রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।
ছত্তীসগঢ় ও মধ্যপ্রদেশ তো বটেই। তেলঙ্গানাতেও কংগ্রেস বিধানসভা নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসবে বলে জানাচ্ছে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা। একমাত্র সংশয় রয়েছে রাজস্থান নিয়ে।
মঙ্গলবার থেকে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে যাচ্ছে। প্রথমে ছত্তীসগঢ়ের প্রথম দফা ও মিজ়োরামে ভোটগ্রহণ। তার পরে একে একে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলঙ্গানায় ভোটগ্রহণ হবে। এই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে মিজ়োরাম বাদে বাকি চার রাজ্যেই সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছে কংগ্রেস। দলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা বলছে, ছত্তীসগঢ়ে ফের সহজে কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরবে। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস বিপুল ভোটে জিতবে। কংগ্রেসের সমীক্ষা অনুযায়ী, তেলঙ্গানাতেও সকলকে চমকে দিয়ে কংগ্রেস কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের বিআরএস সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে।
মধ্যপ্রদেশে পাঁচ বছর আগে ভোটে জিতে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু পরে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার দলত্যাগের পরে সরকারের পতন হয়। কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা অনুযায়ী, ভোটে জিতে সরকার গঠনের পরেও গদিচ্যুত হওয়ার ফলে কমল নাথ এ বার সহানুভূতির হাওয়া কুড়োবেন। তার সঙ্গে যোগ হবে শিবরাজ সিংহ চৌহানের বিরুদ্ধে অসন্তোষ। এআইসিসি-তে মধ্যপ্রদেশের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার দাবি, কংগ্রেস রাজ্যের ২৩০টির মধ্যে ১৫০টি আসনে জিতবে। পাঁচ বছর আগে ছত্তীসগঢ়েও ১৫ বছরের বিজেপি শাসনের পরে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল। নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বঘেল সরকারের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের দাবি, প্রথমত, ভূপেশ বঘেলের নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার খুবই ভাল কাজ করেছে। দ্বিতীয়ত, বিজেপি সে ভাবে কোনও সরকার-বিরোধী আন্দোলনই গড়ে তুলতে পারেনি।
কংগ্রেস আগেই তেলঙ্গানায় ক্ষমতায় এলে ২ লক্ষ সরকারি পদে নিয়োগ-সহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় এলে চাষিদের ঋণ মকুব, ১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের বিল মকুব, পুরনো পেনশন প্রকল্প চালুর মতো নানা প্রকল্প চালুর কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আজ কংগ্রেস ঘোষণা করেছে, ছত্তীসগঢ়ে ফের কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে কৃষকদের ঋণ মকুব, নিখরচায় শিক্ষা, ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নিখরচায় চিকিৎসা, ৫০০ টাকায় সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করবে। ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে ভূমিহীন চাষিদের।
কংগ্রেসের একমাত্র আশঙ্কা থাকছে রাজস্থান নিয়ে। কারণ রাজস্থানে গত তিন দশক ধরে পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদল হয়। এ বার অশোক গহলৌতের নেতৃত্বে একগুচ্ছ জনমুখী ঘোষণা করে কংগ্রেস হাওয়া তুলেছে। উল্টো দিকে বিজেপির মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফায়দাও কংগ্রেস পেতে পারে। কিন্তু কংগ্রেসের মধ্যে গহলৌত বনাম সচিন পাইলটের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আপাতত ধামাচাপা দেওয়া গেলেও নিচুতলায় তার প্রভাব পড়তে পারে। পাইলট এক সময়ে দল ও সরকারে কোণঠাসা হয়ে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপির দিকে পা বাড়িয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি দলে থেকে যান। গত বছর গহলৌতকে কংগ্রেস সভাপতি করে পাইলটকে মুখ্যমন্ত্রী করার চেষ্টা হলে গহলৌতের অনুগামী বিধায়কেরা বিদ্রোহ করেন। সেই বিদ্রোহের
তিন প্রধান মুখ মন্ত্রী শান্তি ধারিওয়াল, মহেশ জোশী ও ধর্মেন্দ্র রাঠৌরকে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে শো-কজ় করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে কেবল ধারিওয়ালকে এ বার প্রার্থী করা হয়েছে। প্রার্থী করা হয়নি জোশীকে। রাঠৌরকে প্রার্থী করা হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। গহলৌতের অনুগামীদের অনেকেই টিকিট না পাওয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আবার ধারিওয়াল টিকিট পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হতে পারে পাইলট শিবির। ফলে কংগ্রেসের সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।
কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি অবশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, রাজস্থানের ফলোদী সাট্টা বাজারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানা ও রাজস্থানেও কংগ্রেস ক্ষমতায় আসছে। এই সাট্টা বাজারের পূর্বাভাস কখনও ভুল হয় না।