দিল্লির করোনা সংক্রমণের জন্য নিজামুদ্দিনের জমায়েতকেই দায়ী করল দিল্লি সরকার।—ছবি পিটিআই।
কেন্দ্রের ধাঁচেই দিল্লির করোনা সংক্রমণের জন্য তবলিগি মারকজের জমায়েতকে দায়ী করল দিল্লি সরকার। আজ দিল্লি সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন জানান, দিল্লিতে এ যাবৎ ৬৬৯ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ৪২৬ জনের সঙ্গে তবলিগি জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। গত কাল দিল্লিতে ৯৩ জন নতুন করে সংক্রমিত হন। জৈনের মতে, দিল্লিতে জরুরি অবস্থা জারি করার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এত দিন কেন্দ্র যে ভাবে দাবি করে এসেছে, তবলিগি জামাতের ঘটনা না ঘটলে গোটা দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা এ ভাবে বৃদ্ধি পেত না, কতকটা সেই সুরেই আজ দিল্লি সরকারের দাবি, নিজামুদ্দিন জমায়েত নিয়ে আগেই সক্রিয় হলে দিল্লিতে এ ভাবে সংক্রমণের ঘটনা বাড়ত না। সক্রিয় হতে বাধা কোথায় ছিল, সে প্রশ্নের অবশ্য উত্তর কোনও পক্ষই দেননি।
এখন দিল্লি সরকারের আশঙ্কা, নিজামুদ্দিন-সহ যে কুড়িটি হটস্পট এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলিতে ঢালাও পরীক্ষা শুরু হলে আরও করোনাআক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যাবে। সে কারণে হটস্পটগুলিতে প্রচুর সংখ্যায় পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যেই তারা কেন্দ্রের কাছে এক লক্ষ অ্যান্টিবডি কিট চেয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি ভাবে আরও কয়েক লক্ষ কিট সংগ্রহের কাজ চলছে। সত্যেন্দ্র জৈন জানান, কিট হাতে পেলে সবার আগে হটস্পটগুলিতেই পরীক্ষা শুরু হবে। তার পরে অন্যত্র।
সম্প্রতি দিল্লির গুলাবি বাগ এলাকার একটি সরকারি স্কুলকে কোয়রান্টিন শিবির বানিয়ে সেখানে প্রায় ১২০ জন তবলিগ সদস্যকে রেখেছিল সরকার। সেখান থেকে তিন জন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ধরা পড়েন। এতে ওই এলাকায় সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে সরব স্থানীয় বাসিন্দারা। গুলাবি বাগ এলাকায় মূলত দিল্লি সরকারের কর্মীদের আবাসন রয়েছে। গুলাবি বাগ রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সঞ্জীব ভরদ্বাজ এর মধ্যে উপরাজ্যপাল অনিল বৈজলকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, গুলাবি বাগ এলাকার ফ্ল্যাটে প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দা থাকেন। যে স্কুলে জামাত সদস্যদের রাখা হয়েছে, তা একেবারে ফ্ল্যাটগুলির মাঝখানে। ইতিমধ্যেই ওই কোয়রান্টিন শিবির থেকে দু-তিন জন পালানোর চেষ্টা করেছেন। এতে সংক্রমণ আরও ছড়াতে পারে বলে জামাত সদস্যদের কম ঘিঞ্জি এলাকায় সরানোর দাবি জানানো হয়েছে।
আজ থেকেই হটস্পটগুলি পুলিশ দিয়ে ঘিরে দিয়েছে প্রশাসন। যাতে ওই এলাকায় কোনও ব্যক্তি বাড়ি থেকে বার হতে না পারেন। গত কাল দিল্লির কুড়িটি স্থানকে হট স্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছিল কেজরীবাল সরকার। আজ সকালে পূর্ব দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ এক্সটেনশনের ময়ূরধ্বজ আবাসন, পাণ্ডব নগরের নয় নম্বর গলি কার্যত সিল করে দেয় পুলিশ। বন্ধ করে দেওযা হযেছে মান্ডি হাউস সংলগ্ন বেঙ্গলি মার্কেট এলাকাও। ওই এলাকায় বেঙ্গলি পেস্ট্রি শপ অ্যান্ড স্ন্যাক্স বার-এর দোকানের ছাদে ঘিঞ্জি পরিবেশে ৩৫ জন কর্মী লকডাউনের শুরু থেকে রয়ে যাওয়ায় সংক্রমণের আশঙ্কায় ওই এলাকাটিও সিল করেছে দিল্লি প্রশাসন। দোকানের মালিকের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দোকান কর্তৃপক্ষ পাল্টা দাবি করেছেন, আচমকা লকডাউন শুরু হওয়ায় ভিন রাজ্যের ওই শ্রমিকদের নিজেদের রাজ্যে ফিরে যাওয়ার উপায় ছিল না। সে কারণে ছাদেই তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত পঞ্জাবের এক ব্যবসায়ী বেঙ্গলিমল লোহিয়া ১৯৩০ সালে কনট প্লেসের কাছে ওই বাজারটির গোড়াপত্তন করেছিলেন। ওই ব্যক্তির নাম থেকেই এলাকাটির নাম দাঁড়ায় বেঙ্গলি মার্কেট। এর পশ্চিমবঙ্গ বা বাঙালিদের কোনও সম্পর্ক নেই।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)