Controversy

মোদীর ভূয়সী প্রশংসায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, বিতর্ক তুঙ্গে

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির মুখে সরকারের প্রধানের প্রশংসা শুনে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:০৩
Share:

আন্তর্জাতিক বিচারবিভাগীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে এবং বিচারপতি অরুণ মিশ্র (বাঁ দিক থেকে)। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

বহুমুখী প্রতিভা ও আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দূরদর্শী— প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এমন বিশেষণে আজ ভরিয়ে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অরুণ মিশ্র। প্রকাশ্য মঞ্চে, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে-সহ সুপ্রিম কোর্টের অন্য বিচারপতিদের সামনেই।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী আজ সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক বিচারবিভাগীয় সম্মেলন’-এর উদ্বোধন করেন। বিচারপতি মিশ্র ধন্যবাদজ্ঞাপন বক্তৃতায় বলেন, ‘‘যিনি আন্তর্জাতিক মাপের চিন্তাভাবনা করেন, দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করেন, সেই বহুমুখী প্রতিভা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উদ্দীপক বক্তৃতার জন্য ধন্যবাদ জানাই।’’ অনুষ্ঠানে অন্যান্য দেশের শীর্ষ আদালতের বিচারপতিরাও ছিলেন। ‘আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তত্ত্বাবধানে ভারত দায়িত্বশীল রাষ্ট্র’ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে বলেও বিচারপতি মিশ্র মন্তব্য করেন।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির মুখে সরকারের প্রধানের প্রশংসা শুনে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমরা যখন সুপ্রিম কোর্টে ছিলাম, তখনও এই ধরনের বিচারবিভাগীয় সম্মেলন হত। বিদেশের বিচারপতিরা আসতেন। কিন্তু এ দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আসতে দেখিনি। আগেও আসতেন বলে শুনিনি। এখন আসছেন। সুপ্রিম কোর্টে বড় বা গুরুত্বপূর্ণ মামলায় অনেক ক্ষেত্রে পক্ষ হয় কেন্দ্রীয় সরকার।

Advertisement

আরও পড়ুন: ট্রাম্পের পছন্দ বুঝে আমিষে দরাজ মোদী সরকার

কেন্দ্রীয় সরকার বলতে প্রধানমন্ত্রীকে বোঝায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করা ঠিক বা বেঠিক কি না, তা বলছি না। কিন্তু সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের মনে সরকারের বিরুদ্ধে সুবিচার পাওয়ার ব্যাপারে এই ধরনের প্রশংসা সংশয়ের উদ্রেক করলেও করতে পারে। বিচার ব্যবস্থা মানুযের বিশ্বাসের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। ইংরেজিতে একটি কথা আছে — ‘জাস্টিস ইজ রুটেড ইন কনফিডেন্স’।’’

বরিষ্ঠ আইনজীবী ও মিজোরামের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব বলেন, ‘‘বিচার বিভাগ সাংবিধানিক কাঠামোর অন্যতম স্তম্ভ এবং সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। সেই সুপ্রিম কোর্টে কর্মরত বিচারপতির এমন মন্তব্য করা উচিত নয়, যাতে সুপ্রিম কোর্টের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।’’ একটি সংবাদ ওয়েবসাইটকে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি পি বি সবন্ত বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির এমন মন্তব্য অনভিপ্রেত।’’ একই মন্তব্য করেছেন দিল্লি হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এ পি শাহ। রাজনীতিকরা এ বিষয়ে ঘরোয়া মহলে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র শামা মহম্মদ টুইট করে বলেন, ‘‘এই ধরনের আচরণ কাঙ্ক্ষিত নয়।’’

প্রধানমন্ত্রী মোদী আজ তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘ভারতের পক্ষে গর্বের বিষয়, বিচার বিভাগ, সংসদ ও প্রশাসন পরস্পরের ভূমিকাকে সম্মান জানিয়ে সংবিধানের দর্শনকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।’’ বাবাসাহেব অম্বেডকরকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘‘সংবিধান শুধু আইনজীবীদের নথি নয়, জীবনযাপনের পথরেখা।’’

কিন্তু সংবিধানের দর্শন মেনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বজায় থাকছে কি না, তা নিয়ে মোদী জমানায় যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই অযোধ্যা বা ৩৭০ অনুচ্ছেদ-সিএএ-র মতো বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়েও সমালোচনা হয়েছে। আজ সে দিকে ইঙ্গিত করে আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘একটা অশুভ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। কিছু লোক কী রকম রায় প্রত্যাশা করছেন বলে প্রচার শুরু করে দিচ্ছেন। তার পর রায় পছন্দমতো না হলেই সর্বশক্তি দিয়ে সমালোচনা করা হচ্ছে।’’ বিচারপতি মিশ্র হাজার দেড়েক অচল আইন প্রত্যাহারের জন্য আজ আইনমন্ত্রীরও প্রশংসা করেন।

বিচারপতি অরুণ মিশ্র এখন সুপ্রিম কোর্টের তৃতীয় প্রবীণতম বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি বোবডে ও বিচারপতি এন ভি রমানা-র পরেই। সেপ্টেম্বরে তিনি অবসর নেবেন। এক সময় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। সম্প্রতি টেলিকম সংস্থাগুলিকে বকেয়া মেটানোর কড়া নির্দেশ দেওয়ার পরে তাঁর নাম খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। প্রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের আমলে মোদী সরকারের পক্ষে সমস্ত স্পর্শকাতর মামলা কেন বিচারপতি মিশ্রের বেঞ্চেই পাঠানো হচ্ছে, তা নিয়ে চার প্রবীণ বিচারপতি ‘বিদ্রোহ’ করেছিলেন। যার নেতৃত্ব দেন বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। পরে বিচারপতি মিশ্রের বেঞ্চে কেন আদানি গোষ্ঠীর মামলা পাঠানো হচ্ছে, তা নিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি গগৈকে চিঠি লেখেন প্রবীণ আইনজীবী দুশ্যন্ত দাভে।

নিরপেক্ষতা না থাকলে সুপ্রিম কোর্ট কী করে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করবে, তা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে প্রধান বিচারপতি বোবডে আজ ফের মনে করিয়েছেন, মৌলিক অধিকার মৌলিক দায়িত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। মোদীও এর আগে মৌলিক দায়িত্বের কথা মনে করিয়েছিলেন। ইন্দিরা গাঁধীর জমানায় সংবিধানে এই মৌলিক দায়িত্ব ঢোকানো হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘সংবিধানে মৌলিক দায়িত্বের অধ্যায়টি অবহেলিত থেকে যায়। যেখানে প্রতিটি নাগরিকের উপর সংবিধান মেনে চলা, তার আদর্শ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সম্মান করার দায়িত্ব বর্তায়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement