গত পাঁচ দিন ধরে ভারতে যে সংখ্যক নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে তা বিশ্বে সর্বোচ্চ। গ্রাফিক-শৌভিক দেবনাথ।
যে কোনও দিন যে ব্যাপারটা ঘটতে চলেছে, বলেই রেখেছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। আজ তা ঘটেই গেল। মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে বিশ্ব-তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল ভারত।
আজ মাঝরাতে ‘ওয়ার্ল্ডোমিটার্স’ দেখাচ্ছে, ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। মৃতের সংখ্যাও পেরিয়েছে ৭০ হাজার। আজ ভারত দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসার পরে তিন নম্বরে নেমে গিয়েছে ব্রাজিল। সে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০.৯৩ লক্ষ। শীর্ষে থাকা আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪ লক্ষেরও বেশি।
করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ লক্ষ থেকে ৪০ লক্ষে পৌঁছতে মাত্র ১৩ দিন সময় লেগেছে ভারতের। আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় গত কালই দেশে মোট সংক্রমণ ৪০ লক্ষ পেরিয়েছিল। প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড হারে বাড়ছে সংক্রমণ। সকাল ৮টা পর্যন্ত পরিসংখ্যান দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক আজ জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬ হাজার ৪৩২ জন। কেন্দ্র তখন জানিয়েছিল, দেশে মোট করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ লক্ষ ২৩ হাজার ১৭৯। মৃত ৬৯ হাজার ৫৬১। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৮৯ জনের। সুস্থতার হার ৭৭.২৩ শতাংশ।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
দিল্লিতেও গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৯৭৩ জন, গত ৭১ দিনের মধ্যে যা সর্বাধিক। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের অবশ্য বক্তব্য, দিল্লির পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। আজ তিনি বলেছেন, ‘‘রাজধানীতে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, কারণ প্রতিদিন অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে। আপ সরকার শহরে করোনা-পরীক্ষার হার দ্বিগুণ করেছে। এ ভাবেই আমরা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছি।’’
আরও পড়ুন: স্বামীর খোঁচার পরে মুখে কুলুপ নির্মলার
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
কেজরী জানিয়েছেন, দিল্লিতে কোভিডে মৃত্যুর হার ০.৫ শতাংশ, যা জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেকটাই কম। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘গত কাল ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সংখ্যায় যা সামান্য হলেও এক জন মানুষেরও মৃত্যু কাম্য নয়। জুনে এই সংখ্যাটা ছিল একশোর বেশি। আজ মৃত্যুর সংখ্যা আরও কমেছে।’’ কেজরীবাল জানান, দিল্লির হাসপাতালগুলিতে কোভিড রোগীদের জন্য বরাদ্দ ৭০ শতাংশ শয্যা খালি রয়েছে। ৩০ শতাংশ ভর্তি এবং সেখানেও ৫০০০ শয্যার মধ্যে ১৬০০-১৭০০ শয্যায় অন্য রাজ্যবাসীরা আছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজধানীর স্কুলগুলি ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা দফতর। কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাইরে স্কুল হলে নবম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা শিক্ষকদের পরামর্শের জন্য পালা করে স্কুলে যেতে পারবে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
এ দিকে, মাস্ক পরলেও দস্তানা না-পরে বিতর্কে জড়িয়েছেন করোনা-আক্রান্ত গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সবন্ত। গৃহ-নিভৃতবাসে থাকা অবস্থায় গত কাল তাঁর ছবি প্রকাশ করেছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর। যেখানে দেখা যাচ্ছে খালি হাতেই সরকারি ফাইল নিয়ে কাজ করছেন প্রমোদ। গোয়া প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির বক্তব্য, আক্রান্ত মুখ্যমন্ত্রী ওই ফাইলে হাত দিয়েছেন। ফলে সেখান থেকে বাকি সরকারি আমলা ও কর্মীদের মধ্যে করোনা ছড়াতে পারে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
উত্তরপ্রদেশে আজ দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬৯২ জন। রাজধানী লখনউতেই নতুন করে ১ হাজারের বেশি সংক্রমণ ধরা পড়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে শনিবার আক্রান্ত হয়েছেন ১১২৫ জন, দৈনিক সংক্রমণের রেকর্ড অনুযায়ী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটিতে যা সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় জম্মু-কাশ্মীরে মৃত্যু হয়েছে আরও ১৫ জনের।
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)