ছবি: এপি।
করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক দ্রুত আবিষ্কারের লক্ষ্যে গবেষণায় গতি বাড়িয়েছে আমেরিকা ও রাশিয়া। একই পন্থা নিয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কারের ‘পবিত্র’ কাজটির জন্য ভারতেও ‘ফাস্ট-ট্র্যাক’ নীতিতে গবেষণার কাজ চলছে বলে জানাল স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীনস্থ ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)।
সময়সীমা বেঁধে প্রতিষেধক আবিষ্কারের ‘ফরমান’ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশ অসন্তুষ্ট হলেও আজ আইসিএমআরের ডিজি বলরাম ভার্গব বলেছেন, ‘‘ওই পবিত্র কাজটি যাতে দ্রুত হয়, যাতে এক দিনও সময় নষ্ট না-হয়, তার জন্য ফাস্ট-ট্র্যাকিং করা হচ্ছে।’’ সূত্রের মতে, আইসিএমআরের একটি অংশ এখনও পুরনো সময়সীমা মেনে ১৫ অগস্টের মধ্যে টিকা আবিষ্কারের প্রশ্নে বদ্ধপরিকর। তাই সেই মতোই প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে আইসিএমআর।
হায়দরাবাদের সংস্থা ভারত বায়োটেকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাত্র পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে করোনার টিকা আবিষ্কারের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছিল আইসিএমআর। এ নিয়ে প্রবল সমালোচনা শুরু হলে আইসিএমআর জানায়, কাজ যাতে দ্রুত এগোয়, সেই জন্যই সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ওই গবেষণা কোথায় পৌঁছেছে, সেই প্রসঙ্গে আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাংবাদিক বৈঠকে ভার্গব বলেন, ‘‘ভারতের দু’টি সংস্থাকে মানবদেহে টিকা প্রয়োগের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ওই দুই সংস্থা ইঁদুর ও খরগোশের মতো প্রাণীর দেহে তাদের টিকার প্রভাব খতিয়ে দেখেছে। সেই ফলের ভিত্তিতেই মানবদেহে টিকা প্রয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই)।’’ আইসিএমআর জানিয়েছে, দেশের অন্তত বারোটি কেন্দ্রে মানবদেহে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রায় হাজার জন স্বেচ্ছাসেবককে বেছে নেওয়া হয়েছে। ভার্গব বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই গোটা বিশ্বে যখন পাঁচ লক্ষ মানুষ করোনা-সংক্রমণে মারা গিয়েছেন, তখন গবেষকদের নৈতিক দায়িত্ব হল, যত দ্রুত সম্ভব ওই প্রতিষেধক তৈরি করা। সেই কারণেই টিকা তৈরির কাজে গতি আনা খুব জরুরি।’’
আরও পড়ুন: শুধু কন্টেনমেন্টে নয়, কড়া লকডাউন চালুর নির্দেশ বেশ ক’টি জেলা শহরে
বিশেষজ্ঞেরা যদিও বলছেন, ফাস্ট-ট্র্যাকিংয়ের অর্থই হল— যে প্রতিষেধক তৈরি করতে দেড় বছরের মতো সময় লাগত, তা সময় কমিয়ে কয়েক মাসে তৈরি করা। কিন্তু এ ভাবে সময় কমানো হলে মানের সঙ্গে আপস করার ঝুঁকি থেকেই যায়। ভারত বায়োটক নিজে যেখানে টিকা তৈরির জন্য অন্তত ৬৪ সপ্তাহ সময় চেয়েছিল, সেখানে সরকার পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে তা করতে চাইছে। এর ফলে যদি টিকা তৈরির ক্ষেত্রে সুরক্ষাজনিত সব ধাপ মানা না-হয়, তা হলে নিম্নমানের ভ্যাকসিনের বাজারে আসার সম্ভাবনা থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে। পরীক্ষার সময়ে স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে প্রথমে রোগের ভাইরাস প্রবেশ করানোর পরে টিকা প্রয়োগ করা হয়। সেই টিকা নিম্নমানের হলে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবক উপসর্গহীন ‘ক্যারিয়ার’-এ পরিণত হয়ে আরও সংক্রমণ ছড়াবেন বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
ভার্গবের যুক্তি, দ্রুত টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করা হলেও বিজ্ঞান, সুরক্ষাবিধি বা গবেষণার মানের সঙ্গে কোনও সমঝোতা করা হচ্ছে না। কিন্তু প্রতিটি ধাপে যে নির্দিষ্ট সময় লাগার কথা, তা কি উপেক্ষা করা হচ্ছে না? এই প্রশ্নে আইসিএমআর নীরব। ভারত একা যে টিকা আবিষ্কারে তড়িঘড়ি করছে না, সেই যুক্তি তুলে ধরেন ভার্গব বলেন, ‘‘রাশিয়া তাদের গবেষণা ফাস্ট-ট্র্যাক করেছে। একই পথে হেঁটেছে আমেরিকা ও চিন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত মানুষের ব্যবহারের জন্য টিকা বাজারে ছাড়তে চাইছে। সেই কারণে টিকা আবিষ্কারের মতো কাজে গতি আনাটা খুবই প্রয়োজন। ওই কাজ যাতে দ্রুত হয়, লাল ফিতের ফাঁসে যাতে এক দিনও সময় নষ্ট না-হয়, সেটাই বিবেচ্য হওয়া উচিত।’’
টিকা কবে বাজারে আসবে, সেই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এড়িয়ে যান আইসিএমআর প্রধান।