সচেতন: বৃহস্পতিবার দশম শ্রেণির স্থগিত থাকা পরীক্ষা দিল কর্নাটকের পড়ুয়ারা। পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে দূরত্ববিধি মেনে অপেক্ষা পরীক্ষার্থীদের। বেঙ্গালুরুতে। পিটিআই
সংশয় দানা বাঁধছিল অনেক দিন থেকেই। জোরালো হচ্ছিল অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি। শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের কাছে হলফনামা দাখিল করে জুলাইয়ে নির্ধারিত সিবিএসই-র দশম (হওয়ার কথা ছিল শুধু উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে) এবং দ্বাদশ শ্রেণির বাকি পরীক্ষা বাতিলের কথা জানাল ওই বোর্ড এবং কেন্দ্র। একই পথে হাঁটার কথা জানিয়েছে আইসিএসই-ও।
এর ফলে ওই দুই বোর্ডের পরীক্ষার্থীদের ধোঁয়াশা যেমন কিছুটা পরিষ্কার হল, তেমনই রয়ে গেল বহু প্রশ্ন। যেমন, ঠিক কোন পরীক্ষার ভিত্তিতে তারা রেজাল্ট হাতে পাবে কিংবা দ্বাদশের পরীক্ষা ফের নেওয়া হতে পারে কবে— এমন অনেক প্রশ্নেরই উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। আগামিকাল শুনানির আগে তাই এই সমস্ত কিছু সম্পর্কে বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তি জমা দিতে বলেছে বিচারপতি এ এম খানউইলকরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ। তা ছাড়া, দ্বাদশ পেরিয়ে অনেকেই যে সর্বভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষা জেইই-মেন কিংবা ডাক্তারি প্রবেশিকা এনইইটি (ইউজি)-তে বসে, সেগুলির ভবিষ্যৎ কী, তা এখনও বোঝা কঠিন। কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রীর সাম্প্রতিক টুইটে ইঙ্গিত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা বাতিল হওয়া অথবা পিছিয়ে যাওয়ারও।
কেন্দ্র এবং সিবিএসই-র তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা আজ সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, ১ থেকে ১৫ জুলাই সিবিএসই-র দশম (শুধু উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে) এবং দ্বাদশ শ্রেণির বাকি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যগুলি। এ ছাড়া, আরও সমস্ত দিক বিচার করেই জুলাইয়ে ওই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি জানান, এ বারের মতো দশমের বাকি পরীক্ষা আর হবে না। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা শোধরালে, দ্বাদশের পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। তবে তা বাধ্যতামূলক নয়। চাইলে পরীক্ষার্থী তাতে বসতে পারে, নয়তো তাঁর রেজাল্ট তৈরি হবে আগের পরীক্ষার ভিত্তিতে। সূত্রের খবর, সিবিএসই আগামিকাল কোর্টে এই বিষয়টি স্পষ্ট করতে গিয়ে বলতে পারে, রেজাল্ট ‘ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্ট’-এর ভিত্তিতে নয়, ঠিক হবে এই বোর্ডের শেষ তিনটি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে।
সিবিএসই
• দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির বাকি পরীক্ষা বাতিল।
• আগে হওয়া পরীক্ষার ভিত্তিতে দশমের রেজাল্ট।
• পরিস্থিতি শোধরালে দ্বাদশের পরীক্ষা। তবে বাধ্যতামূলক নয়। সে ক্ষেত্রে রেজাল্ট আগের পরীক্ষার ভিত্তিতে।
আইসিএসই
• দশম ও দ্বাদশের বাকি পরীক্ষা বাতিল।
• মোটামুটি সিবিএসই-কেই অনুসরণের সিদ্ধান্ত।
বিচারপতি খানউইলকরের বেঞ্চ জানতে চেয়েছে, কখন পরিস্থিতি পরীক্ষা নেওয়ার উপযুক্ত, তা ঠিক করবে কে? কেন্দ্র না কি নিজেদের মতো করে রাজ্যগুলি? এক-এক রাজ্যে তো পরিস্থিতি এক-এক রকম হতে পারে। যারা পরীক্ষা দেবে না, তাদের মার্কশিট তৈরি হবে কোন পরীক্ষার ভিত্তিতে? পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কখন ফল প্রকাশের কথা ভাবা হচ্ছে? সে ক্ষেত্রে ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি ইত্যাদির প্রবেশিকা পরীক্ষার কী হবে? সেপ্টেম্বরের আগে কি পরের শিক্ষাবর্ষ আদৌ শুরু করা সম্ভব হবে? মেহতা জানিয়েছেন, পরীক্ষার উপযুক্ত সময় স্থির করবে কেন্দ্রই। তবে তিনি মেনে নিয়েছেন, কত দিন পরে সেই পরিস্থিতি তৈরি হবে, এখনই তা বলা কঠিন। আগামিকাল শুনানি শুরুর আগে এই সমস্ত বিষয় স্পষ্ট করে তৈরি করা বিজ্ঞপ্তি কেন্দ্র এবং সিবিএসই-কে জমা দিতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত।
তাদের বোর্ড পরীক্ষা নিয়ে সিবিএসই ও আইসিএসই যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার বিষয়ে রাজ্যের সিদ্ধান্ত বদল হবে কি না, তা বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি তিনটি পরীক্ষা ২ থেকে ৮ জুলাই হওয়ার কথা। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানান, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে। তবে একই সঙ্গে সিবিএসই এবং আইসিএসই-র সিদ্ধান্তের উপরে নজর রাখার কথাও বলেছিলেন তিনি। এ দিন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করে সাড়া মেলেনি। এসএমএসেরও জবাব আসেনি।
আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত জানান, এ দিন সুপ্রিম কোর্টে দশম এবং দ্বাদশের বাকি পরীক্ষা বাতিলের কথা বলেছে আইসিএসই-ও। জানিয়েছে, একই সময়ে ওই দুই বোর্ড-পরীক্ষার ফল প্রকাশ করবে আইসিএসই। করোনার সংক্রমণ বাড়ছে হুড়মুড়িয়ে। পরীক্ষার্থীরা প্রবল মানসিক চাপে। অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন। বহু স্কুলকে বদলে ফেলতে হয়েছে কোয়রান্টিন সেন্টারে। এই সব কিছু মাথায় রেখেই আপাতত পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুন: ১২ অগস্ট পর্যন্ত ট্রেন বন্ধ, মাসিক টিকিটের টাকা ফেরত না মেয়াদ বৃদ্ধি?
কেন্দ্র প্রথমে সিবিএসই-র বাকি পরীক্ষা জুলাইয়ে নেওয়ার কথা বললে, তার বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছিলেন অভিভাবকদের একাংশ। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে কী ভাবে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে? আগামিকাল সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় দিতে পারে।
আজই একটি বিজ্ঞপ্তিতে সিবিএসই জানিয়েছে, অনির্দিষ্ট কালের জন্য পিছিয়ে যাচ্ছে সেন্ট্রাল টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট (সিটিইটি)। এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ৫ জুলাই।
আরও পড়ুন: পাঁচ রাজ্যে গেল করোনার ওষুধ রেমডেসিভির, কলকাতায় পরের পর্যায়ে