জনগণনা

কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুলল কংগ্রেস

সামনে বিহার নির্বাচন। তার আগে ‘নেতিবাচক আঙ্গিকে’ ধর্মভিত্তিক জনগণনা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত বাধাতে চাইছে বলে অভিযোগ করল কংগ্রেস। দলের শীর্ষ সারির নেতাদের মতে, সামগ্রিক ভাবে মোদী সরকারের ওপর যখন মানুষের মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে, তখন মেরুকরণের রাজনীতির আশ্রয় নিচ্ছে বিজেপি। দেশকে ঠেলে দিচ্ছে বিপজ্জনক ভবিষ্যতের দিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৬
Share:

সামনে বিহার নির্বাচন। তার আগে ‘নেতিবাচক আঙ্গিকে’ ধর্মভিত্তিক জনগণনা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত বাধাতে চাইছে বলে অভিযোগ করল কংগ্রেস। দলের শীর্ষ সারির নেতাদের মতে, সামগ্রিক ভাবে মোদী সরকারের ওপর যখন মানুষের মোহভঙ্গ হতে শুরু করেছে, তখন মেরুকরণের রাজনীতির আশ্রয় নিচ্ছে বিজেপি। দেশকে ঠেলে দিচ্ছে বিপজ্জনক ভবিষ্যতের দিকে।

Advertisement

কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য শাকিল আহমেদ আজ বলেন, জনগণনার পরিসংখ্যান বিচার করলে দেখা যাবে, তাতে সুখবর রয়েছে। এ দেশে বসবাসকারী সাতটি মুখ্য ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের দশকের তুলনায় কমেছে। তা সে হিন্দুই হোক, মুসলিম, শিখ বা খ্রিস্টান। যার অর্থ, পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে সব ধর্মের মানুষের মধ্যেই সচেতনতা বাড়ছে। কিন্তু গত কাল সরকারের তরফে প্রকাশিত প্রেস বিবৃতিতে মোটের উপর এই বার্তাই দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে যে, হিন্দু জনসংখ্যা কমছে, মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে। শাকিলের প্রশ্ন, সরকারই যদি এ ভাবে এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়কে লড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে দেশকে কে বাঁচাবে!

গত কাল প্রকাশিত রিপোর্টের পরিসংখ্যান তুলে কংগ্রেসের বক্তব্য, ১৯৬১ থেকে ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমছে। ব্যতিক্রম ছিল আশির দশক। ওই দশকে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৩২.৮৮ শতাংশ। যা সত্তরের দশকের বৃদ্ধির তুলনায় ২.০ শতাংশ বেশি। কিন্তু পরবর্তী দুই দশকে মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে যথাক্রমে ২৯.৫২ ও ২৪.৬০ শতাংশ। অর্থাৎ মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমশ কমছে। শাকিলের মতে, এর মানে, শিক্ষার প্রসারের সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে মুসলিমরা আগের থেকে সচেতন হচ্ছেন।

Advertisement

ধর্মভিত্তিক জনসংখ্যার রিপোর্ট উদ্ধৃত করে কংগ্রেসের মুসলিম নেতারা বলছেন, নব্বইয়ের দশকের তুলনায় গত দশকে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩.১৬ শতাংশ কমেছে। কিন্তু মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে তার থেকে বেশি মাত্রায়— ৪.৯২শতাংশ। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ভিন্ন ছবি তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে, অভিযোগ কংগ্রেসের। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই অভিযোগ খারিজ করে দিচ্ছেন। দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘কংগ্রেস মিথ্যা প্রচার করছে। যে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে তা একেবারেই প্রশাসনিক সুবিধার জন্য। তা ছাড়া, নরেন্দ্র মোদী-র প্রশাসনের মূল মন্ত্রই হল ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’।’’ কিন্তু জাতীয় স্তরে বিজেপি এ কথা বললেও উত্তরপ্রদেশ, বিহারের স্থানীয় বিজেপি নেতারা ধর্মভিত্তিক জনগণনার রিপোর্ট হাতে নিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করতে নেমে পড়েছেন। উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতা ও সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ আজ বলেন, ‘‘মুসলিমদের সংখ্যা যে ভাবে বাড়ছে, তা উদ্বেগজনক। ওদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ যা শুনে কংগ্রেসের সংখ্যালঘু বিভাগের প্রধান খুরশিদ আহমেদ সৈয়দের মন্তব্য, ‘‘এটা শুধু আদিত্যনাথের কথা নয়। নরেন্দ্র মোদীরও কথা। বিভাজনের রাজনীতির বিষ ছড়াতে চাইছে বিজেপি। সবটাই করা হচ্ছে বিহার ভোটের দিকে তাকিয়ে। যে কারণে জাতপাত ভিত্তিক জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশ করল না সরকার, ঠিক সেই একই কারণে ধর্মভিত্তিক জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশ করা হল।’’

তবে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ধর্মভিত্তিক জনগণনার রিপোর্ট নিয়ে যে যে কংগ্রেস নেতা আজ সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, তাঁরা সকলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। কোনও হিন্দু নেতাকে দিয়ে দল সমালোচনা করায়নি। কারণ, ঘরোয়া স্তরে এ কে অ্যান্টনির (যিনি নিজেও সংখ্যালঘু) মতো বর্ষীয়ান নেতারা সনিয়া গাঁধীকে জানিয়েছেন, কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিকে অনেকেই ভুল বুঝছে। এই বার্তা যাচ্ছে যে কংগ্রেস সংখ্যালঘু তোষণ করছে। তাই দলের এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement