কপিল সিবল ফাইল চিত্র
ফের কংগ্রেসের সব স্তরে ব্যাপক সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করলেন কপিল সিবল। সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কংগ্রেস যে এখন জড়তা কাটিয়ে উঠেছে এটা বোঝাতে ও বিজেপি-র বিরুদ্ধে একটি কার্যকর রাজনৈতিক বিকল্প হিসাবে গড়ে তুলতে সংগঠনের সকল স্তরে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে।’’
সু-নেতৃত্বের অভাব এবং দলের সাংগঠনিক সমস্যাগুলি তুলে ধরে গত বছর সনিয়া গাঁধীকে চিঠি দিয়েছিলেন ২৩ জন শীর্ষস্থানীয় প্রবীণ ও নবীন কংগ্রেস নেতা। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সিবলও। সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে বর্তমানে বিজেপির কোনও শক্তিশালী রাজনৈতিক বিকল্প নেই। তবে, তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শাসনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে কংগ্রেস নিজেকে বিকল্প হিসেবে তুলে ধরতে পারে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে নির্বাচনের ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করতে কমিটি গঠন করা ভাল, তবে পরিকল্পনা প্রয়োগ না করা হলে কোনও প্রভাব পড়বে না।
অসমে অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ও পশ্চিমবঙ্গে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে জোটের বিষয়টি উল্লেখ করে সিবল বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ সাম্প্রদায়িকতা দেশের জন্য সমান বিপজ্জনক, এটা বুঝতে পারেনি কংগ্রেস।’’ সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে দলের ভরাডুবির অন্যতম কারণ হিসাবেও তিনি এটিকেই দেখিয়েছেন। জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ও জিতিন প্রসাদের দল ছাড়ায় বিষয়ে সিব্বলের মত, ‘‘অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি প্রয়োজন।’’
বিজেপি-র শক্তিশালী বিকল্পের বিষয়ে কংগ্রেস নেতা আরও বলেন, ‘‘বর্তমানে শক্তিশালী রাজনৈতিক বিকল্পের ক্ষেত্রে অবশ্যই শূন্যতা রয়েছে। ঠিক এই প্রসঙ্গেই আমি আমার দলের কিছু সংস্কারের জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম, যাতে দেশে একটি শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী দল থাকতে পারে। তবে সংস্কারের পর কী হবে তা নিয়ে আমি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারব না। তবে আমি নিশ্চিত, এমন সময় আসবে যখন দেশের মানুষ তাঁদের পক্ষে কোনটা ভাল তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’’ তাঁর আরও যোগ, ভারতের জন্য নতুন করে জেগে ওঠা এক কংগ্রেস প্রয়োজন। তার নির্বাচনের কৌশলটি পরিচালনার জন্য দল সঠিক লোকদের হাতে থাকা উচিত, যাতে তাঁরা সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে পারেন। সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে অ-বিজেপি দলগুলির কাছে হার বিজেপির বর্মে ছিদ্র করেছে। তারা বুঝতে পেরেছে যে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হলে হেরে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। ভারতের একটি নতুন করে জেগে ওঠা কংগ্রেসকে দরকার। তবে তার জন্য দলকে দেখাতে হবে যে তারা সক্রিয়, উপস্থিত, সচেতন ও অর্থপূর্ণ ভাবে জড়িত হওয়ার মনোভাবে রয়েছে। তার জন্য আমাদের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য উভয় পর্যায়ে সাংগঠনিক স্তরে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন হবে, যাতে এটা বোঝানো যায় যে কংগ্রেস এখনও একটি শক্তি এবং এখন আর তার মধ্যে জড়তা নেই।’’
প্রশান্ত কিশোর এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরই তৃতীয় ফ্রন্টের বিষয়টি আবারও ভেসে উঠেছে। এই বিষয়ে সিবল মনে করেন, ‘‘দেশজুড়ে উপস্থিতির কারণে কংগ্রেসই বিজেপির বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। মোদী সরকার যে ভাবে অতিমারি সামলাচ্ছে, তাতে দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে যে যন্ত্রণা রয়েছে তা তুলে ধরা দরকার। কংগ্রেসকে দেশের স্বার্থে বিকল্প রোডম্যাপ নিতে হবে এবং আমি নিশ্চিত এই উদ্যোগে আমরা বিজয়ী হয়ে উঠব।’’