Coronavirus in India

গোষ্ঠী সংক্রমণ? মানছে না কেন্দ্র, ফের লকডাউন উত্তরপ্রদেশে

সরকার ইতিবাচক ছবি তুলে ধরতে চাইলেও গোটা দেশেই সংক্রমণ বেড়ে চলেছে দ্রুত গতিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০৩:০৩
Share:

কোভিড-১৯-এ মৃত্যু হয়েছে বাবার। দিল্লির এক মর্গের সামনে। বৃহস্পতিবার। রয়টার্স

কার্যত এক মাস অপেক্ষার শেষে দেশের করোনা চিত্র জানাতে সংবাদমাধ্যমের সামনে এলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কর্তারা। রোজ পঁচিশ হাজারের কাছাকাছি সংক্রমণ, নতুন এলাকা থেকে সংক্রমণের তথ্য আসা সত্ত্বেও দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে মানতে রাজি নন তাঁরা। জানালেন, খুব বেশি হলে কিছু এলাকায় স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ হয়েছে। গোষ্ঠী সংক্রমণের প্রশ্নই নেই। বরং সরকারের যুক্তি, যে সমস্ত দেশে কোভিড-১৯ রোগে মৃত্যুহার প্রতি দশ লক্ষে সব চেয়ে কম, ভারত তার অন্যতম।

Advertisement

আজ প্রধানমন্ত্রীও ভারত বিশ্ব সপ্তাহ-২০২০ ভিডিয়ো বক্তৃতায় দেশের মৃত্যুহার কত কম বোঝাতে গিয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশ ও ব্রাজিলের জনসংখ্যা প্রায় সমান, ২৪-২৫ কোটির কাছাকাছি। ব্রাজিলে যেখানে ৬৫ হাজার লোক মারা গিয়েছে, সেখানে উত্তরপ্রদেশে মৃতের সংখ্যা আটশোর কাছাকাছি।’’ কিন্তু ঘটনা হল, প্রধানমন্ত্রী ওই বক্তব্যের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সংক্রমণে রাশ টানতে আগামিকাল রাত দশটা থেকে সোমবার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত নতুন করে এক প্রস্ত লকডাউন ঘোষণা করতে হয়েছে যোগী সরকারকে।

সরকার ইতিবাচক ছবি তুলে ধরতে চাইলেও গোটা দেশেই সংক্রমণ বেড়ে চলেছে দ্রুত গতিতে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমণ ২৪,৮৭৯টি। মৃত্যু আরও ৪৮৭ জনের। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭.৬৭ লক্ষ পেরিয়ে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও গোষ্ঠী-সংক্রমণ ঘটেনি বলে আজও দাবি করল স্বাস্থ্য মন্ত্রক।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাজ্যে চালু নয়া নিয়ন্ত্রণ, এক দিনেই করোনা আক্রান্ত এক হাজার, মৃত ২৭

আজ করোনা সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর ১৮তম বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকের সূত্র ধরেই কার্যত এক মাস পরে সাংবাদিক সম্মেলন করল মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি রাজেশ ভূষণ বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন আজও মন্ত্রিগোষ্ঠীকে জানিয়েছেন যে, গোষ্ঠী-সংক্রমণের স্তরে ভারত এখনও পৌঁছয়নি। কিছু এলাকায় স্থানীয় ভাবে রোগের প্রকোপ ঘটেছে। দেশে ৭৩৩টির বেশি জেলা রয়েছে। কিন্তু মোট সংক্রমণের ৮০ শতাংশই ৪৯টি জেলায়। কাজেই গোষ্ঠী-সংক্রমণের কথা বলাটা যথাযথ হবে না।’’

ভূষণের মতে, নির্ধারিত প্রোটোকল মেনে চললে অ্যাক্টিভ রোগীদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের তিন দিনে চিহ্নিত করা সম্ভব। সেটা যখন করা যাচ্ছে, তখন গোষ্ঠী-সংক্রমণের কথা বলা চলে না।

মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠক সূত্রের খবর, দেশের ৯০ শতাংশ সংক্রমিত ব্যক্তির ঠিকানা হল মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, দিল্লি, কর্নাটক, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও গুজরাত—এই আটটি রাজ্য। অন্য দিকে মৃত্যুহারে এগিয়ে থাকা রাজ্যগুলি হল মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাত, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ। মোট মৃত্যুর ৮৬ শতাংশ ঘটছে ছয় রাজ্যের ৩২টি জেলায়। যদিও কেন্দ্রের দাবি, ভারতে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম। এবং যাঁরা মারা যাচ্ছেন, তাঁদের ৫৩ শতাংশই ষাটোর্ধ্ব। বরং দেশে মোট অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা (২,৬৯,৭৮৯) যা, সুস্থের সংখ্যা তার ১.৭৫ গুণ।

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে উদ্বেগের বিষয় হল, সংক্রমণের গোড়ার পর্বে যে ব্যক্তিরা একাধিক রোগের শিকার, তারাই মূলত মারা যাচ্ছিলেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ৪২-৪৫ শতাংশ মৃত ব্যক্তি কোনও ক্রনিক রোগের শিকার নন। স্রেফ করোনা সংক্রমণের কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে। বাতাসেও ভাইরাস ভাসমান থাকার সম্ভাবনা নিয়ে ভূষণ বলেন, ‘‘পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল। হু-এর সদর দফতর যা যা বলছে, সেই সব নতুন তথ্য আমরা নজরে রাখছি। ফলে বাতাসে যদি কোনও ‘ড্রপলেট’ থাকেও, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখলে আপনি তার থেকে বাঁচতে পারেন।’’

দেশে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে অননুমোদিত এমন বেসরকারি ল্যাবকেও করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে ওই ল্যাবের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো থাকতে হবে ও পরীক্ষা শুরুর এক মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমোদন আবেদন করে জোগাড় করে নিতে হবে। অদূর ভবিষ্যতে দেশ জুড়ে আবার সেরো-সার্ভে করার পরিকল্পনা রয়েছে আইসিএমআর-এর। দিল্লি হাইকোর্ট আজ আইসিএমআর এবং দিল্লি সরকারকে বলেছে, মানসিক ভারসাম্যহীন বা গৃহহীন যে মানুষেরা বিভিন্ন হোমে রয়েছেন, তাঁদের করোনা পরীক্ষার জন্য ফোন নম্বরের প্রয়োজন নেই।

তিরুঅনন্তপুরমের পুনথুরা-তে সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে থাকায় সেখানে আজ কম্যান্ডো নামিয়েছে কেরল সরকার। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, ‘‘গোষ্ঠী-সংক্রমণের খুব কাছাকাছি রয়েছে রাজ্য।’’ মোট রোগীর সংখ্যায় প্রথম স্থানে থাকা মহারাষ্ট্রে আজ সারা দিনে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি নতুন রোগী পাওয়া গিয়েছে। দ্বিতীয় তামিলনাড়ুতে সেই সংখ্যাটা ৪ হাজারের বেশি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement