টেলি কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি টুইটার থেকে।
দেশে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা। বুধবার দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের সংসদীয় নেতাদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে এমন ইঙ্গিতই দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এ দিনের ওই ভিডিয়ো বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন। সংসদীয় নেতাদের কাছ থেকেও তিনি জানতে চান, তাঁদের কী অভিজ্ঞতা এবং করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাঁদের কী পরামর্শ।
সূত্র্রের খবর, পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক ওই নেতাদের বলেন, ‘‘গোটা দেশ এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অনেকটা জাতীয় জরুরি অবস্থার মতো পরিস্থিতি। সেখানে দেশের প্রয়োজনে, দেশবাসীর প্রয়োজনে বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।” এ দিন ভিডিয়ো কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘সবার পরামর্শ শুনে মনে হচ্ছে, লকডাউন প্রত্যাহার করা খুব একটা সহজ নয়। আমাদের আধিকারিকরা জেলা স্তর পর্যন্ত যোগাযোগ রাখছেন। সেখান থেকেও যে অভিজ্ঞতার কথা জানা যাচ্ছে বা গোটা বিশ্বের যা অভিজ্ঞতা তাতে, লকডাউনেই সবাই আস্থা রেখেছেন করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। মানুষের প্রাণ রক্ষা করতে।”
আরও পড়ুন: দেশে প্রথম: ১৫ জেলায় হটস্পটগুলি সিল করছে যোগী সরকার
অনেক রাজ্য থেকেই প্রধানমন্ত্রীকে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির অনুরোধ করা হয়েছে। মোদী এ দিন সংসদীয় নেতাদের জানান, তিনি লকডাউনের বিষয় নিয়ে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলবেন। সূত্রের খবর, আগামী শনিবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক হবে প্রধানমন্ত্রীর। ওই বৈঠকের পরেই লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সূত্রের খবর।
দেখুন ভিডিয়ো:
এ দিন প্রধানমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে এবং পরে যেমন গোটা বিশ্বে মানুষের জীবনযাত্রা বদলে গিয়েছে, তেমনই করোনা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সময়ে গোটা বিশ্বে মানুষের জীবনযাপনে বিরাট বদল আসবে। কর্ম সংস্কৃতির বদল আসবে। সামগ্রিক জীবনে পরিবর্তন আসবে।” বর্তমান পরিস্থিতিকে সামাজিক জরুরি অবস্থা বা সোশ্যাল ইমারজেন্সি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আরও পড়ুন: এ বার হু-কে তোপ ট্রাম্পের, অর্থ সাহায্য বন্ধের হুঁশিয়ারি
মোদী এ দিন করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে তা কাটিয়ে ওঠার কথাও বলেন। এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ, শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার-সহ বিএসপি, লোকজনশক্তি পার্টির সাংসদরাও।
সুদীপ এ দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতেই রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়ার কথাও জানান। করোনা পরিস্থিতিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগেই কেন্দ্রের কাছে ২৫ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। সেই দাবিই এ দিন ফের তুলে ধরেন সুদীপ। পাশাপাশি কেন্দ্রের কাছে পাওয়া ৩৬ হাজার কোটি টাকার কথাও ফের এক বার প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দেন সুদীপ। সেই সঙ্গে লকডাউনের মধ্যে বা পরে বেসরকারি ক্ষেত্রে ছাঁটাই নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। সুদীপ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর বার্তা দেওয়া উচিৎ যাতে কর্মী ছাঁটাই না হয়।”
দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করার দাবিও জানানো হয় তৃণমবল কংগ্রেসের তরফ থেকে। সুদীপ আগামী ২ বছরের জন্য এমপি ল্যাড বন্ধ রাখার যে সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন তা পুনর্বিবেচনা করতে বলেন। তিনি বলেন, ‘‘সাংসদ বেতনের ৩০ শতাংশ কেন আরও বেশি দিতে আমরা তৈরি। কিন্তু সাংসদ তহবিলের টাকা বন্ধ হয়ে গেলে বহু উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ক্ষতি হবে।”
এ দিন মোদী সুনির্দিষ্ট ভাবে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হবে বলে মন্তব্য না করলেও, তাঁর বক্তব্যে জোরাল ইঙ্গিত রয়েছে যে, লকডাউন এই মুহূর্তে প্রত্যাহার করা প্রায় অসম্ভব। গত ২৪ মার্চ থেকে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হয়। আগামী ১৪ এপ্রিল মধ্য রাতে প্রথম দফার ২১ দিনের লকডাউনের মেয়াদ শেষ হবে।