প্রতীকী ছবি।
পাঁচ বছর আগে পঞ্জাবে বিধানসভা ভোটের আগে আম আদমি পার্টি ঝড় তুলে দিয়েছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন, অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল দিল্লির পরে পঞ্জাবেও ক্ষমতায় আসতে চলেছে। কিন্তু প্রচারে নেমে কেজরীওয়াল আত্মসমর্পণকারী খলিস্তান লিবারেশন ফ্রন্টের সদস্য গুরবিন্দর সিংহের বাড়িতে রাত কাটান। তার পরেই হাওয়া কংগ্রেসের দিকে ঘুরে যায়। ভোটে জিতে অমরিন্দর সিংহ মুখ্যমন্ত্রী হন।
পাঁচ বছর পরে ফের সেই আম আদমি পার্টিই পঞ্জাবে কংগ্রেসের প্রধান মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে। কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরে নভজ্যোত সিংহ সিধু বনাম চরণজিৎ সিংহ চন্নীর শিবিরের দড়ি টানাটানি চলছে। কিন্তু অধিকাংশ জনমত সমীক্ষা বলছে, আম আদমি পার্টি পঞ্জাব বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও সবচেয়ে বেশি আসন পেতে চলেছে। কংগ্রেসের অনেক নেতা এই সমীক্ষার সঙ্গে একমত। আসন্ন পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ডেই জয়ের আশা দেখছে কংগ্রেস। কিন্তু সেখানেও কেজরীওয়াল কংগ্রেসকে চিন্তায় ফেলেছেন।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, পঞ্জাবে ভাল ফল করতে মরিয়া আম আদমি পার্টি গত ছয় মাস ধরে জেলায় জেলায় দলিত ভোটব্যাঙ্কের মন জিততে ‘সম্মান সভা’র আয়োজন করেছে। পঞ্জাবের জনসংখ্যার প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ দলিত। অমরিন্দর সিংহের নেতৃত্বে পঞ্জাবে বড়লোকদের সরকার চলেছে বলে অভিযোগ তুলে, আম আদমি পার্টি ক্ষমতায় এসে দলিত আমজনতার জন্য কী কী কাজ করবে, তার প্রচার চালিয়েছে। মূলত দলিত শিখ ও দলিত হিন্দু ভোটে ভর করেই ২০১৭-তে আম আদমি পার্টি শেষ পর্যন্ত ২০টি আসন জিতেছিল।
কিন্তু ভোটের চার মাস আগে কংগ্রেস অমরিন্দরকে সরিয়ে দলিত শিখ নেতা চরণজিৎ সিংহ চন্নীকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে। কেজরীওয়ালের কৌশলে জল ঢেলে দেওয়া ছিল দলিত নেতা চন্নীকে মুখ্যমন্ত্রী করার অন্যতম কারণ। এ বার আম আদমি পার্টি চন্নীকেই নিশানা করা শুরু করেছে। মঙ্গলবারই চন্নীর ভাইপো ভূপিন্দর সিংহ ও তাঁর এক সহযোগীর ঠিকানায় ইডি হানা দেয়। নগদ ৬ কোটি টাকা উদ্ধার হয়। আজ তা দেখিয়ে খোদ দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী চন্নীকে নিশানা করেছেন। কেজরীওয়ালের মন্তব্য, চন্নী ‘আম আদমি’ নন, ‘বেইমান আদমি’। কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, চন্নীর দলিত পরিচিতিতে কালি লেপতে চাইছেন কেজরীবাল।
কংগ্রেসের চিন্তার আরও কারণ হল, দিল্লির সীমানায় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের সময় থেকেই কেজরীওয়াল পঞ্জাবের চাষিদের মন জয়ের চেষ্টা করেছেন। নীরবে দিল্লির কেজরীওয়াল সরকার জল, বিদ্যুৎ, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধে জোগান দিয়ে গিয়েছে। আপ বিধায়ক রাঘব চড্ডাকে এ বিষয়ে দেখভাল করার জন্য কেজরীওয়াল বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিলেন। তবে এখন আন্দোলনকারী কৃষকদেরই দুইটি সংগঠন ভোটে নামায় কেজরীওয়াল মেনে নিয়েছেন, এতে তাঁর দলেরই লোকসান হবে।
পঞ্জাবের এক প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বলেন, “পঞ্জাবে দীর্ঘদিন ধরেই হয় অকালি দল-বিজেপি বা কংগ্রেসের সরকার চলছে। দশ বছর অকালি-বিজেপি সরকার, তারপরে পাঁচ বছর কংগ্রেসের শাসন দেখার পরে অনেকেই মনে করছেন, এর বাইরে বেরিয়ে আম আদমি পার্টিকে এক বার সুযোগ দিয়ে দেখা যেতে পারে। বেকারত্ব পঞ্জাবের প্রধান সমস্যা। সে দিক থেকেও কেজরীওয়াল তরুণ প্রজন্মের মনে আশা তৈরি করেছেন।”