কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সনিয়া ও রাহুল গান্ধী। রবিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি পিটিআই।
পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাজেট অধিবেশনের বকেয়া অংশ। স্বাভাবিক ভাবেই সংসদীয় রাজনীতিতেও এই ভোট-ফলাফলের প্রভাব দেখা যাবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। ভোটের পরে কংগ্রেসের শক্তি আরও কমেছে। কংগ্রেসের থেকে পঞ্জাব কেড়ে সেখানে নতুন শাসক দল আম আদমি পার্টি। তৃণমূল গোয়ায় আসন না পেলেও ছ’শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছে। সর্বোপরি বিজেপি উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি আরও তিনটি রাজ্যে ফের ক্ষমতা দখল করেছে।
রাজনৈতিক সূত্রের মতে, এর পর সংসদে ক্ষমতাসীন দলের দাপট তো বাড়বেই, পাশাপাশি বিরোধীদের সমীকরণেও কিছুটা পরিবর্তন হতে বাধ্য। হারের ধাক্কার পরে কংগ্রেস বুঝতে পারছে, বিরোধী রাজনীতিতে তাদের জোর অনেকটাই কমেছে। আজ সকালে সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের পরে সুর কিছুটা নামিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব-সহ তিন চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থির করা হয়েছে। সেগুলি নিয়ে সমস্ত বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে সংসদের দু’টি কক্ষে সম্মিলিত ভাবে আওয়াজ তোলার চেষ্টা করা হবে। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেছেন, “ইউক্রেন থেকে ২০ হাজার ভারতীয় ছাত্রছাত্রী ফিরে এসেছেন। কিন্তু এ দেশে তাঁদের বাকি পড়াশুনো কী হবে, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারের কাছে আমরা জানতে চাইব, এ নিয়ে তাদের কী পরিকল্পনা রয়েছে।” তাঁর বক্তব্য, “বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধির মতো আমজনতার সমস্যাগুলি তো রয়েছেই। পাশাপাশি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নেওয়ার সময় কেন্দ্র আশ্বাস দিয়েছিল, ফসলের ন্যূনতম মূল্যের আইনি গ্যারান্টি দেওয়া হবে। আমরা মোদী সরকারের কাছে জানতে চাইব তার কী হল।” কংগ্রেসের লোকসভার সাংসদ মানিকম টেগোরের চিন্তা, উজ্জীবিত বিজেপির প্রবল বিরোধিতার মুখে তাঁরা কতটা সুর চড়াতে পারবেন, তা নিয়ে। তাই আজ তাঁকে আগাম বলতে শোনা গিয়েছে, “বিজেপি জিতেছে ঠিকই। কিন্তু পাঁচ রাজ্যে তাদের প্রাপ্ত ভোট শতকরা ৩৩ শতাংশ। অর্থাৎ এটা মনে রাখতে হবে, ৬৬ শতাংশ মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি এই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে আজও বড় সমস্যা। আমরা তাঁদের কথা তুলতে তৈরি আছি।”
কংগ্রেস সমস্ত বিরোধী দলের সঙ্গে সংসদে সহযোগিতার কথা বলছে বললেও রাজনৈতিক শিবিরের মতে, অধিবেশন শুরু হওয়ার আগেই তৃণমূলের সঙ্গে তাদের যথেষ্ট তিক্ততা তৈরি হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্যের পাল্টা দিয়ে গত কালই সুর চড়িয়েছেন কংগ্রেসের লোকসভা নেতা অধীর চৌধুরী। পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশের পরে তৃণমূল নেত্রী জানিয়েছিলেন, ‘কংগ্রেস বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। তাদের উপর নির্ভর করা যায় না।’ অধীরের বক্তব্য, “গোটা দেশে কংগ্রেসের ৭০০ বিধায়ক রয়েছেন। বিরোধী ভোটের শতকরা ২০ শতাংশ কংগ্রেসের। দিদির কি তা রয়েছে?
তিনি এগুলি বলছেন বিজেপি-কে খুশি করার জন্য। তাদের হয়ে কাজ
করছেন তিনি।”
অধিবেশন শুরুর ঠিক আগের দিন কংগ্রেসের লোকসভার নেতার এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দুশেখর রায়। তাঁর কথায়, “উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ৯০ শতাংশ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। তার পরেও এত বড় বড় কথা ওরা বলেন কী করে?” কংগ্রেসের অভিযোগ, গোয়ায় তাদের ভোট কেটেছে তৃণমূল। সুখেন্দুশেখরবাবুর কথায়, “ভোটের আগে আমরা জোটের কথা বলেছিলাম। কংগ্রেসই সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। আর অন্য রাজ্যে আমরা সংগঠন বাড়াতে গেলেই এত কথা হয়, কই আপ-কে নিয়ে তো কিছু বলা হচ্ছে না? আপ-ও তো গোয়ায় গিয়ে লড়েছে। তৃণমূলকে নিয়ে এত স্পর্শকাতরতা কেন?” অধীরবাবুর মন্তব্য উল্লেখ করে তৃণমূল মুখপাত্রের মন্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গে আমরা যা ফলাফল করেছি, তা মানুষের আশীর্বাদে, কোনও দলের দয়ায় নয়। কংগ্রেস এই ধরনের কথা যত বলবে, ততই তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।”
সংসদের সাম্প্রতিক অধিবেশনগুলিতে দেখা গিয়েছে মল্লিকার্জুন খড়্গের ঘরে কংগ্রেসের ডাকা বিরোধীদের বৈঠকগুলিতে যায়নি তৃণমূল। এ বারে কী পরিকল্পনা রয়েছে? সুখেন্দুশেখরবাবুর কথায়, “সাধারণ মানুষের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত যে বিষয়গুলি আমরা তুলতে চাইছি, সেগুলি এতটাই সর্বজনীন যে, আশা করব যারা বিজেপি-বিরোধী, তারা বিষয়গুলি নিয়ে একমত হবেন। কিন্তু এই নিয়ে আলোচনার জন্য কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতার ঘরে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। সংসদে অনেক জায়গা রয়েছে, কমিটি রুম রয়েছে। সেখানেও আলোচনা হতে পারে।” সংসদে তোলার জন্য যে বিষয়গুলিকে গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল, তার মধ্যে রয়েছে দেশের বেহাল অর্থনীতি, পিএফে সুদ কমিয়ে সর্বনিম্ন করার মতো বিষয়।