্তব্ধ গোটা দেশ। শিল্প, কল-কারখানা কার্যত তালাবন্ধ। কাজ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ধুঁকছে শেয়ার বাজার। সব মিলিয়ে করোনাভাইরাসের থাবা যে ভারতীয় অর্থনীতিতে ভয়ানক প্রভাব ফেলবে, এমন আশঙ্কা ছিলই। এ বার মুডিজ ইনভেস্টর্স সার্ভিসেসও সেই ইঙ্গিত দিল। ভারতে ২০২০ সালে প্রস্তাবিত জিডিপি বৃদ্ধির হার অর্ধেকেরও কমে নামিয়ে আনল এই সমীক্ষক সংস্থা। তাদের ভবিষ্যদ্বাণী, এ বছর আর্থিক বৃদ্ধির হার হবে ২.৫ শতাংশ। নভেম্বরে এই সংস্থাই ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫.৩-এ রেখেছিল। একইসঙ্গে বিশ্বঅর্থনীতির বৃদ্ধির হারেও কাটছাঁট করেছে মুডিজ।
বুধবার সারা দেশে তিন সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার জেরে বিমান পরিবহণ, রেল স্তব্ধ। সরকারি-বেসরকারি বাসও চলাচল কার্যত স্তব্ধ। দক্ষিণ আফ্রিকাও ভারতের মতোই তিন সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেছে। মুডিজের বক্তব্য, ‘‘ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার যে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে, তার জন্য, আমরা মনে করি, দু’দেশের অর্থনীতিই ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারতের জন্য এখন প্রস্তাবিত বৃদ্ধির হার ২.৫ শতাংশ। তবে আগামী বছর এই এই বৃদ্ধির হার হতে পারে ৫.৮ শতাংশ।’’
শুক্রবারই ‘গ্লোবাল ম্যাক্রো আউটলুক ২০২০-২১’ প্রকাশ করেছে মুডিজ। সেই সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে সাধারণ মানুষের আয় ব্যাপক হারে কমবে। কারণ হিসেবে মুডিজের বক্তব্য, ‘‘ভারতের অর্থনীতিতে নগদের জোগানে ইতিমধ্যেই ব্যাপক টান পড়েছে। ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি নগদের সঙ্কটে ভুগছে।’’
আরও পড়ুন: করোনা আপডেট: আমেরিকায় আক্রান্ত বেড়ে ৮৫ হাজার, ছাপিয়ে গেল চিন, ইটালিকেও
বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রেও বৃদ্ধির হার কমার ইঙ্গিত দিয়েছে মুডিজ। গত বছরের নভেম্বরে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে এই সংস্থা জানিয়েছিল, বিশ্ব অর্থনীতির সম্ভাব্য বৃদ্ধির হার হতে পারে ৩.২%। কিন্তু চিন, ইটালি, স্পেন, আমেরিকা-সহ বিশ্বের প্রায় সব দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করল মুডিজ। তাদের মতে এখন যে পরিস্থিতি তাতে বৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ২.৬ শতাংশে। অর্থাৎ আরও ০.৫ শতাংশ কম হতে পারে।
সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, ‘‘করোনাভাইরাসের ধাক্কায় ২০২০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি বৃদ্ধির পূর্বাভাস নিম্নমুখী করা হয়েছে। করোনাভাইরাস যেহেতু সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, আমাদের পূর্বাভাসেও তাই কাটছাঁট করা হয়েছে। লকডাউন-সহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বিভিন্ন দেশ যে সব পদক্ষেপ করেছে, তার প্রভাব সব দেশের অর্থনীতিতেই পড়েছে।’’
আরও পড়ুন: করোনা মোকাবিলায় ৭৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমাল আরবিআই
করোনাভাইরাসের প্রকোপে যে ভাবে বিশ্ব অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে, তাকে ২০০৮-’০৯ সালের মন্দার সঙ্গে তুলনা টেনে মুডিজ বলেছে, ‘‘আর্থিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ২০০৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার সময়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’