—প্রতীকী চিত্র।
প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের সংখ্যা পৌঁছে যাচ্ছে প্রায় এক লক্ষের কাছে। এই মারাত্মক সংক্রমণ বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র আজ করোনা পরীক্ষা পদ্ধতিতে ফের পরিবর্তন আনল। আজ সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে পাঠানো একটি নির্দেশিকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানিয়েছে, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশির উপসর্গ রয়েছে অথচ র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল হয়েছে, এমন ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক ভাবে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করাতে হবে।
দ্রুত ও কম খরচে কোনও একটি এলাকায় সংক্রমণের চরিত্র বুঝতে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার কোনও বিকল্প নেই। যদিও নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভি কে পলের মতে, ‘‘ওই ব্যবস্থার কিছু ত্রুটি রয়েছে। বেশ কিছু ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি করোনা সংক্রমিত হলেও, অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় তা ধরা পড়ছে না। এমনকি জ্বর, সর্দি কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও এদের অনেকের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ‘ফলস নেগেটিভ’ বলা হয়ে থাকে।’’ স্বাস্থ্যকর্তারা মনে করছে, ওই ফলস নেগেটিভ যাঁরা, তাঁদের একটি বড় অংশই আসলে সংক্রমিত। কিন্তু রিপোর্টে নেগেটিভ আসায় তাঁরা নিশ্চিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং নিজেদের অজান্তেই সংক্রমণ ছড়িয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে দেশে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে দ্রুত গতিতে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমিত হয়েছেন ৯৫,৭৩৫ জন। সব মিলিয়ে দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪,৬৫,৮৬৩ জন। তবে এই মুহূর্তে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা হল, ৯,১৯,০১৮ জন। গত চব্বিশ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ১১৭২ জন। যার ফলে এ পর্যন্ত করোনার শিকার হয়েছেন ৭৫,০৬২ জন।
সংক্রমণের হার (দৈনিক পরীক্ষার নিরিখে যত জন আক্রান্ত) কম হলেও, সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধি রীতিমতো ভাবাচ্ছে কেন্দ্রকে। স্বাস্থ্যকর্তাদের মতে, অবিলম্বে দেশে ফি দিন আক্রান্তের সংখ্যা না কমানো হলে পরিস্থিতি বিপদজ্জনক জায়গায় চলে যেতে পারে। তাই আজ নিজেদের পরীক্ষা পদ্ধতিতে বদল এনে উপসর্গ রয়েছে অথচ অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় নেগেটিভ ব্যক্তিদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা বাধ্যতামূলক ভাবে করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ব্যাখ্যা, বেশ কিছু রাজ্য এই পদ্ধতি মেনে চলছে না। কিংবা আরটি-পিসিআর পরীক্ষার প্রশ্নে গা-ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে। যার ফলে সেই রাজ্যগুলিতে সংক্রমণ বাড়ছে। লকডাউন উঠে যাওয়া, ট্রেন ও বিমান চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে পড়ায় এক রাজ্যের সংক্রমণের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে দেশের অন্য প্রান্তে। তাই আজ পরীক্ষার প্রশ্নে ওই নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বক্তব্য, আশা করা যায় এতে দ্রুত সংক্রমণ চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: বেজিংকে বার্তা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর, বায়ুসেনায় রাফালের যোগ, চুপ প্রধানমন্ত্রী
আরও পড়ুন: মস্কোয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ।। আগে সেনা সরাক চিন: জয়শঙ্কর
একই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রক প্রতিটি রাজ্যকে জেলা স্তরে একটি নজরদারি দল গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছে। যাদের কাজই হবে জেলাভিত্তিক উপসর্গ রয়েছে অথচ নেগেটিভ এমন ব্যক্তিদের নজরদারি করা। তাদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা, তার পর প্রয়োজনে হাসপাতাল বা নিভৃতবাসে পাঠানো হল কি না, তা দেখার দায়িত্বে থাকবে ওই কমিটিগুলি। এক স্বাস্থ্যকর্তার বক্তব্য, ‘‘ফি দিন সংক্রমণ এক লক্ষে পৌঁছে গিয়েছে। পরিস্থিতি এখন কড়া হাতে সামলানো প্রয়োজন। তাই উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তি, যাতে পরীক্ষা থেকে বাদ না পড়ে, তা রাজ্যগুলিকে নিশ্চিত করতে হবে। রাজ্য ও কেন্দ্রের এখন লক্ষ্যই হওয়া উচিত যাতে এক জন সংক্রমিত রোগীও পরীক্ষার আওতা থেকে বাদ না পড়ে।’’