কালো টাকা ফিরবে কি, সংশয় সুস্মিতার

নরেন্দ্র মোদীর নোট-বাতিলের ঘোষণায় বরাক উপত্যকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিজেপি নেতারা মোদী সরকারের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৪০
Share:

নরেন্দ্র মোদীর নোট-বাতিলের ঘোষণায় বরাক উপত্যকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিজেপি নেতারা মোদী সরকারের সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কংগ্রেস নেতৃত্ব কালো টাকা উদ্ধার অভিযানের প্রশংসা করেও, এর সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

Advertisement

অসম বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার তথা শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সিদ্ধান্তকে ‘ইকনমিক্যাল সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘‘কালো টাকা ধরতে এমন দৃঢ় পদক্ষেপ জরুরি ছিল।’’ প্রাথমিক ভাবে সাধারণ মানুষের কিছুটা সমস্যা হবে, তা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘তবে তাঁদের দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। তাঁরা বরং আনন্দিত যে, কালো টাকার পাহাড় যাঁরা গড়েছিলেন তাঁদের পাহাড় এ বার ধসে পড়বে।’’

দিলীপবাবুর বক্তব্য, মোদী সরকার এ নিয়ে ধাপে ধাপে এগোচ্ছে। স্বেচ্ছায় ঘোষণা করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল প্রথমে। বার বার বলার পরও লোভের বশবর্তী হয়ে যাঁরা টাকা লুকিয়ে রেখে দিয়েছেন, তাঁদের বিপাকে পড়তে হয়েছে। বড় নোট বদলের এই প্রক্রিয়া দুর্নীতিপরায়ণদেরই দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। এতেও যাঁদের শিক্ষা হচ্ছে না, তাদের জন্য আগামী দিন ভয়াবহ হচ্ছে বলে সতর্ক করে দেন তিনি। অর্থনেতিক অপরাধ দমনে অত্যন্ত কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জানান তিনি। কংগ্রেস নেত্রী, শিলচরের সাংসদ সুস্মিতা দেব কালো টাকা উদ্ধার অভিযানের জন্য মোদীকে পূর্ণ কৃতিত্ব দিতে নারাজ। তিনি মনে করিয়ে দেন, ১৯৭৮ সালেও জনতা সরকার একই ভাবে নোটবদল করেছিল। তবে তাতে কালোটাকা যে সরকারের ঘরে ফেরেনি, সে কথা উল্লেখ করে এ বারও মোদীর পদক্ষেপ কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

Advertisement

সুস্মিতাদেবী বলেন, ‘‘কালো টাকা প্রকৃতই শেষ করার মতো কোনও প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হলে তাতে অবশ্যই সমর্থন করব। কিন্তু এই পদ্ধতিতে হবে না। নোট বদলের এই প্রক্রিয়ায় ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এটি একটি মোটা অঙ্কের খরচ। তা সামাজিক প্রকল্পে ব্যয় করা গেলে দেশ এর চেয়ে বেশি লাভবান হতো।’’

তাঁর কথায়, ‘‘আমেরিকায় নগদ টাকা ছাড়া মানুষ চলতে পারেন। কারণ সেই দেশে সামাজিক নিরাপত্তার জায়গাটা নিশ্চিত। তা না করে শুধু কালো টাকার পিছনে সাধারণ মানুষের কোনও লাভ হবে না।’’

আচমকা নোট বদলের সিদ্ধান্তে আজ দুশ্চিন্তায় পড়েন বরাক উপত্যকার চা বাগান মালিকরা। তাঁরা অবশ্য ৫০০, ১ হাজার টাকার নোট নিয়ে সমস্যায় নেই। তাদের মুশকিল হল, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার কর্মকর্তা আর কে সিংহ জানান, অন্যান্য খরচের কথা বাদ দিলেও শ্রমিকদের মজুরি নগদেই দিতে হবে। কোনও বাগানে শুক্রবার, কোনও কোনও বাগানে শনিবার মজুরি মিটিয়ে দেওয়া হয়। একেক বাগানে ওই টাকার পরিমাণ কম নয়। তিনি চা বাগানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য জেলা প্রশাসন ও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান।

কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে আজই বৈঠক হয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষ, ব্যাঙ্ক প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। সমস্যার সমাধান হয়েছে। তিনিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই সিদ্ধান্তকে দৃঢ় পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেন। সামান্য সমস্যা হলেও এ নিয়ে আতঙ্কিত না হতে তিনি সমস্ত স্তরের জনতাকে অনুরোধ জানান। বিশ্বনাথন জানান, ব্যবসায়ী সমিতি, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, পেট্রল পাম্প মালিকদের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেছেন। রাজ্য পরিবহণ নিগম, স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পেট্রোলের মজুত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ব্যাঙ্ক, এটিএমের নিরাপত্তা নিয়েও পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কারণ কাল ব্যাঙ্ক খুললে ভিড় বাড়বে। পরশু এটিএমেও লাইন দীর্ঘ হবে।’’ জেলাশাসক জানান, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নোট বদল করা হবে। ফলে তাড়াহুড়োর ব্যাপার নেই।

স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার শিলচরের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার হিমাঙ্কবিহারী রায় জানিয়েছেন, অতিরিক্ত ভিড় সামলানোর জন্য আজ তাঁরা দফায় দফায় আলোচনা করেছেন। আগামী কাল থেকে কিছুদিন নোট সম্পর্কীয় কাজকর্মেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। ব্যাঙ্কে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বদলে দেওয়া হবে। তবে সে জন্য পরিচয়পত্র সঙ্গে নিতে হবে। একটি নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করে টাকা বদলের অনুরোধ জানাতে হবে। তবে নিজের অ্যাকাউন্টে ৫০০, ১ হাজার টাকার নোট জমা করার কোনও উর্ধ্বসীমা নেই।

এটিএম কেন বন্ধ রাখা হল, এই প্রশ্নে রায়বাবু জানিয়েছেন, এটিএমের ভিতরে তিনটি পাত্র রয়েছে। এই সময়ে ১০০, ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এখন ১ হাজার টাকার নোট পুরোপুরি উঠে যাচ্ছে। ৫০০ টাকার নোট বদলানো হচ্ছে। আসছে ২ হাজার টাকার নোট। ফলে এটিএমের ভিতরেও পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। তাই দু’দিন সময় নিতে হল। তবে শুক্রবার ভোর ৬টা থেকেই এটিএম কাজ করবে বলে জানিয়ে দেন তিনি। এ দিকে, হাইলাকান্দির জেলাশাসক মলয় বরা নোট বদল ঘিরে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি যেন না হয়, সে জন্য জেলা জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। একসঙ্গে ৫ জনের জমায়েত, লাঠিসোটা বা অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরার উপর নিষেধাজ্ঞার কথা শুনিয়েছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement