প্রতীকী ছবি।
ঠিক এক মাস হল, কংগ্রেস কর্মসমিতির বৈঠকে রাহুল গাঁধী ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এখনও পর্যন্ত তাঁর ঘোষিত অবস্থান, ইস্তফা থেকে সরছেন না। উত্তরসূরি কে হবেন? সেই প্রশ্নেও নাক গলাবেন না। যদিও কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বললেন, ‘‘রাহুল গাঁধী হতাশ তো বটেই। কিন্তু ইস্তফার চাপ সামনে রেখে দলে ‘অপারেশন ক্লিন আপ’ও চালাচ্ছেন সন্তর্পণে।’’
এতে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য, রাহুল কি তবে সভাপতি পদে থেকে যাবেন? ওই নেতাটির কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত তেমনটিই তো মনে হচ্ছে। তাঁকে থাকতেও হবে। রাজ্য ধরে ধরে বৈঠক করার প্রক্রিয়াও তিনি শুরু করেছেন। তবে এই গোটা প্রক্রিয়ায় তিনি মেপে নিতে চাইছেন, দলে কে কোথায় দাঁড়িয়ে। চাইছেন, কিছু প্রবীণ নেতা এই গোটা প্রক্রিয়ায় নিজের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। নিজের ইস্তফাকে সামনে রেখে সেই চাপটিই বজায় রাখছেন।’’
লোকসভা ভোটে বিপর্যয় ও রাহুলের ইস্তফার ঘোষণার পর কংগ্রেসের অন্দরে এখন বিস্তর জলঘোলা চলছে। দলে তিনটি শিবির কার্যত সম্মুখ সমরে। প্রবীণ নেতারা, নবীন মুখ, আর রাহুলের নিজস্ব অরাজনৈতিক টিম। সনিয়া গাঁধীর থেকে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর রাহুল চেয়েছিলেন, নবীনদের নিয়ে একটি ঝকঝকে দল গড়তে। প্রবীণ নেতারা এতে বেঁকে বসেন। একে একে দ্বারস্থ হন সনিয়ার কাছে। সনিয়ার মধ্যস্থতায় নতুন টিম তৈরির সময়েও প্রবীণদের সঙ্গে নেওয়ার কথা মেনে নিতে হয় রাহুলকে। তবু একটি নিজস্ব টিম তৈরি করেছিলেন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে। যাঁরা পেশাদারি পরামর্শ দেবেন কংগ্রেস সভাপতিকে।
কিন্তু ভোটে বিপর্যয়ের পর দলের প্রবীণ নেতারা আঙুল তুলছেন রাহুলের ওই পরামর্শদাতাদের দিকেই। অনেকেরই অভিযোগ, বাম ঘেঁষা ব্যক্তিদের নিজের টিমে রেখে বিপদ আরও বাড়িয়েছেন রাহুল। এবং প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও। ডেটা অ্যানালিটিক্স বিভাগে প্রবীণ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধেও হাল আমলে বিস্তর অভিযোগ তুলছেন এই নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, গোটা ভোট প্রক্রিয়া জুড়ে এই ব্যক্তিই রাহুলকে ভুল ‘ফিডব্যাক’ দিয়ে এসেছেন। কার্যত তাঁর কথাতেই উঠতে বসতে শুরু করেছিলেন রাহুল। তিনিই রাহুলকে বুঝিয়েছেন, কংগ্রেস চোখ বুজে ১৬০ থেকে ১৮০টি আসন পাবে। এখন হারের পর ইভিএমের উপরে দায় চাপাচ্ছেন। সোশ্যাল মিডিয়া বিভাগে দিব্যা স্পন্দনাকে নিয়ে এসেও কোনও কাজের কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। তার উপরে স্যাম পিত্রোদার মতো রাজীব গাঁধীর বন্ধুর উপরে অতিরিক্ত ভরসাও বিপদ বাড়িয়েছে। ভোটের পর স্যাম ও দিব্যা উধাও হয়ে গিয়েছেন।
কিন্তু দলেরই একটি অংশের মতে, এ সব কথা চাউর করছেন আহমেদ পটেলের মতো নেতারা। আহমেদ ছিলেন সনিয়ার রাজনৈতিক সচিব। এখন দলের কোষাধ্যক্ষ। দলের একাংশের অভিযোগ, এই আহমেদই দলকে নানা সময় ভুল পথে চালিত করেছেন। গত সপ্তাহে দশ জনপথে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক ছিল। ডাক পাননি তিনি। তার উপর সম্প্রতি রটানো হয়েছিল, রাহুলের বদলে সভাপতি হচ্ছেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত। গহলৌত শিবিরের মতে, সচিন পাইলটের পক্ষ থেকেই এমন কথা রটানো হচ্ছে। যাতে গহলৌত দিল্লি গেলে রাজস্থানে সচিনের জন্য পরিসর তৈরি হয়। না গেলে রাহুলের চক্ষুশূল হন গহলৌত।
এআইসিসির প্রাক্তন সচিব প্রকাশ জোশী প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছেন, রাহুলের ভাবমূর্তি বিজেপি ক্ষুণ্ণ করেনি। করছেন কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারাই। তিনি সরাসরি আঙুল তুলেছেন আনন্দ শর্মার বিরুদ্ধে। দলের একটি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি সাংবাদিকদের বাড়িতে ডেকে রাহুলের বদনাম করেছেন শর্মা। রাহুলের কােন সবই যাচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন তিনি। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, ‘‘রাহুল চান, কিছু নেতা নিজে থেকে পদ ছাড়ুন। নয়তো তিনি সভাপতি পদ ছাড়ার জেদ ধরে থাকবেন। পরে ফিরেও আসতে পারেন। তবে সনিয়া নিশ্চয়ই চাইবেন না, সভাপতি পদ থেকে সরে যান রাহুল। এক বার সরে গেলে দলের রাশও আলগা হয়ে যেতে পারে।’’
এরই মধ্যে প্রিয়ঙ্কা গত ক’দিনে উত্তরপ্রদেশের প্রায় ৯০০ কর্মী-নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সব জেলা কমিটি ভেঙে দিয়েছেন। সেটিও একে একে কমিটি ভেঙে দিয়ে ঢেলে সাজানোর প্রথম বার্তা। রাহুল নিজের অবস্থান স্পষ্ট না-করায় দল টিভি চ্যানেলে মুখপাত্রদের না-পাঠানোর সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে। ঠিক এক মাস আগে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। এরই মধ্যে যুব কংগ্রেসের কর্মীরা কাল রাহুলের বাড়ির সামনে জড়ো হচ্ছেন। রাহুলই সভাপতি থাকুন, এই দাবি জানাতে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।