গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দেশে নয়া সংক্রমিতের সংখ্যা একলাফে ফের অনেকটা বেড়ে গেল। নোভেল করোনাভাইরাসের নয়া প্রকারভেদ নিয়ে যখন আতঙ্কে গোটা বিশ্ব, সেইসময় ভারতের পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাবে স্বস্তিদায়ক। কিন্তু মঙ্গলবারের তুলনায় একধাক্কায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নতুন সংক্রমণে দুশ্চিন্তার ছায়া।
গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে দেশে দৈনিক নয়া সংক্রমণ ৩০ হাজারের নীচেই রয়েছে। মঙ্গলবার তা কমে দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৫৫৬। কিন্তু বুধবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে গত ২৪ ঘণ্টার পরিসংখ্যান প্রকাশ করলে দেখা যায়, এ দিন নতুন করে কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ২৩ হাজার ৯৫০ জন, গতকালের তুলনায় যা ৪ হাজার ৩৯৪ বেশি।
বিশ্ব করোনা তালিকায় এই মুহূর্তে ভারত যদিও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, তবে প্রথম ও তৃতীয় স্থানে থাকা আমেরিকা এবং ব্রাজিলের তুলনায় ভারতে দৈনিক সংক্রমণ অনেকটাই স্বস্তিদায়ক। ২২ ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী, ওই দিন আমেরিকায় নতুন করে সংক্রমিত ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ৮৬২ জনের শরীরে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। ওই একই সময়ে ব্রাজিলে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ৫৫ হাজার ২০২ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
সবমিলিয়ে এখনও পর্যন্ত আমেকিকায় ১ কোটি ৮২ লক্ষ ১৮ হাজার ৪৬৬ জন নোভেল করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতেও মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৯৯ হাজার ৬৬। ব্রাজিলে এখনও পর্যন্ত ৭৩ লক্ষ ১৮ হাজার ৮২১ জন করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। এই মুহূর্তে ভারতে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ ৮৯ হাজার ২৪০।
কোভিডের প্রকোপে দেশে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৪৪৪ জন রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই সর্বাধিক প্রাণহানি ঘটেছে। সেখানে এখনও পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৮৭০ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। কর্নাটকে মৃত্যু হয়েছে ১২ হাজার ২৯ জন করোনা রোগীর। তামিলনাড়ুতে সংখ্যাটা ১২ হাজার ১২। রাজধানী দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গে যথাক্রমে ১০ হাজার ৩২৯ এবং ৯ হাজার ৪৩৯ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন।
তবে ১৮ অক্টোবরের পর থেকে দেশে দৈনিক মৃত্যু ১ হাজারের নীচেই রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৩৩ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই ৭৫ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। কেরলেই ২৭ জন করোনা রোগী মারা গিয়েছেন। দিল্লিতে মৃত্যু হয়েছে ২৫ জন করোনা রোগীর। পঞ্জাব থেকে ১৮ জনের মৃত্যু হিসেব পাওয়া গিয়েছে।
আরও পড়ুন: নয়া স্ট্রেন ঘিরে আতঙ্কের মধ্যেই এ দেশে দু’দিনে ব্রিটেনফেরত ২০ যাত্রী করোনা পজিটিভ
তবে এরই মধ্যে দেশে সুস্থতার হার যথেষ্ট আশাজনক। কারণ মোট আক্রান্তের মধ্যে ৯৬ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩৮২ জন করোনা রোগীই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এই মুহূর্তে দেশে সুস্থতার হার ৯৫.৬৯ শতাংশ। ১৯ লক্ষ ২ হাজার ৪৫৮ আক্রান্ত নিয়ে সংক্রমণে যেমন দেশের মধ্যে শীর্ষে মহারাষ্ট্র, তেমনই ১৭ লক্ষ ৯৪ হাজার ৮০ জন করোনা রোগী সুস্থও হয়ে উঠেছেন সেখানে। কর্নাটকে ৯ লক্ষ ১১ হাজার ৩৮২ জন আক্রান্তের মধ্যে ৮ লক্ষ ৮৫ হাজার ৩৪১ জনই সেরে উঠেছেন। অন্ধ্রপ্রদেশে ৮ লক্ষ ৭৯ হাজার ৩৩৯ জন আক্রান্তের মধ্যে সেরে উঠেছেন ৮ লক্ষ ৬৮ হাজার ২৭৯ জন রোগীই। তামিলনাড়ুতে ৮ লক্ষ ৯ হাজার ১৪ জন আক্রান্তের মধ্যে ৭ লক্ষ ৮৭ হাজার ৬১১ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বাংলায় ৫ লক্ষ ৩৯ হাজার ৯৯৬ জন মোট আক্রান্তের মধ্যে ৫ লক্ষ ১৪ হাজার ৩০৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
প্রতিদিন যত সংখ্যক মানুষের কোভিড টেস্ট হয় এবং তার মধ্যে যত জনের লালারসের নমুনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাকে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার বলা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ লক্ষ ৯৮ হাজার ১৬৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তবে এ দিন যেহেতু সংক্রমণ বেড়েছে, তাই সংক্রমণের হারও বৃদ্ধি পেয়ে ২.১৮ হয়েছে, গতকাল যা ১.৮২ ছিল।
আরও পড়ুন: কলকাতা ১৩.৫, দার্জিলিং ৪.৪, রাজ্যে ডিসেম্বর জুড়ে চলবে শীতের দাপট
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)