গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬৪ হাজার ৫৩১ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। গ্রাফিক- শৌভিক দেবনাথ।
গত কয়েক দিনে দেশের করোনা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান আশার আলো দেখাচ্ছে। নতুন করে সংক্রমিতের সংখ্যা একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যেই ঘোরাফেরা করছে। যদিও নতুন সংক্রমণ দু’দিন পর আবার ৬৪ হাজার পেরলো। সেই সঙ্গে এক দিনে সুস্থ হলেন ৬০ হাজারেরও বেশি আক্রান্ত। সংক্রমণ হার কম থাকলেও গতকালের তুলনায় সামান্য বেড়েছে। এক দিনে মৃত্যু বিগত দিনগুলির তুলনায় একটু বেড়ে আজ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬৪ হাজার ৫৩১ জন নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। ওই সময়ের মধ্যে, আমেরিকা ও ব্রাজিলে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪ হাজার ৫১৯ ও ৪৭ হাজার ৭৮৪ জন। অর্থাৎ এক দিনে আক্রান্ত বৃদ্ধির নিরিখে আমেরিকা ও ব্রাজিলের থেকে এগিয়ে ভারত। এই বৃদ্ধির জেরে দেশে মোট করোনা আক্রান্ত হলেন ২৭ লক্ষ ৬৭ হাজার ২৭৩ জন। সেখানে বিশ্বে প্রথম স্থানে থাকা আমেরিকাতে মোট আক্রান্ত ৫৪ লক্ষ ৮২ হাজার ও দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্রাজিলে ৩৪ লক্ষ ৭ হাজার।
প্রতি দিন যে সংখ্যক মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে যত শতাংশের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, সেটাকেই বলা হচ্ছে ‘পজিটিভিটি রেট’ বা সংক্রমণের হার। গত এক সপ্তাহ ধরে এই হার রয়েছে নয় শতাংশের কম। যা বেশ স্বস্তিদায়ক। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণ হার ৮.০৫ শতাংশ। অগস্টের শুরু থেকেই দেশে করোনা পরীক্ষাও অনেক বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষা হয়েছে ৮ লক্ষ ১ হাজার ৫১৮ জনের।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
আক্রান্তের সংখ্যা যেমন রোজ বাড়ছে, তেমনই প্রচুর আক্রান্ত সুস্থও হয়ে উঠছেন। দেশে কোভিড রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যান শুরু থেকেই আশাব্যাঞ্জক। এখনও পর্যন্ত মোট ২০ লক্ষ ৩৭ হাজার ৮৭০ জন করোনার কবল থেকে মুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ দেশে মোট আক্রান্তের ৭৩.৬৪ শতাংশ আক্রান্ত সুস্থ হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৬০ হাজার ৯১ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
স্পেন, ফ্রান্স, ইটালি, ব্রিটেনের মতো দেশকে পিছনে ফেলে, মৃত্যর নিরিখে বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভারত। যদিও মৃত্যুর হার ওই সব দেশগুলির তুলনায় ভারতে অনেকটাই কম। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার জেরে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৯২ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট ৫২ হাজার ৮৮৯ জনের প্রাণ কাড়ল করোনাভাইরাস। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রেই মারা গিয়েছেন ২০ হাজার ৬৮৭ জন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট মৃত আজ ছ’হাজার ছাড়িয়েছে। দেশের রাজধানীতে সেই সংখ্যাটা ৪ হাজার ২২৬ জন। কর্নাটকেও মৃতের সংখ্যা চার হাজারের বেশি। অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, পশ্চিমবঙ্গ মৃত্যু তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে। মধ্যপ্রদেশেও মোট মৃত্যু এক হাজার ছাড়িয়ে বেড়ে চলেছে। এর পর ক্রমান্বয়ে রয়েছে রাজস্থান, তেলঙ্গানা, পঞ্জাব, হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, বিহারে, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, ছত্তীসগঢ়, গোয়া-র মতো রাজ্যগুলি।
কোভিডে আক্রান্ত ও মৃত্যু দু’টি তালিকাতেই শুরু থেকেই শীর্ষে মহারাষ্ট্র। সেখানে মোট আক্রান্ত ৬ লক্ষ ১৫ হাজার। দ্বিতীয় স্থানে থাকা তামিলনাড়ুতে মোট আক্রান্ত প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। অন্ধ্রপ্রদেশেও মোট আক্রান্ত তিন লক্ষ পার করেছে। চতুর্থ স্থানে থাকা কর্নাটকে সংখ্যাটা ২ লক্ষ ৪০ হাজার মতো। এর পর রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (১,৬২,৪৩৪) ও দিল্লি (১,৫৪,৭৪১)। যদিও জুলাই থেকেই বেশ লাগাম পড়েছে রাজধানীর সংক্রমণ বৃদ্ধিতে। পশ্চিমবঙ্গ (১,২২,৭৫৩) ও বিহারে (১,০৯,৪৯৮) মোট আক্রান্ত এক লক্ষ পার করে বাড়ছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
তবে জুলাইয়ের তুলনায় অগস্টে, তেলঙ্গানাতে দৈনিক সংক্রমণ বৃদ্ধি কিছুটা কম হয়েছে। সেখানে মোট আক্রান্ত ৯৫ হাজার ৭০০ জন। অসম, গুজরাতে মোট আক্রান্ত ৮০ হাজারের বেশি। ওড়িশা, রাজস্থানে সেটা ৬০ হাজারের ঘরে। হরিয়ানা, কেরল, মধ্যপ্রদেশে আক্রান্ত ৫০ হাজার ছুঁইছুঁই। পঞ্জাব, জম্ম ও কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, উত্তরাখণ্ড, গোয়াতে মোট আক্রান্ত ৩০ হাজারের কম। ত্রিপুরা, মণিপুর, হিমাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশের মতো রাজ্যে মোট আক্রান্ত ১০ হাজারের কম।
পশ্চিমবঙ্গে দৈনিক গড়ে তিন হাজার নতুন সংক্রমণ হচ্ছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ১৫৭ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। এ নিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত হলেন ১ লক্ষ ২২ হাজার ৭৫৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫৫ জনের। করোনার কবলে এ রাজ্যে এখনও অবধি প্রাণ হারিয়েছেন ২ হাজার ৫২৮ জন।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)
(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ৪৯৫৬। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ৫২৬৯। তার আগের দু’দিন ছিল ৩৯৭০ এবং ৪৯৮৭। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ৪৯৪৩ এবং ৫৬১১। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ৪৯৫৬, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)