— ছবি সংগৃহীত
সবাই বড় স্বার্থপর হয়ে উঠেছিল সেই সময়টায়। মানবিকতার ‘বিলাসিতা’ করার সময় ছিল না। ২৩ বছরের ভিকি যাদব জানেন, তিনি নিজেও ব্যতিক্রম নন। না-হলে মৃতদেহের পাশ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার তুলে এনে কেউ অপটু হাতে সেই অক্সিজেনে নিজের প্রিয়জনকে বাঁচানোর চেষ্টা করে?
ভিকি ঠিক সেটাই করেছিলেন। কিন্তু তাঁর দিদিমা সুগন্ধা থোরাটকে বাঁচাতে পারেননি। গত কাল নাসিকের ডক্টর জ়াকির হুসেন হাসপাতালে অক্সিজেন লিকের ফলে মৃত রোগীদের মধ্যে সুগন্ধাও রয়েছেন। হাসপাতালের প্রধান স্টোরেজ ট্যাঙ্ক থেকে অক্সিজেন লিক হওয়ার ফলে আধ ঘণ্টা ধরে অক্সিজেন সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পুর নিগম পরিচালিত এই কোভিড হাসপাতালে। মারা যান ভেন্টিলেটরে থাকা ২২ জন-সহ ২৪ জন রোগী।
ভিকি বলছিলেন, ‘‘এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এত মানুষকে চোখের সামনে মারা যেতে দেখাটা মর্মান্তিক। কিন্তু ভুলতে পারছি না অন্য একটা দৃশ্য। লোকে হুড়োহুড়ি করে মৃত রোগীদের শয্যার পাশ থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার তুলে এনে নিজেদের প্রিয়জনকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিল। আমিও সেই চেষ্টা করেছিলাম। কোনও লাভ হয়নি।’’ গত কাল সকাল ১০টা নাগাদ দিদিমাকে দেখতে হাসপাতালে এসেছিলেন ভিকি। দিদিমার অক্সিজেন স্যাচুরেশন তখন নেমে গিয়েছে ৩৮-এ। অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভিকি লক্ষ্য করেন, অক্সিজেন পাচ্ছেন না সুগন্ধা। তড়িঘড়ি হাসপাতালের কর্মীদের খবর দেন। তাঁরা এসে গোটা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখেন। ওই সময়েই জানা যায়, ট্যাঙ্ক থেকে অক্সিজেন লিক হচ্ছে।
হাসপাতালের চারতলায় মূলত আশঙ্কাজনক রোগীদের রাখা হয়েছিল। গ্যাস লিক ধরা পড়তেই হাসপাতালের কর্মীরা রোগীদের জন্য অক্সিজেনের জাম্বো সিলিন্ডার আনতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু এত জন আশঙ্কাজনক রোগীকে বাঁচাতে অক্সিজেনের যে তীব্র প্রবাহ সেই মুহূর্তে দরকার ছিল, সিলিন্ডারের মাধ্যমে তা জোগানো সম্ভব ছিল না।
ভিকির কথায়, ‘‘চার দিকে তখন হট্টগোল। ডাক্তার-নার্সেরা রোগীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আমরা, রোগীর আত্মীয়েরা ওয়ার্ডে ছোটাছুটি করছি। চেষ্টা করছি, মারা যাওয়া রোগীদের শয্যার পাশ থেকে যদি সিলিন্ডার তুলে আনা যায়!’’
এই বিপর্যয়ের মধ্যেই অসুস্থ প্রিয়জনকে অন্য হাসপাতালে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন অনেকে। নিতিন ওয়েলুকার আর তা পেরে ওঠেননি। তাঁর মা আর ভাই ভর্তি ছিলেন একই ওয়ার্ডে। নিতিন বলছিলেন, ‘‘সকালে যখন আমার ভাই প্রমোদের জন্য খাবার নিয়ে এলাম, তখন ও দিব্যি ছিল। দু’ঘণ্টার মধ্যে চোখের সামনে মারা গেল ৪৫ বছরের ছেলেটা। কিছু করতেও পারলাম না।’’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, তাঁদের কর্মীরা যথাসাধ্য করেছিলেন। গত কাল শতাধিক রোগীকে তাঁরা রক্ষা করেছেন। এক নার্স বলেন, ‘‘আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল। অন্যান্য হাসপাতাল থেকেও সিলিন্ডার কিনে আনা হয়েছিল। কিন্তু আশঙ্কাজনক অবস্থার রোগীদের বাঁচাতে যে ‘হাই-ফ্লো’ অক্সিজেন দরকার, সিলিন্ডারের মাধ্যমে তার ব্যবস্থা করা যায়নি। সেটাই তাঁদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।’’