সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত। ছবি: পিটিআই।
হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্ক বাঁধালেন সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত। সঙ্ঘের দলীয় মুখপত্র পাঞ্চজন্য ও অর্গানাইজ়ারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘মুসলিমরা এ দেশে নিরাপদ। হিন্দুদের মাঝে তাঁদের ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু তাঁদের নিজেদের মধ্যে আধিপত্যের ভাবনা, ফের এ দেশকে শাসন করার যে চিন্তাভাবনা রয়েছে, তা ছাড়তে হবে।’’ চলতি বছরে দশ রাজ্যে বিধানসভা ও আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে ওই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিরোধীদের মতে, পরিকল্পিত ভাবে মেরুকরণের লক্ষ্যে হিন্দু-মুসলমান সমাজের মধ্যে বিভেদের রাজনীতি করার খেলায় নেমে পড়ার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে সঙ্ঘ প্রধানের সাক্ষাৎকারে।
সঙ্ঘ প্রধান হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির উপরে জোর দিতে দেখা গিয়েছে ভাগবতকে। কিন্তু রাজনীতির অনেকের মতে, সেই তুলনায় এই সাক্ষাৎকারে কার্যত ভিন্ন সুর শোনা গিয়েছে ভাগবতের গলায়। ভাগবত বলেন, ‘‘প্রকৃত সত্য হল, হিন্দুস্তান যেন হিন্দুস্তান থাকে। এ দেশে মুসলিম জনসমাজ সুরক্ষিত।... যদি তাঁরা নিজেদের ধর্মবিশ্বাস আঁকড়ে থাকতে চায় বা পূর্বপুরুষের ধর্ম বিশ্বাসে ফিরে যেতে চায় তা হলে হিন্দুদের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু নিজেদের শ্রেষ্ঠ ভাবার যে চিন্তা, যে আধিপত্যবাদের ভাবনা, তা থেকে মুক্ত হতে হবে।’’ হিন্দু সমাজ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ভাগবত বলেন, ‘‘গত হাজার বছর ধরে যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে হিন্দু সমাজ। অতীতে বিদেশি হানাদার আর এখন বিদেশি প্রভাব ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই চলতে থাকায় হিন্দু সমাজ জেগে উঠেছে। দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধের মধ্যে থাকায় হিন্দু সমাজে আগ্রাসী মনোভাব দেখা গিয়েছে।’’
হায়দরাবাদের এমআইএম দলের প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসির পাল্টা বক্তব্য, ‘‘আমরা আধিপত্য নই, সমান অধিকার, সমনাগরিকত্বের দাবি জানিয়ে থাকি। সঙ্ঘ পরিবারের কাছে বৈচিত্র্য হল দেশবিরোধী।’’ ভাগবতের কথার সমালোচনায় সরব কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। তিনি বলেন, ‘‘হিন্দুস্তান হিন্দুস্তানই থাকুক, তাতে রাজি। কিন্তু মানুষ যেন মানুষ থাকে।’’ বিষয়টি নিয়ে মাঠে নেমেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের সংখ্যালঘু মুখ মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, ‘‘সংঘাতের পরিবর্তে অংশগ্রহণের মনোভাব উন্নয়নকে নিশ্চিত করে। যে কারণে বিশ্বের প্রতি দশ জনে এক জন মুসলিম এ দেশে বাস করে। তাঁদের সামাজিক, আর্থিক ও শিক্ষাগত অধিকার এ দেশে সুরক্ষিত। যাঁরা মুসলিমদের ভোট ভাঙিয়ে রাজনীতি করেন, তাঁরাই বিপদের কারণ।’’