কংগ্রেস যে এ বার মুম্বই পুরসভা দখল করবে, এমনটা অতি বড় কংগ্রেস সমর্থকও আশা করেননি। কিন্তু তার সঙ্গে গোটা রাজ্যেই পুরসভা ও জেলা পরিষদের ভোটে শোচনীয় ফলাফল মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে আরও অপ্রাসঙ্গিক করে দিল কংগ্রেসকে। কারণ রাজ্যের দশটি পুরসভায় ক্ষমতা দখল দূরে থাক, বিরোধী দল হিসেবেও গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে কংগ্রেস। লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পরে সে ভাবে জয়ের মুখ দেখেনি দল। মহারাষ্ট্রের পর তাই উদ্বেগ বেড়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বের।
মহারাষ্ট্র এবং ওড়িশায় পুর ও পঞ্চায়েত ভোটের ফলের পরে বিজেপি ও কংগ্রেসের অবস্থা নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তাতে তিনি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে যে সব নির্বাচন হয়েছে তাতে বিজেপি-র ভোট বাড়ছে। ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে কংগ্রেস। ‘পরিবারতন্ত্র’-র কথা বলে রাহুল গাঁধীকেও ঠুকেছেন জেটলি।
বৃহন্মুম্বই পুরসভায় কংগ্রেসের ফল এ যাবৎ সবচেয়ে খারাপ। তৃতীয় স্থানে থাকলেও কংগ্রেস শিবসেনা ও বিজেপি-র অনেকটাই পিছনে। যার দায় নিয়ে আজ মুম্বইয়ের কংগ্রেস সভাপতি সঞ্জয় নিরূপম পদত্যাগ করতে চেয়েছেন।
আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রের পুরভোটে দাদাগিরি বিজেপির
২০১৪-র বিধানসভা ভোটে খারাপ ফলের পরে এই সঞ্জয় নিরূপমকেই মুম্বইয়ের সংগঠনের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। তিনি মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লাগাম দিতে পারবেন বলে আশা ছিল হাইকম্যান্ডের। কংগ্রেস সূত্র বলছে, সঞ্জয় উল্টে দলের মধ্যে আরও ফাটল তৈরি করেছেন। তাঁর ব্যবহারে প্রবীণ নেতাদের কেউই খুশি ছিলেন না। এমনকী মুম্বইয়ের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা গুরুদাস কামাত সঞ্জয়কে কাঠগড়ায় তুলে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন, তিনি দলের হয়ে প্রচারে নামবেন না। প্রবীণ নেতা নারায়ণ রাণে বা নবীন প্রজন্মের প্রিয়া দত্তরাও প্রচারে যোগ দেননি। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঠেলা সামলে সব শেষে প্রচারে নামতে পেরেছিল কংগ্রেস। সেই ছন্নছাড়া অবস্থারই প্রতিফলন ঘটেছে আজকের ফলাফলে।
মহারাষ্ট্রের আর এক বিরোধী দল শরদ পওয়ারের এনসিপি-র অবস্থাও কংগ্রেসের মতোই। গত দশ বছর পুণে পুরসভা এনসিপি-র দখলে ছিল। এ বার তা বিজেপির হাতে গিয়েছে। দশটির মধ্যে শুধু একটি পুরসভা, পিম্পরি-ছিঞ্চওয়াড়ে এগিয়ে রয়েছে এনসিপি। পশ্চিম মহারাষ্ট্রের গ্রামীণ এলাকায় এনসিপি-র ফল অপেক্ষাকৃত ভাল।
জাতীয় কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা আজ মেনে নিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের ফল যথেষ্ট চিন্তাজনক। দলকে আত্মসমীক্ষা করতে হবে। কংগ্রেসের নেতারা মানছেন, তিন বছর আগে লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পরে একের পর এক বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস হারছে। এ বার পুরভোটেও সেই হার থেকে নিস্তার মিলল না। মহারাষ্ট্রের পুরসভাগুলিতে ক্ষমতা দখলের অর্থ রাজ্য রাজনীতিতেও হাতে শক্তি থাকা। কারণ মহারাষ্ট্রের রাজনীতি এই পুরসভাগুলিকে ঘিরেই আবর্তিত হয়। এই খারাপ ফলের পরেও মুম্বইয়ের নেতা মিলিন্দ দেওরা যে ভাবে ভোটারদেরই দুষেছেন, তাতেও দলের অন্দরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। হারের পর মিলিন্দ মন্তব্য করেন, ‘‘মুম্বইকররা খানাখন্দ, বন্যা, ট্যাঙ্কারে করে পানীয় জলেই সন্তুষ্ট হয়ে পড়েছেন বলে মনে হচ্ছে!’’
নোট বাতিলকে হাতিয়ার করেই বিজেপি-র ভোটব্যাঙ্কে কিছুটা হলেও ফাটল ধরানো যাবে বলে আশা করছিলেন কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু এখন অন্তত তার কোনও প্রতিফলন যে দেখা যায়নি তা মেনে নিচ্ছেন তাঁরা। বিষয়টি নিয়ে নিবন্ধে কটাক্ষ করেছেন অরুণ জেটলিও। তাঁর মতে, নোট বাতিলের বিরোধিতা করেই বরং কংগ্রেস প্যাঁচে পড়েছে। এই পদক্ষেপ গরিব মানুষের বিপুল সমর্থন পেয়েছে।
জেটলির মতে, যে দল ৫০ বছরের বেশি দেশ শাসন করেছে তারা নগদের বেশি ব্যবহারকে সমর্থন করছে। ডিজিটাল লেনদেনকে কটাক্ষ করছে। ফলে কংগ্রেস মূলধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে ক্রমশই গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে।