বিরোধী জোট নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি রায়পুরের অধিবেশনে তৈরি হবে দলের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। ফাইল চিত্র।
রাহুল গান্ধী রাজি হননি। মল্লিকার্জুন খড়্গে নির্বাচনে জিতে কংগ্রেস সভাপতি হয়েছেন। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেসের নতুন ওয়ার্কিং কমিটিতে ‘রাহুল অনুগামী’-দের সংখ্যাই বাড়তে চলেছে বলে কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন।
তিনদিন পরেই শুক্রবার থেকে নয়া রায়পুরে কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এই মহাধিবেশনেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের রণকৌশল, বিরোধী জোটের রূপরেখা ঠিক হবে। বিরোধী জোট নিয়ে চাপানউতোরের মধ্যেই আজ খড়্গে নাগাল্যান্ডে ভোট প্রচারে বলেছেন, ‘‘২০২৪-এ বিরোধী জোট ক্ষমতায় আসবে আর কংগ্রেস সেই জোটের নেতৃত্ব দেবে। আমরা বিরোধী দলগুলিকে ডাকছি, মতবিনিময় চলছে।’’
বিরোধী জোট নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি রায়পুরের অধিবেশনে তৈরি হবে দলের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্তগ্রহণকারী কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। সভাপতি পদের মতো এবার ২৭ বছর পর কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতেও নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। অধিকাংশ নেতা মনে করছেন, ভোটাভুটিতে না গিয়ে নতুন সভাপতি খড়্গেকেই তাঁর ‘টিম’ বেছে নিতে দেওয়া উচিত। তবে সেই ‘টিম মল্লিকার্জুন’-এ কতজন ‘টিম রাহুল’-এর নেতা থাকেন, সেটাই আসল বিষয়। তার উপরেই কংগ্রেসের ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্ভর করবে।
কংগ্রেসের দলীয় সংবিধান অনুযায়ী, ওয়ার্কিং কমিটিতে সভাপতি ও সংসদীয় দলের নেতা ছাড়া ২৩ জন সদস্য থাকেন। এর মধ্যে ১২ জন নির্বাচিত হন। বাকি ১১ জনকে সভাপতি মনোনীত করেন। সভাপতি হিসেবে খড়্গে ও সংসদীয় দলের নেত্রী হিসেবে সনিয়া গান্ধী কমিটিতে থাকবেন। প্রশ্ন হল, ওই ১২টি পদে নির্বাচন হবে কি না!
কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, উদয়পুর চিন্তন শিবিরে দলের সব স্তরেই দলিত, আদিবাসী, মহিলাদের যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব ও অন্তত ৫০% সদস্যের বয়স ৫০ বছরের কম হওয়া উচিত বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সবাইকে মনোনীত করা হলে তা নিশ্চিত করা যাবে। ১৯৯২ সালে ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচনের পর দলিত, মহিলাদের যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব নেই বলেই পি ভি নরসিংহ রাও সবাইকে পদত্যাগ করিয়ে নিজের মতো কমিটি গঠন করেছিলেন।
কংগ্রেস নেতারা মনে করছেন, এবারও দলিত-আদিবাসী-মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব রাখার বাধ্যবাধকতা দেখিয়েই ‘রাহুল অনুগামী’-দের ওয়ার্কিং কমিটিতে নিয়ে আসা হবে। স্থায়ী আমন্ত্রিত বা বিশেষ আমন্ত্রিতের তালিকাতেও ‘রাহুল অনুগামী’-দের ভিড় বাড়বে। ভূপিন্দর হুডা, ওমেন চাণ্ডি, পবন বনসল, অম্বিকা সোনি, কুমারী শৈলজা, এস সিদ্দারামাইয়া, ডি কে শিবকুমার, কমল নাথ, জয়রাম রমেশের মতো প্রবীণদের সঙ্গে সচিন পাইলট, দীপেন্দ্র হুডা, মিলিন্দ দেওরা, মাণিকম টেগোর, রণদীপ সুরজেওয়ালা, অজয় মাকেন, ভাঁওয়ার জিতেন্দ্র সিংহদের মতো তরুণ নেতাদের গুরুত্ত্ব বাড়বে।
সামনে একগুচ্ছ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। এই মুহূর্তে ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচন হলে কংগ্রেসে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়তে পারে বলেও দলের অনেকের আশঙ্কা। এআইসিসি-র এক নেতা বলেন, ‘‘একসময় কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতাদের জি-২৩ গোষ্ঠী ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচন চেয়েছিল। এখন সেই ‘জি-২৩’ গোষ্ঠীর আর অস্তিত্ব নেই। তবে রায়পুরে পৌঁছে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধীই যদি ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচন চেয়ে বসেন, সেটা অন্য কথা।’’