দেশের সব রাজ্যগুলির মধ্যে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। ছবি: এপি।
সরকারি হাসপাতালগুলিতে বেড অপ্রতুল। অথচ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি দিনই বাড়ছে হু হু করে। দেশের মোট করোনা-আক্রান্তের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই রয়েছেন মহারাষ্ট্রে। তাই এ বার তাঁদের চিকিৎসায় রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির ৮০ শতাংশ বেড নিয়ে নিল মহারাষ্ট্র সরকার। সেই সঙ্গে আক্রান্তদের পরিবারকে স্বস্তি দিয়ে তাঁদের চিকিৎসার খরচও বেঁধে দিল উদ্ধব ঠাকরে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাতেই এ ঘোষণা করে মহারাষ্ট্র সরকার। সরকারি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের জেনারেল ওয়ার্ড এবং আইসোলেশন বেড ভাড়া দিন প্রতি ৪ হাজার টাকা। অন্য দিকে, আইসিইউ-তে যে সব বেডে ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা নেই, তার ভাড়া দিন প্রতি সাড়ে ৭ হাজার টাকা করা হয়েছে। ভেন্টিলেটর রয়েছে এমন আইসিইউ বেডভাড়া পড়বে এক দিনে ৯ হাজার টাকা। রাজ্যের বেসরকারি ও নার্সিংহোমের ৮০ শতাংশ বেডের ভাড়া নির্ধারিত করে দিলেও বাকি ২০ শতাংশ বেডের ক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দের ভাড়াই নিতে পারবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
দেশের সব রাজ্যগুলির মধ্যে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে মহারাষ্ট্রে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুক্রবার দেশে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৪৪৭। এর মধ্যে শুধুমাত্র মহারাষ্ট্রেই তা ছুঁয়েছে ৪১ হাজার ৬৪২-এ। ওই রাজ্যে করোনা-পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে শুধুমাত্র মুম্বই শহরেই আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২৫ হাজারের বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৩৪৫ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন মহারাষ্ট্রে। সেই সঙ্গে মহারাষ্ট্রে ১ হাজার ৪৫৪ জন আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে। অবশ্য সংক্রমিতদের মধ্যে সেরে উঠেছেন ১১ হাজার ৭২৬ জন।
আরও পড়ুন: আমপান: রাজ্যকে ১ হাজার কোটি টাকা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি মোদীর
সরকারের এই পদক্ষেপে স্বাভাবিক ভাবেই স্বস্তি পাবেন রাজ্যের অসংখ্যা করোনা-আক্রান্তের পরিবার। তাদের অভিযোগ, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে করোনা-সহ অন্যান্য চিকিৎসার খরচ মাত্রাতিরিক্ত। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার খরচ কমাতে দীর্ঘ দিন ধরেই বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছিল রাজ্য সরকার। এ বার এপিডেমিক ডিজিজেস অ্যাক্ট-এর আওতায় চিকিৎসার খরচ বেঁধে দিল রাজ্য সরকার। এই নির্দেশ কার্যকরী হবে রাজ্যের সমস্ত বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, দাতব্য প্রতিষ্ঠানের দ্বারা পরিচালিত হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রে।
গত কালের সরকারি নির্দেশিকায় করোনায় সংক্রমিতরা ছাড়াও অন্যান্য রোগীরাও স্বস্তি পাবেন। সরকারের ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী অ্যাঞ্জিওগ্রাফি এবং অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির সর্বোচ্চ খরচ হবে যথাক্রমে ১২ হাজার ও ১ লক্ষ ২ হাজার টাকা করে। সেই সঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসব করাতে গেলে ৭৫ হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে, সিজার পদ্ধতির মাধ্যমে প্রসবের ক্ষেত্রে ৮৬ হাজার ২৫০ টাকার বেশি চাইতে পারবে না কোনও বেসরকারি হাসপাতাল।
আরও পড়ুন: কলকাতা যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপ: জল, বিদ্যুতের দাবিতে অবরোধ বিভিন্ন এলাকায়
তবে যে সব রোগীদের চিকিৎসা বিমা নেই বা বিমার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে তাঁদের ক্ষেত্রেই এই নির্দেশিকা খাটবে। এ ছাড়া, মুম্বই, পুণে, নবী মুম্বই, পানভেল এবং ঠাণের যে সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিমা সংস্থাগুলির চুক্তি রয়েছে, তারা কখনই সর্বনিম্ন বেডভাড়ার বেশি নিতে পারবে না।