কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। ফাইল চিত্র।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বাসভবনে গত কাল রাতে বেশ কিছু বিরোধী দলের নেতা কংগ্রেসকে প্রধান দল হিসেবে বিরোধী জোট নিয়ে উদ্যোগী হতে বলেছিলেন। আঞ্চলিক দলগুলির ‘পরামর্শ’ মেনে বিরোধী ঐক্য গড়তে কংগ্রেস নেতৃত্ব এ বার বিশেষ কমিটি তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন। কংগ্রেসের অভিজ্ঞ নেতাদের নিয়ে তৈরি এই কমিটির কাজ হবে বিরোধী দলগুলির মধ্যে ঐক্য ও সমন্বয় সুনিশ্চিত করা।
সূত্রের খবর, ভিন্ন ভিন্ন আঞ্চলিক দলের দায়িত্ব থাকবে ওই কমিটির পৃথক পৃথক সদস্যের হাতে। সংশ্লিষ্ট কংগ্রেস নেতা তাঁর দায়িত্বপ্রাপ্ত অঞ্চলে বিজেপি-বিরোধী দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। সংসদ অধিবেশনে খড়্গে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে নিয়মিত অন্য বিরোধী দলের সংসদীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সংসদের অধিবেশন শেষ হলে এ বার মূল দলের শীর্ষনেতাদের বৈঠক ডাকার পরিকল্পনা নেওয়া হবে। আদানি-কাণ্ড ও সিবিআই-ইডির অপব্যবহার নিয়ে বিরোধী দলগুলির মধ্যে যৌথ কর্মসূচিরও পরিকল্পনা হবে।
গত কাল বিরোধী দলগুলির বৈঠকে রাহুল গান্ধী সব নেতার কাছে অনুরোধ করেছিলেন, একে অন্যের বিরুদ্ধে কথা না বলতে। সাভারকর বিতর্কের কারণে শিবসেনার সঙ্গে কংগ্রেসের যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা-ও আজ মিটে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, এখন বিরোধীরা মোট ১৯টি দলের একটি মঞ্চ। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কথায়, “বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে মুখোমুখি বসার ব্যাপারে প্রস্তাব এসেছিল খড়্গের বাসভবনের আলোচনায়। সেই অনুযায়ী স্থির হয়েছে শীঘ্রই বিরোধী নেতারা বসবেন।” সংসদের অধিবেশন শেষ হলে আদানি কাণ্ড এবং বিজেপি-র প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগে এপ্রিলেই রাস্তায় নামার পরিকল্পনা কংগ্রেসের। ওই মাসেরই দ্বিতীয় সপ্তাহে দিল্লিতে ‘জয় ভারত মহাসত্যাগ্রহ’ শীর্ষক সম্মেলনের আয়োজন করবে দল। সেখানে সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে আনার চেষ্টা চলছে কংগ্রেসের তরফে।
বিরোধী-ঐক্য নিয়ে কংগ্রেসের তৎপরতা সম্পর্কে রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, “বিরোধী দলের ঐক্য ক্রমাগত চলতে থাকা একটি প্রক্রিয়া। এক লাফে সব কিছু করা যায় না, করতে হয় ধাপে ধাপে।” তাঁর ব্যাখ্যা, “বিরোধী সমন্বয়ের চেহারা (কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের) পাঁচ দিন আগে যেমন ছিল, আজ তা নেই। আবার পাঁচ দিন পরে কেমন থাকবে তা-ও আগে থাকতে বলা যায় না।”
আগামিকাল সকালে সংসদে অম্বেডকরের মূর্তির নীচে তৃণমূলের সংসদেরা ধর্না দেবেন। তৃণমূল জানাচ্ছে, দুপুরে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় টানা দু’দিন কেন্দ্র-বিরোধী ধর্না শুরু করার আগে দিল্লিতে তার সূচনা পর্বটি সেরে রাখা হবে। ডেরেকের কথায়, “গণতন্ত্র, সংসদ, সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো (বাংলার প্রতি কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনা) নিয়ে সরব হব।”
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, দু’টি স্তরে বিরোধী দলগুলি এখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। প্রথমত, কংগ্রেস সমস্ত বিরোধী দলের কাছে পৌঁছচ্ছে। এই প্রক্রিয়া তারা আগামী দিনে আরও জোরদার করার চেষ্টা করবে। দ্বিতীয়ত, অকংগ্রেসি-অবিজেপি দলগুলি (তৃণমূল, এসপি, বিআরএস, আপ) নিজেদের মধ্যে নিরন্তর যোগাযোগ রাখছে। ৫ তারিখ সুপ্রিম কোর্টে বিরোধী দলগুলির করা মামলার (কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অপব্যবহারের অভিযোগে) শুনানির দিনটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিরোধী শিবির।