প্রতীকী ছবি।
বস্তি এলাকাগুলিতে সাধারণ শৌচাগার থেকে করোনা-সংক্রমণের আশঙ্কা এখন চিন্তা বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। তা সে মুম্বইয়ের ধারাভি হোক, কিংবা কলকাতার তিলজলা-ট্যাংরার বস্তি। বড় ধরনের সংক্রমণ এড়াতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে এমন বস্তির সামনে বেশি করে ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার বসানোর পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র।
দেশে সংক্রমণের শীর্ষে এখন মহারাষ্ট্র। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৬,৪২৭। শুধু মুম্বইয়েই সংক্রমিত ৪২০৫ জন, যাঁদের মধ্যে অন্তত ২০০ জন ধারাভির বাসিন্দা। ঘিঞ্জি এই বস্তিতে সব মিলিয়ে প্রায় দশ লক্ষ লোকের বাস। সেখানে এক বার সংক্রমণ শুরু হলে তা রোখা কার্যত অসম্ভব বলে গোড়া থেকেই আশঙ্কা করছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। বাস্তবে হয়েছেও তা-ই। ধারাভিতে প্রতি দিন একাধিক করোনা-আক্রান্তের খবর আসায় ইতিমধ্যেই প্রায় তিন হাজারেরও বেশি ধারাভিবাসীকে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে। আর সারা দেশে প্রায় সাড়ে ন’লক্ষ মানুষ নিভৃতবাসে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের প্রধান এস কে সিংহ।
সম্প্রতি দু’টি আন্তর্মন্ত্রক কেন্দ্রীয় দল পশ্চিমবঙ্গের মতোই মহারাষ্ট্রে গিয়েছিল। একটি দল ধারাভি, গোভান্ডি ও ওয়াডালা এলাকা ঘুরে দেখেছে। আজ দিল্লিতে রুটিন সাংবাদিক বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব জানান, ধারাভির মধ্যে ‘কনটেনমেন্ট জ়োন’ বা সংক্রমণের জেরে গণ্ডিবদ্ধ রাখা এলাকাগুলি ঘুরে দেখে কেন্দ্রের দলটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, এখানকার সাধারণ শৌচাগারগুলি করোনার প্রকোপের অন্যতম কারণ। এখানকার বস্তিবাসীদের কোনও ব্যক্তিগত শৌচাগার নেই। আছে শুধু সাধারণ শৌচাগার। সকলেই তা ব্যবহারের জন্য ভিড় করে দাঁড়াচ্ছেন। পারস্পরিক দূরত্বের নিয়ম মানা হচ্ছে না সেখানে। ফলে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। পুণ্যসলিলা বলেন, সেই কারণেই এলাকার প্রায় তিন হাজার বাসিন্দাকে নিভৃতবাসে পাঠানো হয়েছে। অন্য বাড়িগুলিতে ঘুরে-ঘুরে সমীক্ষা চলছে, কেউ সংক্রমিত হয়েছেন কি না। কারণ, গোটা এলাকাটিই ‘হটস্পট’।
আরও পড়ুন: রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে ছোট শিল্পকে প্যাকেজ
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, এই সমস্যা শুধু মুম্বইয়ের নয়। কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই কিংবা ছোট শহরের যেখানে ঝুপড়ি ও বস্তি রয়েছে, সেখানেই সাধারণ শৌচাগারের উপস্থিতি সব সময়েই করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি করছে। তাই আন্তর্মন্ত্রক দলের পক্ষ থেকে মুম্বইয়ের স্থানীয় প্রশাসনকে ধারাভির কাছেই উপযুক্ত খোলা জায়গায় আরও বেশি করে ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার বসাতে বলা হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যের প্রশাসনকেও বস্তি এলাকায় বেশি করে ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার বসানো ও সেগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। যদিও অনেকের মতে, ব্যক্তিগত শৌচাগারের অভাবের বিষয়টি মোদী সরকারের স্বচ্ছতা অভিযানের সাফল্য নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
আরও পড়ুন: বালিকাকে খাটানো হচ্ছিল লঙ্কাখেতে
আজ বিকেল পর্যন্ত গত চব্বিশ ঘণ্টায় দেশে ১৬৮৪ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। তবু গোষ্ঠী-সংক্রমণ শুরু হয়নি বলে দাবি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই বলছেন দেশে যথেষ্ট পরীক্ষা হচ্ছে না। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যত জনের পরীক্ষা হয়েছে, তাঁদের মাত্র সাড়ে চার শতাংশের শরীরেই সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। লকডাউনে পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলায় সংক্রমণ স্টেজ-থ্রি বা গোষ্ঠী-সংক্রমণের পর্যায়ে যেতে পারেনি।’’ একই দাবি করেছেন নীতি আয়োগের সদস্য ও করোনা মোকাবিলায় গঠিত ১১টি ক্ষমতাসম্পন্ন দলের একটির চেয়ারম্যান ভি কে পল। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউন না-হলে এখন অন্তত এক লক্ষ লোক আক্রান্ত হতেন। কিন্তু লকডাউন ও সামাজিক দূরত্ব পালনে সংখ্যাটিকে এক-চতুর্থাংশে আটকে রাখা গিয়েছে। আজ আরও ৫টি আন্তর্মন্ত্রক কেন্দ্রীয় দল গঠন করা হয়েছে। তারা যাবে আমদাবাদ, সুরাত, ঠাণে, হায়দরাবাদ ও চেন্নাইয়ে।
রাতের খবর, দিল্লির একটি সরকারি হাসপাতালের ১১ জন ডাক্তার-সহ ৩১ কর্মী করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন। কেরলের কোঝিকোড়ে করোনায় মৃত্যু হয়েছে চার বছরের এক শিশুকন্যার।