প্রতীকী ছবি।
“আমি তা হলে কবে পাব...”, বৃদ্ধের প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই খেঁকিয়ে উঠলেন প্রতিষেধক কেন্দ্রের কর্মী। রাগত ভাবে বললেন, ‘‘নিজে হিসেব করে নিন, কবে ১২ সপ্তাহ হচ্ছে আর কবে ১৬ সপ্তাহ হচ্ছে।’’
বৃদ্ধ কতটা কী বুঝলেন, বোঝা গেল না। হাতের গাঁট গুনতে গুনতে টিকা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা গেল কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ়ের প্রত্যাশী ওই বৃদ্ধকে। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের তরফে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ়ের নির্ঘণ্ট ফের বদল করার পরেই তীব্র সংশয়ে সাধারণ মানুষ। তাঁদের বক্তব্য, এত দিন জানতেন, ওই টিকার প্রথম ডোজ় নেওয়ার পরে দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য ৪২ দিন থেকে ৫৬ দিন পর্যন্ত সময় থাকে। সেই অনুযায়ী শুক্রবার অনেকেই হাজির হন স্থানীয় টিকা কেন্দ্রে। কিন্তু সর্বত্রই তাঁদের কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা শুনিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজ়রি গ্রুপ অন ইমিউনাইজ়েশন (এনটিএজিআই)-এর সিদ্ধান্ত অনুসারে সকলকে জানানো হয়, প্রথম ডোজ়ের পরে ৮৪ দিন (১২ সপ্তাহ বা তিন মাস) থেকে ১১২ দিন (১৬ সপ্তাহ বা চার মাস)-এর মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া যাবে।
কেন্দ্র বিষয়টি ঠিকমতো প্রচার না-করায় তাঁদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কলকাতার বিভিন্ন টিকা কেন্দ্রের কর্মীরা। কামারহাটি পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের বিদায়ী চেয়ারম্যান পারিষদ বিমল সাহা বলেন, ‘‘প্রতিষেধক কবে মিলবে, তা নিয়ে দীর্ঘদিনের সংশয় তো আছেই। তার সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজ় কবে দেওয়া হবে, তা নিয়েও একটা সংশয় যুক্ত হল। টিকা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীন আচরণের ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। উত্তর দিতে দিতে আমরা নাজেহাল হচ্ছি।’’ কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ় নিয়ে সংশয়ে থাকা লোকজন এ দিন কামারহাটি পুরসভার টিকা কেন্দ্রেও ভিড় করেন। কলকাতা পুরসভাও কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনও রাজ্যে কিছু জায়গায় ৪২ দিন আগে প্রথম টিকা নেওয়া লোকজনকে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজ, শনিবার থেকে দিল্লির বেঁধে দেওয়া নির্ঘণ্ট মেনেই সর্বত্র দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক। এ দিন অনেকেই অভিযোগ করেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় নির্ঘণ্ট মেনে কোউইন পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। ওই আধিকারিক বলেন, "কোউইন পোর্টালেও যাতে ওই নির্ঘণ্ট অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজ়ের স্লট বুক করা যায়, তার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।" অনেকের প্রশ্ন, পরিকল্পিত ভাবেই কি দু’টি ডোজ়ের মধ্যে ব্যবধান বাড়িয়ে জোগান বাড়ানোর সময় নেওয়া হল? এই অভিযোগ অস্বীকার করে কেন্দ্র বৃহস্পতিবারেই জানায়, বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতেই ১২-১৬ সপ্তাহ ব্যবধান রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রাজ্যে প্রতিষেধকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফেসিলিটেটর স্নেহেন্দু কোনার বলেন, ‘‘গবেষণায় কী জানা গিয়েছে, সেটা যদি আরও স্পষ্ট ভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরা হত, তা হলে সকলেই বুঝতে পারতেন। কিন্তু তা না-হওয়ায় মানুষের মনে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।’’ অন্য দিকে, ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শান্তনু ত্রিপাঠী বলছেন, ‘‘দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য ভারত সরকার ১২-১৬ সপ্তাহের নির্ঘণ্ট বেঁধে দিয়েছে। ১২ সপ্তাহের পরের সময়কালের বিষয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণের অভাব থাকলেও কানাডা, স্পেনের মতো কিছু দেশ কিন্তু ১২-১৬ সপ্তাহের ফারাক মেনে চলছে। বর্তমানে টিকার অপ্রতুলতার কারণে অন্তত প্রথম ডোজ়টি সব চেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষকে দেওয়ার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকতে পারে। বলা যেতে পারে, জনস্বার্থে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত।’’