ভোটযুদ্ধে ফের তিন দশকের খাসতালুক কাটলিছড়ায় লড়বেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে কংগ্রেস নেতা গৌতম রায়। এমনই কানাঘুষো ছড়িয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে।
গত লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ওই কেন্দ্রে গৌতমবাবুর দল রয়েছে তিন নম্বরে। তাতেই চিন্তায় পড়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের উপদেষ্টা।
গোটা রাজ্যের পাশাপাশি কাটলিছড়াতেও শাখা-প্রশাখা ছড়িয়েছে বিজেপি। হাইলাকান্দি কংগ্রেসের অন্দরমহলের খবর, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কাটলিছড়ার ভোট-ময়দানে নামার বিষয়ে মনস্থির করতে পারছেন না গৌতমবাবু। কয়েক দিন ধরে নিজের নির্বাচন কেন্দ্রের অলিগলি ঘুরছেন তিনি। গৌতম-ঘনিষ্ঠরা বলছেন— মানুষের ক্ষোভ হয়তো টের পেয়েছেন তিনি। দু’দিন আগে লালায় এক অনুষ্ঠানে গৌতমবাবু বলেছিলেন, ভোটে তিনি কাটলিছড়ায় লড়বেন না। যদিও তাঁর অনুগামীরা এ কথা নারাজ। গত সপ্তাহে কাটলিছড়ার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন— ‘বিধায়ক ছিলাম, আছি, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকব।’ তবে ভোটে কাটলিছড়াতেই লড়বেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি গৌতমবাবু। এই প্রশ্নে তাঁর জবাব ছিল, ‘‘আমাকে বরাকের সমস্ত এলাকার মানুষই পছন্দ করেন। সবাই আমাকেই চান। যে কেন্দ্রে লড়ব, সেখানেই জিতব।’’
সমস্যা শুধু বিজেপিকে ঘিরেই নয়। কয়েক দিন আগে গৌতম-পুত্র তথা প্রাক্তন বিধায়ক রাহুল রায় জানিয়ে দেন, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি লড়বেন কাটলিছড়াতেই। তাঁর মন্তব্য ছিল— ‘‘কংগ্রেসের টিকিট না পেলে নির্দল হিসেবে লড়ব।’’ কাটলিছড়ায় জনসংযোগেও ঘোরেন রাহুলবাবু। তবে আপাতত তাঁকে পুরনো কেন্দ্র আলগাপুরেই বেশি দেখা যাচ্ছে। ২০০৬ সালে তিনি আলগাপুর থেকেই বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তাঁর মা মন্দিরাদেবী আলগাপুরের বিধায়ক।
গত লোকসভা নির্বাচনে গৌতমবাবুর পছন্দের প্রার্থী তথা দু’বারের সাংসদ ললিতমোহন শুক্লবৈদ্যকে পরাজিত করেছিলেন এআইইউডিএফ প্রার্থী রাধেশ্যাম বিশ্বাস। ওই ভোটে এআইইউডিএফ প্রার্থী পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৮৮৬টি ভোট। বিজেপির কৃষ্ণ দাস ২ লক্ষ ৬০ হাজার ৭৭২ ও কংগ্রেস প্রার্থী ২ লক্ষ ২৬ হাজার ৫০২টি ভোট পেয়েছিলেন। কাটলিছড়ায় এআইইউডিএফ পেয়েছিল ৪৩ হাজার ৬৫২ ভোট, বিজেপি ৩২ হাজার ৬২৫টি এবং কংগ্রেস পেয়েছিল ৩১ হাজার ৮৪৪টি ভোট।
তিন দশকে প্রথম বার কাটলিছড়ায় কংগ্রেস প্রার্থী ৩ নম্বরে নেমে যাওয়ায় ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখেন গৌতমবাবু। বিরোধী শিবিরের একাংশের বক্তব্য, সে দিকে তাকিয়েই তিনি কাটলিছড়ার বদলে অন্য কেন্দ্র বাছতে চাইছেন।
পুর-নির্বাচনেও কাটলিছড়া কেন্দ্রের লালা পুরসভায় বিজেপি বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১০ ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি দখল করে ৫টি। শাসক কংগ্রেস পেয়েছিল ৪টি, নির্দল ১টি আসন।
লালা পুরসভার বিরোধী নেতা তপন নাথ বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে কাটলিছড়ায় লড়বে লজ্জাজনক হারের মুখে পড়বেন গৌতমবাবু। কারণ এখন গোটা দেশে বিজেপি যুগ শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ বিরোধী নেতার বক্তব্যের রেশ রয়েছে কংগ্রেস শিবিরেও। হাইলাকান্দি জেলা কংগ্রেসের প্রথম সারির এক নেতার মন্তব্য, ‘‘ঘরে বাইরে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে গৌতমবাবু। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা তাঁর পক্ষে কঠিন হবে।’’
প্রকাশ্যে গৌতমবাবুর বক্তব্যেও এ নিয়ে তাঁর চিন্তার প্রতিফলন হচ্ছে। মুখে কাটলিছড়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার কথা বললেও, ওই কেন্দ্রের অলিগলিতে ঘুরছেন তিনি। এই সুযোগে সেখানে নিজেদের ঘর গোছাচ্ছে বিরোধীরা।
কাটলিছড়া, কাঠিগড়া না আলগাপুর— শেষে কোন কেন্দ্র বেছে নেন গৌতমবাবু তা জানতেই এখন উৎসুক বরাকবাসী।