আমদাবাদে করোনার চিকিত্সা। ছবি: এপি।
দেশে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় পরীক্ষা-পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অধীন সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর)। প্রবল শ্বাসকষ্টে ভুগছেন, বাছবিচার না-করে এমন রোগীদের পরীক্ষা শুরু হতেই অনেকের দেহে পাওয়া যায় নোভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি। রোগীরা জানান, তাঁরা অধিকাংশই সম্প্রতি বিদেশ সফর করেননি বা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসেননি। তা সত্ত্বেও করোনার উপস্থিতি মেলায় গোষ্ঠী-সংক্রমণের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত দিয়েছিল আইসিএমআর। কিন্তু আজ দেশে গোষ্ঠী-সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আইসিএমআরের ওই সমীক্ষা কতটা যুক্তিগ্রাহ্য, পরোক্ষে সেই প্রশ্ন তুলেছে খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রকই।
ভারতে নজিরবিহীন ভাবে গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন ৮৯৬ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, গত সোমবার যেখানে মৃতের সংখ্যা ছিল ১১১, সেখানে আজ তা হয়েছে ২০৬। অর্থাৎ প্রায় ১০০ জন মারা গিয়েছেন মাত্র চার দিনে! যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) নিজেদের পুরনো অবস্থান পাল্টে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সুরেই বলেছে, ভারতে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ হলেও এখনও গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হয়নি। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, বিশ্বের তুলনায় ভারতে করোনায় মৃত্যুর হার তিন শতাংশ কম।
সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস (এসএআরআই) বা প্রবল শ্বাসকষ্ট রয়েছে, এমন ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কি না, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত তা খতিয়ে দেখেছিল আইসিএমআর। ৫৯১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৪ জনের সংক্রমণ মেলে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই ১০৪ জনের মধ্যে ৪০ জন সাম্প্রতিক অতীতে বিদেশে যাননি বা কোনও সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসেননি। ওই ৪০ জন ১৫টি রাজ্যের ৩৬টি জেলায় ছড়িয়ে রয়েছেন। তার মধ্যে ৬টি জেলা পশ্চিমবঙ্গের। আইসিএমআরের দাবি, রাজ্যের পাঁচটি ল্যাবরেটরিতে এমন ২৫৬ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষার পরে দেখা গিয়েছে, ন’জন করোনায় আক্রান্ত। তাই ওই জেলাগুলিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তারা।
পাল্টা যুক্তিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, কেউ যদি রাস্তায় বেরিয়ে করোনায় সংক্রমিত হন, তাঁর ক্ষেত্রে ভাইরাসের উৎস জানা অসম্ভব। কাজেই আইসিএমআরের সমীক্ষার সময়ে প্রত্যেক আক্রান্তের ক্ষেত্রে কতটা গভীরে গিয়ে এই ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’-এর উৎস জানার চেষ্টা করা হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। সংক্রমিতের সংস্পর্শে এসেছেন, এমন এক জনও নজরদারির বাইরে গেলে বিপদ। এক জন কত জনকে সংক্রমিত করবেন, তা-ও বলা মুশকিল।
সমীক্ষা বলছে, ১৫ থেকে ২১ মার্চ যেখানে ১০৬ জন শ্বাসকষ্টের রোগীর মধ্যে দু’জনের কোভিড-১৯ পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে মার্চের শেষ সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছেন ২৮৭৭ জনের মধ্যে ৪৮ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়ালের যদিও বক্তব্য, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৬,০০২ জনের নমুনা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, ৩০২ জন আক্রান্ত। গোষ্ঠী-সংক্রমণ হলে এই সংখ্যাটা আরও বাড়ত। আইসিএমআরের সমীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই সময়ে মূলত ‘হটস্পট’ থেকেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ‘হটস্পটে’ সংক্রমিতের সংখ্যাই বেশি থাকার সম্ভাবনা। তাতেও দেখা গিয়েছে, শ্বাসকষ্টে ভোগা ৫৯১১ রোগীর মধ্যে ১০৪ জন, অর্থাৎ ১.৮ শতাংশ করোনা-আক্রান্ত। ‘হটস্পট’-এর পাশাপাশি যে এলাকায় সংক্রমণ মেলেনি, সেখান থেকেও নমুনা সংগ্রহ করা হলে প্রকৃত ফল পাওয়া যেত বলে স্বাস্থ্য-কর্তাদের মত।
পঞ্জাবে ১ মে পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে রাজ্যে গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী অমরেন্দ্র সিংহ। ওই রাজ্যে গোষ্ঠী-সংক্রমণ প্রসঙ্গে লব বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক কিছু জানে না। গোষ্ঠী-সংক্রমণ হলে নিশ্চয়ই দেশবাসীকে জানানো হবে। কারণ সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা পদ্ধতি থেকে সাবধানতা— সবই ঢেলে সাজতে হবে। আজ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পি কে মিশ্রের নেতৃত্বে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন গোষ্ঠীর বৈঠকের পরে জানানো হয়, পিপিই-র উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)