নিজামউদ্দিনের বাংলাওয়ালা মার্কজের বাইরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন চিকিৎসকরা। ছবি: পিটিআই।
বছরের শুরু থেকে প্রায় ২ হাজার জন বিদেশি ধর্মপ্রচারক তবলিগ জামাতের জন্য এ দেশে এসেছিলেন। নিজামউদ্দিনের ধর্মীয় সভা থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঘটনার তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের শীর্ষ আধিকারিকরা।
দিল্লির ওই ধর্মীয় সভায় যাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁর মধ্যে ২৪ জনের শরীরে ইতিমধ্যেই করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। প্রাথমিক উপসর্গ দেখা দিয়েছে অন্তত ৩০০ জনের শরীরে। তার উৎস খুঁজতে গিয়েই স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তাদের প্রাথমিক ধারণা, বিদেশ থেকে আসা ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমেই ওই ২৪ জনের মধ্যে ছড়িয়েছে কোভিড-১৯।
দিল্লি পুলিশ ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে প্রাথমিক একটি রিপোর্ট দিয়েছে। সূত্রের খবর, সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, দিল্লির নিজামউদ্দিনে বাঙলাওয়ালে মরকজের সাত তলা বাড়ি থেকে ৪৪১ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কোভিড-১৯-এর প্রাথমিক উপসর্গ দেখা গিয়েছে। এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল বলেন, ‘‘এটা খুবই দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো কাজ হয়েছে। গোটা পৃথিবী জুড়েই মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রত্যেক ধর্মস্থানকেই যখন মানুষ এড়িয়ে যাচ্ছেন, তখন একটা গুরুতর বিধিভঙ্গের ঘটনা ঘটল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কত মানুষের ক্ষতি হয়েছে, এটা ভেবেই আমি আতঙ্কিত হয়ে উঠছি।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা আক্রান্ত বেড়ে ২৭, মৃত ৩, গৃহ-পর্যবেক্ষণে লাখেরও বেশি
জানা গিয়েছে, অনেকেই ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে নিজেদের গন্তব্যে ফিরে গিয়েছেন দিল্লি থেকে। এই মুহূর্তে তাঁদের চিহ্নিত করাই বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ওই জামাতে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণকারী এসেছিলেন তামিলনাড়ু থেকে। ওই রাজ্য থেকে এসেছিলেন প্রায় ৫০০ জন। উত্তরপ্রদেশ ইতিমধ্যেই ১৬০ জনকে চিহ্নিত করেছে, যাঁরা ওই ধর্মসভায় অংশগ্রহণ করেছেন। মহারাষ্ট্র থেকে ১০৯, মধ্যপ্রদেশ থেকে ১০৭, বিহার থেকে ৮৬ জন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৭৩ জন, তেলঙ্গানা থেকে ৫৫ জন, ঝাড়খণ্ড থেকে ৪৬ জন ওই ধর্মসভায় যোগ দিয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়াও, মেঘালয়, ওড়িশা, পঞ্জাব, রাজস্থান, আন্দামান, হিমাচল প্রদেশ থেকেও মানুষ গিয়েছিলেন ওই ধর্মসভায়। আন্দামানে ৯ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে যাঁরা ওই তবলিগে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রাথমিক একটি হিসাব অনুযায়ী, গত ২১ মার্চ নাগাদ বিদেশ থেকে আসা প্রায় ২ হাজার জন ধর্মপ্রচারকের মধ্যে ৮২৪ জন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েন। ২০০ জনের মতো থেকে গিয়েছিলেন দিল্লিতেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি, ওই ধর্মপ্রচারকরা সবাই ‘ভ্রমণ ভিসা’ নিয়ে এ দেশে এসেছিলেন। ধর্মপ্রচারের জন্য আইন অনুয়ায়ী ‘প্রচারক’ ভিসা দরকার। সেই আইন কেউ মানেননি। ওই ধর্মপ্রচারকদের চিহ্নিত করতে সমস্ত রাজ্যের পুলিশ অধিকর্তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে। সূত্রের খবর, ওই ধর্মপ্রচারকরা ভারতে আসার আগেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন, যেখানে কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ হয়েছে। অভিযোগ, চিনের উহানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর কোনও ধরনের সতর্কতা না মেনে ঘুরে বেড়িয়েছেন ওই ধর্ম প্রচারকরা এবং সেখান থেকেই তবলিগে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: এ বার বেলঘরিয়ার প্রৌঢ় করোনায় আক্রান্ত, নিয়ে যাওয়া হল আইডি-তে
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, ওই ধর্মপ্রচারকদের কালো তালিকাভুক্ত করবে সরকার যাতে, ভবিষ্যতে তাঁরা আর ভিসা না পান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বিদেশি ধর্মপ্রচারকদের অনেকেই ভারতে আসার আগে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুরের একটি তবলিগে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সে দেশের মোট কোভিড-১৯ আক্রান্তের অর্ধেকের হদিশ পাওয়া গিয়েছিল ওই তবলিগেই। এ ভাবেই তবলিগে আসা প্রচারকদের মাধ্যমে কোভিড-১৯ নিজামউদ্দিনেও ছড়িয়েছে। ফলে দ্রুত তবলিগে যোগদানকারীদের চিহ্নিত করে আইসোলেশনে রেখে পরীক্ষা না করলে, আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে গোষ্ঠী সংক্রমণের।