Delhi Assembly Election 2025

‘এনজিও নই’, ইন্ডিয়া-বিতর্কে জমি ছাড়তে চায় না কংগ্রেস

এর আগেই কেজরীওয়াল অভিযোগ তোলেন, বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসকে যাতে ইন্ডিয়া মঞ্চ থেকে বের করে দেওয়া হয়, সে জন্য বাকি শরিকদের বলবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:০৬
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চকে মজবুত করতে দায়বদ্ধ কংগ্রেস। কিন্তু তারাও কোনও ‘এনজিও বা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান’ নয়, একটি রাজনৈতিক দল। তাই অরবিন্দ কেজরীওয়াল চাইলেই কংগ্রেস দিল্লির বিধানসভা ভোটের ময়দান আম আদমি পার্টিকে ছেড়ে দিতে পারে না— জানিয়ে দিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, বিরোধী জোটের কথা বলে কেজরীওয়াল চাইতেই পারেন যে, কংগ্রেস দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াক। কিন্তু কংগ্রেসের পক্ষে তা সম্ভব নয়। একই ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইলেও পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেস পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলতে পারে না বলেই দল সূত্রে জানানো হয়েছে।

Advertisement

এর আগেই কেজরীওয়াল অভিযোগ তোলেন, বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে কংগ্রেস। কংগ্রেসকে যাতে ইন্ডিয়া মঞ্চ থেকে বের করে দেওয়া হয়, সে জন্য বাকি শরিকদের বলবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন। ইন্ডিয়া মঞ্চের তৃণমূল, সপা, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার মতো শরিক দল দিল্লির ভোটে কংগ্রেসের বদলে আপ-কে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে। আঞ্চলিক দলের নেতাদের অভিযোগ, কংগ্রেস লোকসভা ভোটের পরে ইন্ডিয়া মঞ্চ নিয়ে উৎসাহ দেখায়নি। এর আগে ইন্ডিয়া জোটের নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দেওয়ার দাবিও তুলেছিল তৃণমূল।

আজ কংগ্রেস শীর্ষ সূত্র এর জবাবে জানিয়েছে, দলের ৯০ শতাংশ নেতা-কর্মী চান, কংগ্রেস এখন থেকে ২০২৯-এর লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিক। নিজেদের শক্তিও বাড়াক। কারণ, কংগ্রেস শক্তিশালী হলে বাকি আঞ্চলিক দলগুলি এমনিই হাত মেলাবে। কংগ্রেস দুর্বল হলে নিমন্ত্রণ করেও জোটে আনা যাবে না। বিজেপি হারলে কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপি-বিরোধী আঞ্চলিক দলগুলিরও লাভ। কংগ্রেসের শেষ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকেও দলের নিজস্ব সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধী বৃহস্পতিবার রাতে ভিয়েতনাম থেকে ফিরেছেন। আগামী সপ্তাহে দিল্লির ভোট-প্রচারেও নামতে পারেন।

Advertisement

মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের শরিক ‘উদ্ধব শিবসেনা’র নেতা সঞ্জয় রাউত আজ বলেছেন, ‘‘বিরোধীরা ইন্ডিয়া জোট তৈরি করে লোকসভা ভোটে লড়েছিল। ফল খুব ভাল হয়। তার পরে সকলের, বিশেষ করে কংগ্রেসের দায়িত্ব ছিল জোটকে জিইয়ে রাখা। সকলের সঙ্গে বসে আলোচনা করে ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করা। কিন্তু একটা বৈঠকও ডাকা হয়নি। তাই এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ওমর আবদুল্লা, অখিলেশ যাদব, অরবিন্দ কেজরীওয়ালদের মনে হচ্ছে, ইন্ডিয়া জোটের অস্তিত্ব নেই।’’ এর জন্য তিনি কংগ্রেসের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘‘কংগ্রেসের দিক থেকে কোনও সমন্বয়, যোগাযোগ নেই।’’

কংগ্রেস নেতাদের পাল্টা যুক্তি, কংগ্রেস কখনও বলেনি যে ইন্ডিয়া জোটের আয়ু শেষ। বরং কেজরীওয়ালকে ‘দেশবিরোধী’ বলে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের মানা করা হয়েছে। কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগের প্রধান সুপ্রিয়া শ্রীনতের ব্যাখ্যা, ‘‘কংগ্রেস দিল্লিতে একা লড়বে বলে ঠিক করেছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে ইন্ডিয়া জোট গঠনের সময় রাহুল বলেছিলেন, জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে কংগ্রেস কোথাও কোথাও আঞ্চলিক দলকে জায়গা ছেড়ে দেবে।’’ তা বলে কংগ্রেস দিল্লির ভোটের ময়দান পুরোপুরি ছেড়ে দিতে পারে না, যুক্তি শ্রীনতের। তাঁর বক্তব্য, কংগ্রেস দিল্লিতে শীলা দীক্ষিতের নেতৃত্বে ১৫ বছর সাফল্যের সঙ্গে সরকার চালিয়েছে। সেই হারানো জমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবে
তারা। অন্য রাজ্যেও তারা শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টা করবে।

তৃণমূল অভিযোগ করেছে, কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক ভোটগুলিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছে। কেজরীওয়ালও এখন বলছেন, আপের বিরুদ্ধে লড়ে কংগ্রেস বিজেপিকে সাহায্য করছে। কংগ্রেসের পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘আপ গোয়া, হরিয়ানায় ভোট লড়তে গিয়েছিল, যেখানে কংগ্রেস প্রধান শক্তি। সেটা কি বিজেপিকে সাহায্য করার জন্য?’’

উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার মতে, কংগ্রেস যদি আর জোট রাখতে না চায়, তা হলে স্পষ্ট বলে দিক। তবে সঞ্জয় রাউতের মতে, বিরোধী জোট ভেঙে গেলে জোড়া লাগবে না। কংগ্রেস নেতারা পাল্টা বলছেন, চলতি বছরেই বিহারের বিধানসভা ভোটে আরজেডি, কংগ্রেসের জোট হবে। দিল্লির ভোটের পরে তাঁরা আবার ইন্ডিয়া মঞ্চ নিয়ে ভাববেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement