বিরোধী জোট প্রশ্নে কী চাইছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
কয়েকটি রাজ্য ছাড়া আগামী লোকসভা ভোটে বিজেপি-কে পরাজিত করতে মহাজোটের প্রয়োজন নেই। ‘নরেন্দ্র মোদী বনাম রাহুল গান্ধী মডেল’ও অনুপযোগী। এ বার সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি-র সঙ্গে লড়াই হবে রাজ্যভিত্তিক শক্তিশালী আঞ্চলিক নেতাদের। তৃণমূল কংগ্রেসের এই মনোভাব জানার পরে, আজ নড়ে বসেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, এক প্রবীণ কংগ্রেস সাংসদ আজ রাতে ফোনে যোগাযোগ করেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের এক শীর্ষ স্থানীয় নেতার সঙ্গে। তিনি বুঝতে চান, বিরোধী জোট প্রশ্নে কী চাইছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, বিষয়টি নতুন করে বোঝানোর কিছু নেই। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে মমতা জানিয়েছিলেন, যে যেখানে শক্তিশালী, সে সেখানে বিজেপি-র বিরুদ্ধে লড়বে। ভোটের আগে জোট নয়, বরং বিজেপি-কে ক্ষমতাচ্যুত করতে নির্বাচনের পরে সকলে একসঙ্গে আসবে। সে কথাই, তৃণমূলের তরফে আজ কংগ্রেসকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ-ও বলা হয়েছে তৃণমূল চায়, যে রাজ্যে কংগ্রেস শক্তিশালী এবং বিজেপি-র প্রধান প্রতিপক্ষ, সেখানে তারা(কংগ্রেস) নির্বিঘ্নে মোদীর বিরুদ্ধে ল়ড়তে পারে এবং বিরোধী ভোট যেন ভাগ না হয়। রাজনৈতিক শিবির অবশ্য মনে করছে, এই তত্ত্বের মধ্যে কিছু সমস্যা রয়েছে। সরকারি ভাবে কংগ্রেসের অবস্থান হল, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে রাহুলই দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন। বিহারে নীতীশ কুমারের নতুন জোটে কংগ্রেস যোগ দিলেও জাতীয় স্তরে নীতীশকে বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মেনে নেওয়ার সম্ভাবনা খারিজ করে দিচ্ছে কংগ্রেস। দলের নেতাদের বক্তব্য, আসলে মমতা, নীতীশ, কে চন্দ্রশেখর রাও মিলে একটা তৃতীয় ফ্রন্ট খাড়া করতে চাইছেন। তাঁদের উদ্দেশ্য হল, ২০২৪-এ বিজেপি তথা এনডিএ নিজের জোরে সরকার গড়তে না পারলে তাঁরা সরকার গঠনের চেষ্টা করবেন। সেই সরকারকে কংগ্রেস সমর্থন করতে বাধ্য হবে। উল্টোদিকে, কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে একটাই জোট খাড়া করতে চাইবে। যাতে নেতৃত্বের রাশ তাঁদের হাতেই থাকে।
কংগ্রেস নেতৃত্বের যুক্তি, সব রাজ্যে উপস্থিতির সুবাদে স্বাভাবিক নিয়মেই লোকসভায় অ-বিজেপি দলগুলির মধ্যে তাঁদের সাংসদ সংখ্যাই বেশি হবে। ফলে পশ্চিমবঙ্গ বা তেলঙ্গানায় তৃণমূল বা টিআরএস-কে সব আসন ছেড়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। এখনও পর্যন্ত কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়ায় যাওয়ার কথা ভাবছে না। কারণ, তাতে প্রদেশ কংগ্রেসের সায় নেই। দ্বিতীয়ত, রাহুলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের সুবাদে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তাঁকে বাংলায় কংগ্রেস-বামেদের বোঝাপড়া করে এগোনোর কথা বলছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে আর একটি বাধার নাম গোয়া। গোয়ায় দলীয় সংগঠন বাড়াতে ও ভোটে সাফল্য পেতে তৃণমূলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হয়েছিলেন। কিন্তু লোকসভা ভোটে গোয়ায় নিঃসন্দেহে বিজেপি-বিরোধী প্রধান শক্তি কংগ্রেসই। প্রশ্ন উঠছে, নিজেদের তত্ত্ব মেনে লোকসভা নির্বাচনে কি গোয়ার ময়দানে কংগ্রেসকে সুবিধা করে দিতে সরে দাঁড়াবেন অভিষেক এবং তাঁর দল? বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের মধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে বলে খবর।
এ দিকে, দিল্লিতে আজ এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার বিরোধী দলগুলির কাছে আবেদন জানিয়েছেন, মতপার্থক্য সরিয়ে রেখে লোকসভা ভোটে বিজেপির বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়তে হবে। আপের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সরব হওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন এই প্রবীণ রাজনীতিক। তাঁর কথায়, ‘‘আপের সঙ্গে আপনাদের (কংগ্রেস) মতপার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে। মনে রাখতে হবে, আমাদের লড়াই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে। এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে বিজেপি-র সুবিধা হয়।’’