গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬৬ হাজার ৯৯৯ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
দেশে ২৪ ঘণ্টায় নতুন কোভিড রোগীর সংখ্যা দু’দিন আগে ৫৫ হাজারের নীচে নেমে যাওয়ায় কিছুটা আশা দেখেছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। এ দিন পুরনো গতিতেই ফের ‘রেকর্ড’ সংক্রমণ হল। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় সংক্রমিতের সংখ্যা ৬৭ হাজারের থেকে মাত্র ১ কম। সরকারি পরিসংখ্যানে না-হলেও আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় ভারতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা আজ ২৪ লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে।
প্রথম তিনে থাকা আমেরিকা, ব্রাজিল ও ভারতে দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধির হিসেবের একটি অ্যানিমেশন-সহ রাহুল গাঁধী টুইটারে লিখেছেন, ‘‘করোনার বৃদ্ধির লেখচিত্র ‘ফ্ল্যাট’ তো হচ্ছেই না, বরং ভয় দেখাচ্ছে।’’ ওই লেখচিত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা দুই দেশকে দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধির হিসেবে কী ভাবে ক্রমশ ছাপিয়ে গিয়েছে ভারত। এ দেশে যে সময়ের মধ্যে ৬৬,৯৯৯ জনের করোনা ধরা পড়েছে, তখন ব্রাজিলে সংক্রমিত হয়েছেন ৫৮,০৮১ জন। আমেরিকায় ৫৪,৩৪৫ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
রাহুলের এই অ্যানিমেশনের নেপথ্যে চলছে মোদীর বক্তৃতার অংশ, যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘‘ঠিক সময়ে ঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেই ভারতের অবস্থা অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেকটা স্থিতিশীল।’’ আজ রাহুলের প্রশ্ন, ‘‘এই যদি স্থিতিশীল অবস্থা হয়, তা হলে খারাপ অবস্থাটা কী?’’
এ দিনও অবশ্য কেন্দ্র দাবি করেছে, সুস্থতা এবং মৃত্যুহারের নিরিখে অন্য অনেক দেশের চেয়েই ভাল অবস্থায় রয়েছে ভারত। মৃতের মোট সংখ্যা ৪৭ হাজার পেরোলেও মৃত্যুহার কমে হয়েছে ১.৯৬ শতাংশ। সুস্থতার হার এ দিন ৭০.৭৭ শতাংশে পৌঁছেছে। মোট সুস্থের সংখ্যা ১৭ লক্ষ পেরিয়েছে। তার ফলে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা মোট আক্রান্তের সংখ্যার মাত্র ২৭.২৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। )
গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে রেকর্ড সংখ্যক ৮,৩০,৩৯১টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। মোট পরীক্ষা দাঁড়িয়েছে ২.৬৮ কোটি। প্রতি দশ লক্ষে ১৯,৫৪৩ জনের পরীক্ষা হচ্ছে। কেন্দ্রের বক্তব্য, জানুয়ারিতে দেশে যখন বড়জোর একটি ল্যাবে পরীক্ষা হচ্ছিল, সেখানে এখন সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১৪৩৩টি ল্যাব রয়েছে। ১১ মার্চ থেকে রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে ৩.০৪ কোটি এন-৯৫ মাস্ক এবং ১.২৮ কোটির বেশি পিপিই বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে বলে আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে। এর পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে ১০.৮৩ কোটি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট এবং ২২,৫৩৩টি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ ভেন্টিলেটর।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
করোনার চিকিৎসায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রেমডেসিভিয়ার। ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা জ়াইডাস ক্যাডিলা আজ জানিয়েছে, ভারতের মধ্যে সব চেয়ে কম দামে রেমডেসিভিয়ার বাজারে এনেছে তারা। ‘রেমডাক’ ব্র্যান্ড-নামে তাদের এই ওষুধের ১০০ মিলিগ্রামের একটি ভায়ালের দাম রাখা হয়েছে ২৮০০ টাকা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে এই দামেই ওষুধটি সরবরাহ করবে তারা। এর আগে আরও চারটি সংস্থা ভারতের বাজারে নিজস্ব ব্র্যান্ডের রেমডেসিভিয়ার এনেছিল। ইদানীং ওষুধটির সরবরাহে টান পড়েছে বলে শোনা যায়। তার পরেই জ়াইডাস ক্যাডিলার এই ঘোষণা।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)