চেন্নাইয়ে বসেই নির্ধারক শক্তি করুণানিধি

মমতা বুঝতে পেরেছিলেন করুণানিধির রাজনীতির স্টাইল। স্টাইলটা কিঞ্চিৎ সামন্ততান্ত্রিক কিন্তু তামিল জাতিসত্তার রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০৫:০১
Share:

ফাইল চিত্র

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন রেলমন্ত্রী। পোটা নিয়ে বাজপেয়ী সরকারের সঙ্গে ডিএমকে-র চূড়ান্ত কলহ চলছে। মমতা নিজেও পোটা প্রত্যাহারের পক্ষে। করুণানিধি তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। এমন সময়ে মমতা একদিন বলেছিলেন, ‘‘আপনি জানেন, ভোর সাড়ে চারটের সময় ঘুম থেকে ওঠেন করুণানিধি! তার পর পুজোআচ্চা করে দু’ঘণ্টা পড়াশুনো এবং লেখালেখি করার পর পরিবারের সদস্যদের আর দলের নেতাদের নানা ধরনের নির্দেশ দিতে থাকেন।’’

Advertisement

মমতা বুঝতে পেরেছিলেন করুণানিধির রাজনীতির স্টাইল। স্টাইলটা কিঞ্চিৎ সামন্ততান্ত্রিক কিন্তু তামিল জাতিসত্তার রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত।

সনিয়া গাঁধী ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন। মনমোহন সিংহ প্রধানমন্ত্রী। চেন্নাইয়ে গিয়েছেন করুণানিধির জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায়। সভা শুরু হওয়ার আগেই করুণানিধি সনিয়াকে জানালেন, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক থেকে দয়ানিধি মারানকে বরখাস্ত করতে হবে। কেন? ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করছেন দয়া, তাই। কালানিধি মারান আর দয়ানিধি মারানের ঝগড়া মেটাতে তখন ব্যস্ত করুণানিধি। সনিয়া বলেছিলেন, চিন্তার কিছু নেই। করুণা যা বলছেন তাই হবে। ডিএমকে ইউপিএ-র শরিক ঠিকই। কিন্তু ডিএমকে থেকে মন্ত্রী কে হবে সে তো করুণাই ঠিক করবেন! সনিয়া দিল্লি ফেরার পরের দিন ডিএমকে দলীয় বৈঠক ডাকল দয়ানিধিকে বরখাস্ত করার জন্য। এই হল করুণানিধির কাজের স্টাইল!

Advertisement

চেন্নাইয়ে তাঁর জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ দ্রাবিড় জাতিসত্তার প্রশ্ন। নইলে তামিল নেতারা বলেন, এত দুর্নীতি আন্নাদুরাইয়ের সময়ে হয়নি, পেরিয়ারের সময়ে তো ভাবাই যায় না। তবু কামরাজের কংগ্রেসের বদলে করুণানিধির ডিএমকে যে তামিলনাড়ুর প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হয়ে উঠল, তার পিছনে দিল্লি-বিরোধী রাজনীতি। আবার দিল্লিতে যখন কংগ্রেসের মৌরসি পাট্টা ঘুচে জোট রাজনীতির যুগ শুরু হল, তখন করুণানিধি আর জয়ললিতার রাজনৈতিক মেরুকরণ যেমন স্পষ্ট হয়ে উঠল, অন্য দিকে দিল্লির নিয়ন্ত্রণে তাদের ভূমিকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল। তামিল কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার বলেন, বাজপেয়ী সরকার গঠনে জয়ললিতার সমর্থনের চিঠি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আবার সেই বাজপেয়ী সরকারে ডিএমকে-র সমর্থন প্রত্যাহার ছিল ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন: থামলেন দ্রাবিড় রাজনীতির শিল্পী কলাইনার, অন্ত্যেষ্টির জমিতে জট

অথচ করুণানিধি নিজে পারতপক্ষে দিল্লি আসতেন না। তিনি চেন্নাইয়ে বসেই পারিবারিক কোন্দল মিটিয়েছেন এবং দিল্লির রাজনীতির নির্ধারক শক্তি হিসেবে থেকে গিয়েছেন। করুণার পরিবারে কোন্দল কমও পড়েনি কখনও। তিন স্ত্রীর প্রথম জন মারা গিয়েছিলেন আগে। তাঁর ছেলে মুথুকে এক সময় করুণা সামনে আনলেও তিনি শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে সে ভাবে থাকেননি। দয়ালু আম্মার ছেলেরা, মানে আলাগিরি-স্ট্যালিনদের ঝগড়াই করুণাকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল অনেক দিন। শেষ পর্যন্ত স্ট্যালিনের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সেই ঝগড়ার নিরসন করেই দিয়ে গিয়েছেন করুণা। আর রজতী আম্মার মেয়ে কানিমোঝির নাম যখন টুজি দুর্নীতিতে জড়াল, সেই সময় তিনি দিল্লি এসেছিলেন সাংবাদিক বৈঠক করতে। আপাতত জয়া-হীন এডিএমকে আর করুণা-হীন ডিএমকে— স্ট্যালিনের নেতৃত্বে দ্রাবিড় রাজনীতি কোন দিকে যায়, সেটাই দেখার।

দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement