বিজেপিতে যোগ দিলেন মনপ্রীত সিংহ বাদল। ছবি: পিটিআই।
রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা পঞ্জাবে থাকতে থাকতেই কংগ্রেসে ভাঙন ধরল। কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দিয়ে আজ বিজেপিতে যোগ দিলেন মনপ্রীত সিংহ বাদল। আম আদমি পার্টি ক্ষমতায় আসার আগে কংগ্রেস সরকারের আমলে তিনি পাঁচ বছর রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। মনপ্রীত শিরোমণি অকালি দলের নেতা প্রকাশ সিংহ বাদলের আপন ভাইপো।
বিজেপিতে যোগ দিয়ে মনপ্রীত অভিযোগ তুলেছেন, রাহুল ভারত জোড়ো যাত্রায় বেরিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু কংগ্রেস আসলে নিজের সঙ্গেই নিজে লড়ছে। দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তাঁর পক্ষে সেখানে কাজ করাই মুশকিল হয়ে উঠেছে। সরাসরি রাহুলকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে মনপ্রীত তাঁর এই ক্ষোভের কথাও জানিয়েছেন। উল্টো দিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মধ্যে তিনি ‘সিংহ’-র ছায়া দেখতে পেয়েছেন বলে মনপ্রীতের দাবি।
পঞ্জাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এর আগে ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংহ কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। সুনীল জাখরও বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ বার মনপ্রীতেরও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পিছনে অমরিন্দরের হাত রয়েছে বলে কংগ্রেস মনে করছে। কারণ অমরিন্দর মনে করতেন, তাঁর পরে মনপ্রীত মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার যোগ্য। অকালি দলের সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই বিজেপি পঞ্জাবে এক জন জাঠ শিখ নেতার খোঁজে ছিল। আজ দিল্লিতে পীযূষ গয়ালের হাত ধরে মনপ্রীতের যোগদানের পরে বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, মনপ্রীতই তাঁদের সেই জাঠ শিখ মুখ হয়ে উঠতে পারেন। কারণ তিনি উচ্চশিক্ষিত। পঞ্জাবি, হিন্দির সঙ্গে ইংরেজি, উর্দুতেও চোস্ত। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর।
প্রকাশ সিংহ বাদলের ছেলে সুখবীরের সঙ্গে পারিবারিক কলহের জেরে মনপ্রীত অকালি দল ছেড়ে নিজের দল পঞ্জাব পিপলস পার্টি তৈরি করেছিলেন। পরে তা কংগ্রেসের সঙ্গে মিশিয়ে দেন। কিন্তু অমরিন্দর কংগ্রেস ছাড়ার পরে ও নভজ্যোত সিংহ সিধু জেলে যাওয়ার পরে পঞ্জাব কংগ্রেসের ভার এখন তরুণ নেতা, রাহুল-ঘনিষ্ঠ অমরিন্দর রাজা ওয়ারিংয়ের হাতে। মনপ্রীত সেখানে গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না বলেই কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা। অস্বস্তির মুখে কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের দাবি, মনপ্রীত বিজেপিতে গেলেও কংগ্রেসের সমস্যা হবে না। রমেশের যুক্তি, ‘‘মনপ্রীত পাঁচ বছর অর্থমন্ত্রী থাকার পরেও রেকর্ড ৬০ হাজার ভোটে হেরেছেন। তার পর শীতঘুমে চলে গিয়েছিলেন। এখন বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। পঞ্জাব কংগ্রেসের উপর থেকে বাদল সরে গেল।’’ কংগ্রেসকে অস্বস্তিতে ফেলে এ দিন জম্মু-কাশ্মীরে দলের মুখপাত্র দীপিকা পুষ্কর নাথও দল থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তাঁর দাবি, জম্মু-কাশ্মীরে ভারত জোড়ো যাত্রায় প্রাক্তন বিজেপি নেতা চৌধরি লাল সিংহ যোগ দেবেন, যিনি কাঠুয়া ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্তকে আড়াল করেছিলেন। তাই ইস্তফা দেওয়া ছাড়া তাঁর অন্য কোনও পথ নেই। কংগ্রেস দীপিকার ইস্তফাকেও গুরুত্ব দিতে চাননি। তবে লাল সিংহ প্রসঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা বলেছেন, কাঠুয়া-কাণ্ডে ওই নেতার ‘ভূমিকার’ কথা সকলের জানা। ভারত জোড়ো যাত্রাকে এই ধরনের নেতারা যাতে নিজেদের কলঙ্কমোচনের জন্য ব্যবহার করতে না পারেন, কংগ্রেসের তা নিশ্চিত করা উচিত।