জীবাণুনাশক ছড়িয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে নিজামুদ্দিন মসজিদ। বৃহস্পতিবার। পিটিআই
প্রথম একশো জন করোনা আক্রান্ত থেকে হাজার জনে পৌঁছতে সময় লেগেছিল ১২ দিন। আর হাজার থেকে দু’হাজার জনের সংক্রমণে লাগল মাত্র চারটে দিন। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের দেওয়া হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩৫৮। যদিও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আক্রান্ত ২০৬৯। মৃত ৫৩।
আক্রান্তদের সংখ্যা হঠাৎ বৃদ্ধির জন্য দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিগি জামাতের দিকে আঙুল তুলেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। হঠাৎ সংক্রমণের হার বাড়ায় জনগোষ্ঠীতে ওই সংক্রমণ ছড়িয়েছে কি না, তা দেখতে করোনা সংক্রমণ পরীক্ষা নীতি বদলের সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। যে এলাকাগুলিতে আক্রান্ত বেশি পাওয়া যাচ্ছে সেখানে যাকে-তাকে বেছে নিয়ে করোনা পরীক্ষা করা হবে।
সূত্রের মতে, করোনা সংক্রমণের বেশি সম্ভাবনা রয়েছে এ ধরনের প্রায় ৪২টি স্থান বা হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। ক’দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও, গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরুর তত্ত্ব এখনও মানতে রাজি নয় কেন্দ্র। তাদের মতে, কিছু এলাকায় আক্রান্তদের মাধ্যমে একাধিক স্থানীয় সংক্রমণের ঘটনা পাওয়া গিয়েছে। সেই সব এলাকা চিহ্নিত করে বাসিন্দাদের দ্রুত পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজ মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো বার্তাতেও আরও বেশি করে পরীক্ষার পক্ষে সওয়াল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও লকডাউন নীতি কড়া ভাবে মেনে চলার প্রশ্নে ফের আজ রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে। যাঁরা নির্দেশ মানবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।
লকডাউনের প্রথম পাঁচ দিনে করোনা আক্রান্তের হার কমার দাবি করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু ২৯ মার্চ নিজামুদ্দিনের ঘটনাটি সামনে আসে। তার পরেই জামাতে উপস্থিত ব্যক্তিদের খুঁজতে দেশ জুড়ে তল্লাশি শুরু হয়। বাড়তে থাকে সংক্রমণের সংখ্যা। কেন্দ্রের দাবি, এখনও পর্যন্ত তবলিগি জামাতের প্রায় চারশো জন করোনা আক্রান্ত। অর্থাৎ দেশে মোট আক্রান্তের ২০ শতাংশই তবলিগি জামাতের সদস্য। ইতিমধ্যে জামাত সদস্য ও তাদের সংস্পর্শে আসা ন’হাজার জনকে চিহ্নিত করে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে। খোঁজা হচ্ছে বাকিদেরও।
তবে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন সদস্য অধ্যাপক শমিকা রবির দাবি, শুরু থেকেই আরও বেশি মানুষের পরীক্ষা করা হলে এই সংক্রমণের পরিস্থিতি এড়ানো যেত। সে ক্ষেত্রে সংক্রমিত জামাত সদস্যদের আরও আগে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। নতুন করে সংক্রমণও ছড়াতে পারত না।
আরও বেশি পরীক্ষার উপরে শুরু থেকেই জোর দিচ্ছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু উপসর্গ দেখা দিলে তবেই পরীক্ষা করার নীতি নিয়ে এগোচ্ছিল সরকার। তবে এখন সংক্রমণ বাড়তে থাকায় অবশেষে আজ সেই নীতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিল স্বাস্থ্য মন্ত্রক। আজ প্রধানমন্ত্রীও মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে বলেন, উপসর্গ দেখে সন্দেহ হলেই যেন করোনা পরীক্ষা করা হয়। তার পরে রাতে পরীক্ষা-নীতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ। সূত্রের মত, যে এলাকাগুলিতে সংক্রমণ বেশি ছড়িয়েছে, সেখানে গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট দ্রুত শুরু করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ২০টি কেন্দ্রকে সংক্রমণের আঁতুড়ঘর বা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। নিজামুদ্দিনের ঘটনার পরে আরও ২২টি স্থানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলি মহারাষ্ট্র, দিল্লি, কেরল, তামিলনাডুর মতো ডজনখানেক রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)